বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে কেন পড়বেন?
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিষয়টা কেমন?
বায়োকেমিস্ট্রি সাবজেক্টে সাধারণত প্রাণের রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করা হয় আর জীবনকে ব্যাখ্যা করা হয় আনবিক পর্যায়ে। তোমার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তুমি কি করো, কেন করো, কেনো সুখী হও, কেন দুঃখি হও, কিভাবে এত বড় হলে, কেনো বুড়ো হবে,এমনকি কেনো প্রেম করো সেটাও আলাপ আলোচনা করে এই সাবজেক্ট।
এমনকি তোমার ডি এন এ খুঁজে বায়োকেমিস্ট বলে দিতে পারবেন তুমি কে, কি তোমার পরিচয়! ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত না? আসো জেনে নেই খুঁটিনাটি কিছু বিষয়।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি সাবজেক্ট রিভিউ
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি কোর্স সাধারণত কত বছরের?
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়ের উপর কোর্স চার থেকে পাঁচ বছরের হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ভিত্তি করে কোর্সের সময়কাল নির্ধারিত হয়। তবে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের কোর্স হয়ে থাকে।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে বাংলাদেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়?
বাংলাদেশে বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি পড়ার সুযোগ রয়েছে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি পড়ার সুযোগ রয়েছে।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে পুরো চার বছরে কি কি কোর্স পড়ানো হয়?
Basic Biochemistry, Bioorganic chemistry, Biophysical Chemistry, Botany, Zoology, Enzymology, Metabolism, Human Nutrition, Basic Microbiology, Plant Biochemistry, Endocrinology, Molecular genetics, Biostatistics, Basic Immunology, Sports Nutrition, Environmental Biochemistry, Fundamentals of Genetic Engineering and Biotechnology, Cell biology, Clinical Biochemistry, Pharmaceutical Chemistry, Bioenergetics, Oncology, Virology, Neuro biochemistry, Biochemistry of drugs, Industrial biotechnology ,Bioinformatics, Biochemistry of Natural products etc.
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনার ধরন কেমন? তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক নাকি উভয়ই?
বায়োকেমিস্ট্রিতে পড়াশোনা মূলত তাত্ত্বিক হয়ে থাকে। বিভিন্ন বইপত্র হতেই বেশিরভাগ পড়াশোনা করতে হয়। তবে তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবহারিকের অনেক সুযোগ রয়েছে।
একজন সদ্য এইচএসসি পাশ শিক্ষার্থী কিভাবে বুঝতে পারবে এ বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে কিনা?
এইচএসসি পাশ শিক্ষাথীর যদি মনে হয় যে তার কেমিস্ট্রি এবং বায়োলজিতে ভালো দক্ষতা আছে এবং সে এই বিষয়গুলোতে পড়ে আগ্রহ পায় এবং ভবিষ্যতে এইসব বিষয়ের উপর গবেষণা করার ইচ্ছা থেকে থাকে তাহলে সে এই বিষয়কে প্রস্তুতির তালিকায় রাখতে পারে।
এ বিষয়ে পড়াশোনা করে ভালো করতে হলে এসএসসি অথবা এইচএসসি লেভেলের কোন বিষয়গুলোর উপর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন?
বায়োকেমিস্ট্রিতে পড়াশোনা করতে আগ্রহী হলে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় ক্ষেত্রেই কেমিস্ট্রি এবং বায়োলজিতে ভালো দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
এই বিষয়ে পড়াকালীন কি কি এক্সট্রা কারিকুলার আক্টিভিটির সাথে যুক্ত থাকা যায় যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে হেল্প করবে?
এই বিষয়ে পড়াকালীন বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার আক্টিভিটির সাথে যুক্ত থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বায়োকেমিস্ট্রির নানা ক্লাব থাকে যারা বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট এর আয়োজন করে থাকে। এইসব ইভেন্ট এ বিভিন্ন ধরনের অলিম্পিয়াড, পোস্টার প্রেজেন্টেশন,আর্টিকেল লেখা, স্কিল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম ইত্যাদি এর আয়োজন করা হয়।
এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা যারা বায়োকেমিস্ট্ দের নিয়ে কাজ করে তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ইভেন্ট এর আয়োজন করে থাকে। এসব ইভেন্ট এ পার্টিসিপেট করলে নিজের স্কিল অনেক বাড়ানো যায় যা ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগবে। আর পাইথন শেখাটা খুব বেশি জরুরি কারণ bio python, sklearn-bio / UNIX এর স্ক্রিপ্ট দিয়ে অনেক ধরনের কাজ করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় কোনো ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে?
অধ্যয়নরত অবস্থায় দেশে-বিদেশে অনেক ধরনের ইন্টার্নশিপের সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশে ইন্টার্নশিপের অপরচুনিটি গুলো সাধারণত স্নাতক ফাইনাল বর্ষে থাকে। ইন্টার্নশিপ অপারচুনিটি পাওয়ার জন্য অবশ্যই যোগ্যতার অধিকারী হতে হয়। যেমন Sanger Institute তিন মাসের ইন্টার্নশিপ অফার দিয়ে থাকে তা বের করতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
এছাড়াও স্নাতক পর্যায়ে ভালো অ্যাক্যাডেমিক রেজাল্ট এবং রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স থাকা একটা প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে ইন্টার্নশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?
বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে আবেদন করার ও নিয়োগ লাভের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বায়োকেমিস্ট্রিতে ডিগ্রিধারীরা একদিকে যেমন বিসিএস দিয়ে পররাষ্ট্র কডারে যোগদান করতে পারেন তেমনি 31 তম বিসিএস হতে বায়োকেমিস্ট্রি সাধারন শিক্ষা কডারভুক্ত হওয়ায় বিসিএস( শিক্ষা) কাডারেও যোগদান করা সম্ভব। তাছাড়া স্নাতকোত্তর হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের চাকরি ও পিএসসির (নন কডারে) চাকরি লাভের অবারিত সুযোগ রয়েছে।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে সংশ্লিষ্ট চাকরির ক্ষেত্র কেমন?
- বিসিএসআইআর
- আইসিডিডিআরবি
- বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন
- ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজি
- বাংলাদেশ চা বোর্ড
- বারডেম
- বিসিআইসি
- বিএসএমএমইউ
- বাংলাদেশ ডায়াবেটিক আসোসিয়েশন
- বাংলাদেশ পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ
- শিশু হাসপাতালের অধিন সি এইচ আর এফ এর রিসার্চ অফিসার
- কেমিকাল এন্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি
- বায়োটেকনোলজি ফার্ম
- হেলথ ডিপার্টমেন্ট সহ সরকারি নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ কাজ ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে প্রাইভেট চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?
দেশের বিভিন্ন ফুড ইন্ডাস্ট্রি,হসপিটাল laboratory, কসমেটিক কোম্পানি,ফরেনসিক সেক্টর, ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা পুলিশ বা ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ এ বায়োকেমিস্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বায়োইনফরমেটিক্স সেক্টরে বর্তমানে কেমিস্ট্রির শিক্ষার্থীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এমনকি মলিকুলার ডাইনামিক সিমুলেশন দিয়ে ড্রাগ ডিসকভারিরও সুযোগ রয়েছে। এছাড়া উচ্চতর ডিগ্রি থাকলে খুব সহজেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হবার সুযোগ কেমন?
এই বিষয়ে পড়াশোনা করে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হওয়ার জন্য প্রথমে একটি ভাল সিজিপিএ থাকা দরকার। গবেষণা আগ্রহের ক্ষেত্রে কাজ করে এবং একটি ভাল জার্নালে কিছু বিজ্ঞানসম্মত নিবন্ধ প্রকাশিত হয় these যদি কেউ এই মানদণ্ডগুলি পূরণ করে তবে তিনি / সে এই বিষয়ের জন্য প্রভাষক পদের জন্য ভাল কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি পড়াশোনা শেষে স্যালারি কেমন?
বায়োকেমিস্ট্রির ক্ষেত্রে একজন ফ্রেশার হিসাবে স্যালারী রেঞ্জ 25000 থেকে শুরু হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানভেদে বেতন 25000-90000 পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার যারা আইসিডিডিআরবি বা আইইডিসিআর এর মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠানে করেন তাদের বেতন সাধারণত ২৫ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো হয়ে থাকে।অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে স্যালারীর পরিমান বাড়তে থাকে এবং লাখের কোটায় পৌছে যায়।
রিসার্চের কেমন সুযোগ রয়েছে?
বিভিন্ন ফার্মাসিউটিকাল ইন্ডাস্ট্রিতে, রিসার্চ সেন্টার, স্টোর, পাওয়ার প্লান্ট, বায়োটেকনোলজি ফার্মে ইত্যাদি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রিসার্চের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে এইসব প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির অনেক বেশি সুযোগ থাকে।
এই বিষয় পড়ে বাইরের কোন দেশগুলোয় যাওয়ার সুযোগ বেশি?
এ বিষয়ে পড়াশোনা করে বাইরে যেকোনো দেশে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমেরিকা, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, জাপান এবং কানাডা বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়ের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে।
দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলে স্কলারশিপ কি ধরণের পাওয়া যায়? স্কলারশিপ পেতে কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হয়?
দেশের বাইরে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়:
- Commonwealth Scholarship for UK
- Erasmus Mundus Scholarship for German
- Monbukagakusho for Japan
স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য স্নাতক পর্যায়ে ভালো একাডেমিক রেজাল্ট এবং পূর্বের রিসার্চের অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। এছাড়াও রিসার্চ পেপার বিভিন্ন জার্নালে পাবলিশ হলে তা স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দেয়।
বায়োকেমিস্ট্রি সাবজেক্টটা অনেক গবেষণামূলক সাবজেক্ট।অনেক ধৈর্য ধরে ও মনোবল নিয়ে এই বিষয়ে পড়াশোনা করলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার সুযোগ রয়েছে।দেশে ও বিদেশে এই বিষয়ের উপর অনেক চাহিদা রয়েছে এবং গবেষণার অনেক সুযোগ রয়েছে।তাছাড়া এই বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে লাইফ সাইন্স এর যে কোনো দিকেই কাজ করা যায়।তাই আগ্রহীরা বায়োকেমিস্ট্রিকে নিজেদের প্রস্তুতির তালিকায় বেশ উপরেই রাখতে পারো।