সাবজেক্ট রিভিউ

অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং:সাবজেক্ট রিভিউ

অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে কেন পড়বেন?

বিজ্ঞানের আধুনিকতম বিষয়গুলোর মধ্যে একটি অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি এবং কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এই ক্ষেত্রটি প্রতি মুহূর্তেই আরও বিকশিত হচ্ছে আর যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন গবেষণা আর কাজের ক্ষেত্র। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কাজ মূলত কি?

অনেকের ই একটি ভ্রান্ত ধারনা আছে যে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং আর কেমিস্ট্রি মোটামুটি একই ক্যাটাগরির। একজন কেমিস্ট এর মূল কাজ হল ল্যাবে। অন্যদিকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ হল প্রধানত ইন্ডাস্ট্রি গুলোতে। একজন রসায়নবিদ যেই প্রক্রিয়া ল্যাবের বিকারে ঘটান একজন ইঞ্জিনিয়ার সেই কাজকেই শিল্পক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে কেমিক্যাল প্ল্যান্টে প্রয়োগ করেন।

অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রিভিউ

 

আজ জেনে নেওয়া যাক এই সম্পর্কিত খুঁটিনাটি কিছু তথ্য।

 

কোর্স সাধারণত কত বছরের?

চার বছরের অনার্স কোর্স । দেড় বছরের মাস্টার্স কোর্স (থিসিস সহ) ।

 

অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি নিয়ে বাংলাদেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ প্রভৃতি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রয়েছে।

 

এই সাবজেক্টে পুরো ৪/৫ বছরে কি কি বিষয়/কোর্স পড়ানো হয়?

1. Mass and Energy Balance
2. Fluid Mechanics
3. Mass Transfer and Separation process
5. Heat Transfer and Heat Exchangers
6. Humidification and Dehumidification
7. Analytical Chemistry
8. Instrumental Analysis
9. Electrochemistry
1. Organic Chemistry
11. Inorganic Chemistry
12. Material Science and Engineering
13. Corrosion Engineering
14. Pharmaceutical Process and Technology
15. Nanoscience
16. Reaction Engineering
17. Chemical Technology ( Glass, Cement, leather, sugar, Chloro-Alkali, Pulp & Paper, Ceramic, Water treatment, Fertiliser and Agrochemical Industry )

See also  ফার্মেসি নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ

অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করে ভালো করতে হলে এসএসসি অথবা এইচএসসি লেভেলের কোন বিষয়গুলোর উপর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন?

এই বিষয়ে ভালো করতে এসএসসি অথবা এইচএসসি রসায়ন ও গণিত এই দুটি বিষয়ে ভালো দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।

 

অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াকালীন কি কি এক্সট্রা কারিকুলার আক্টিভিটির সাথে যুক্ত থাকা যায় যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে হেল্প করবে?

১। সাইন্স ক্লাব বা রিসার্চ সোসাইটির সাথে যুক্ত থাকা।
২ । আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বাংলাদেশের কোন একটি স্টুডেন্ট চ্যাপ্টারের সাথে যুক্ত থাকা।
৩। আন্ডারগ্র্যাড পড়াশুনা চলাকালীন অবস্থায় নিজের পছন্দের ফিল্ডে রিসার্চের কাজ করা।

 

একজন সদ্য এইচএসসি পাশ শিক্ষার্থী কিভাবে বুঝতে পারবে এ বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে কিনা?

যদি রসায়ন বিষয়টি এইচএসসি লেভেলে ভালো লেগে থাকে, পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে আর কোন একটি কাজে লেগে থাকার ধৈর্য থাকে তাহলে এই বিষয়ে পড়া উচিত।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় কোনো ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে?

ইন্টার্নশিপের সুযোগ নেই। কিন্তু অনার্স চতুর্থ বর্ষে ট্রেনিং ইন্সিটিউট ফর কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (TICI) নরসিংদী এবং মাস্টার্সে কোন একটি কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে এক মাসের ট্রেনিং করতে হয়।

See also  সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ

 

এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো হল –

১। বিসিএসআইআর
২। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন
৩। বিএসটিআই
৪। বিসিআইসি
নিয়োগ পরীক্ষায় ( লিখিত ও মৌখিক) উত্তীর্ণ হবার মাধ্যমে এইসব চাকরিতে যোগদান করতে হয়।

 

এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে প্রাইভেট চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?

