ফার্মেসি নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ
ফার্মেসি বিষয়ে পড়াশোনা কেমন হবে?
ফার্মেসি: নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করার একমাত্র পথ যেন ডাক্তারি – এমন ধারণা কমবেশি আমাদের সবার মনেই আছে। কিন্তু এ পেশার বাইরেও আরেকটি বিষয় আছে যা দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব। নিত্যদিনের অসুখে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে ঔষধ খাওয়ার কথাই যেন আমাদের সবার আগে মনে পড়ে। আর এ ওষুধের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন ফার্মাসিস্টরা। আজকের রিভিউ হবে “ফার্মেসি” নিয়ে।
ফার্মেসি সাবজেক্ট রিভিউ। Pharmacy Subject Review
ফার্মেসি কোর্স সাধারণত কয় বছরের হয়?
বাংলাদেশে সাধারণত ফার্মেসির উপর চার/পাঁচ বছরের কোর্স (B.Pharm অর্থাৎ Bachelor of Pharmacy) প্রচলিত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ভিত্তি করে কোর্স এর সময়কাল নির্ধারিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসির উপর কোর্স সাধারণত পাঁচ বছরের হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি পড়ানো হয়?
বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়েই ফার্মেসি পড়ার সুযোগ রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা চট্টগ্রাম এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিষয়ে পাঁচ বছরের কোর্স করানো হয়।
আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এশিয়া প্যাসিফিক, নর্থ সাউথ, সাউথইস্ট, ইস্ট ওয়েস্ট এবং ব্র্যাক সহ আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়া যায়।
ফার্মেসি তে ৫ বছরের কোর্সে কি কি পড়ানো হয়?
পাঁচ বছরের পড়াশোনায় সাধারনত যে ধরনের কোর্স থাকে তা মূলত medicines (pharmacognosy/pharmacology/pharmaceutical technology/pharmaceutical engg/quality control), biology (physiology/anatomy/biopharmaceutics), chemistry inorganic/organic/physical/analytical), biochemistry, microbiology ইত্যাদির সাথে রিলেটেড।
এসব বিষয়ে ভালো করতে হলে উচ্চমাধ্যমিকের কোন বিষয়গুলোয় দক্ষতা প্রয়োজন?
ফার্মেসি পড়ে ভালো করতে হলে উচ্চমাধ্যমিকের জীববিজ্ঞান এবং রসায়ন বিষয়ে দক্ষতা থাকতে হয়।
ফার্মেসি নিয়ে পড়াশোনার ধরন কি রকম?
ফার্মেসি বিষয়ে পড়াশোনা সাধারণত তাত্ত্বিক হয়ে থাকে। বইপত্র পড়েই বেশিভাগ জ্ঞান অর্জন করতে হয়, ব্যবহারিকের সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম।
এই বিষয়ে পড়াকালীন কি কি এক্সট্রা কারিকুলার আক্টিভিটির সাথে যুক্ত থাকা যায় যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে হেল্প করবে?
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফার্মেসি ক্লাব থেকে যারা নানা ধরনের ইভেন্ট হোস্ট করে। যেমন অলিম্পিয়াড, পোস্টার প্রেজেন্টেশন, আর্টিকেল রাইটিং, স্পিচ ইত্যাদি। এ ধরনের ইভেন্টে পার্টিসিপেট করলে অনেক ধরনের স্কিল গড়ে উঠে যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
একই সাথে এই ক্লাবগুলো থেকে স্কিল ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিতর্ক, কুইজ এসবেও অংশগ্রহণ করে বেশ ভালোভাবে পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়া যায় তবে অবশ্যই সবকিছু সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় কোন ইন্টার্নশিপের সুযোগ রয়েছে কি?
চতুর্থ এবং পঞ্চম বর্ষে ইন্টার্নশিপ করতে হয়। এক্ষেত্রে চতুর্থ বর্ষে ইন্ডাস্ট্রিতে এবং পঞ্চম বর্ষ হসপিটালে ইন্টার্নশিপের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব ফার্মা ইন্ডাস্ট্রিগুলোই স্টুডেন্টদের ট্রেনিং করায়। আর পঞ্চম বর্ষে সাধারণত হসপিটালে ট্রেনিংয়ের সুযোগ রয়েছে।
ফার্মেসি বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরির কি ধরনের সুযোগ রয়েছে?
ফার্মেসিতে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণত DGDA (Directorate General of Drug Administration) তে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। DGDA, Ministry of Health and Family Welfare এর অধীনে দেশের প্রচলিত সকল ধরণের এলোপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী, ভেষজ ও হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম ওষুধ সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
এছাড়া Hospital Pharmacist নামে বর্তমানে চাকরির একটি নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে যেখানে সরকারি হাসপাতালগুলো এ পদে নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় এবং পরবর্তীতে উক্ত পদে নিয়োগ দেয়। আর সবশেষে, বিসিএস দিয়ে প্রশাসন, পুলিশ, ফরেন ক্যাডার ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই চাকুরীর সুযোগ রয়েছে।
প্রাইভেট ক্ষেত্রগুলোতে চাকরির অপশন কিরকম?
প্রাইভেট চাকরির ক্ষেত্রে অনেক ধরনের অপশন রয়েছে। বিভিন্ন ফারমাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোতে চাকরি, রিসার্চার, উদ্যোক্তা, কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট, ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, প্রোডাক্ট/প্রসেস ডেভলপমেন্ট সাইন্টিস্ট ইত্যাদি সব ধরনের অপশন খোলা আছে।
আর্মি মেডিকেল কোরের ফার্মাসিস্ট হিসেবে UN মিশনে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট নিয়ে দু একটা কথা না বললেই নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে মডেল ফার্মেসি তৈরি হচ্ছে যেখানে প্রয়োজন এ গ্রেড ফার্মাসিস্ট। তারা প্রেসক্রিপশন চেক করা, ভুল খুঁজে বের করা এবং পেশেন্টদের কাউন্সিল করার মত দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
লেকচারার হবার সুযোগ কেমন?
ফার্মেসি পাশ করে সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হবার বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্টার্স কমপ্লিট করতে হয় এবং লেকচারার হওয়ার জন্য স্নাতক পর্যায়ে উচ্চ সিজি থাকা বাঞ্ছনীয়।
চাকরির ক্ষেত্রে স্যালারি রেঞ্জ কি রকম হয়?
ফার্মেসির ক্ষেত্রে একজন ফ্রেশার হিসেবে স্যালারি রেঞ্জ সাধারণত ৩৫-৪০ হাজারের মধ্যে হয়ে থাকে যা বাংলাদেশের অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় বেশি। তবে দিন বাড়ার সাথে