চাকরির ক্ষেত্রগুলো হল –

১। ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি গুলতে কিউসি সেকশনে
২। বিভিন্ন রিসার্চ ও টেস্টিং ল্যাবে কেমিস্ট হিসেবে
৩। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ইউটিলিটি সেকশনে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে
৪। কেমিক্যাল প্লান্টে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে

 

এ বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হবার সুযোগ কেমন?

এ বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হবার যথেষ্ট সুযোগ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এই বিষয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে অনেকে ঢাকার বাইরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফলিত রসায়ন ও রসায়ন বিভাগে লেকচারার হিসেবে আছেন। এছাড়াও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই কর্মরত আছেন। লেকচারার হবার জন্য অনার্স ও মাস্টার্সে ভালো ফলাফল এবং ভালো রিসার্চ থাকা প্রয়োজন। এছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পি এইচ ডি কে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

 

এই বিষয়ে পড়াশোনা শেষে স্যালারি কেমন?

বেতনের বিষয়টা প্রতিটি প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানে স্টার্টিং স্যালারি ভিন্ন হয়। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করাটা খুব কঠিন।

 

অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি নিয়ে রিসার্চের কেমন সুযোগ রয়েছে?

দেশে রিসার্চের সুযোগ আছে। অনার্সে থাকাকালীন সময় থেকেই রিসার্চ করা যায়। চতুর্থ বর্ষের প্রজেক্ট এবং মাস্টার্সে থিসিসের পাশাপাশি কোন একজন স্যারের সাথে ২য় বর্ষ থেকেই নিজের পছন্দের ফিল্ডে রিসার্চের কাজ করা যায়। কিন্তু এসব নিজের চেষ্টাতেই করতে হবে। নিজেই স্যারকে এপ্রোচ করতে হবে।

See also  Peace and Conflict Studies নিয়ে কেন পড়বেন?

 

অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়ে বাইরের কোন দেশগুলোয় যাওয়ার সুযোগ বেশি?

এই বিষয়ে পড়ে বাইরে যাওয়ার সুযোগ সব থেকে বেশি। আমাদের বিভাগ থেকে প্রতি বছর গড়ে ১৫/২০ জন আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মাস্টার্স ও পি এইচ ডি প্রোগ্রামে এনরোল করে। বলে রাখা ভালো যে আমাদের প্রতি ব্যাচে চতুর্থ বর্ষে গড়ে ৫০ জন নিয়মিত শিক্ষার্থী থাকে তাই বিদেশে যাওয়ার পার্সেন্টেজটা উল্লেখযোগ্য।

 

দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলে স্কলারশিপ কি ধরণের পাওয়া যায়? স্কলারশিপ পেতে কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হয়?

Applied chemistry ফিল্ডে ফান্ডিং পাওয়া অন্য ফিল্ড গুলোর থেকে সহজ। সাধারণত পি এইচ ডি প্রোগ্রামে থাকা অবস্থায় TA & RA হিসেবে শিক্ষার্থীরা ফান্ডিং পেয়ে থাকে। এজন্য টোফেল স্কোর খুবী গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া অনেকে একাডেমিক রেজাল্ট ও রিসার্চ ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য ফেলোশিপ পেয়ে থাকেন।

এইচএসসি লেভেলে যে বিষয়টা ভালো লাগে, সে রিলেটেড বিষয়েই পড়াশুনা করো। চাকরি, বেতন, সুযোগ সুবিধা এইসব নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে কিন্তু নিজের মনের প্রশান্তি সবার আগে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বা জীবনের পথে কোথাও কোন শর্টকাট নেই। সব যায়গাতেই কিছু পেতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। তোমার কাজ জীবনের একটা বড় অংশ হয়ে থাকবে, আর চেষ্টা কর সেই কাজটা যাতে আনন্দময় হয়।

Related Articles

Back to top button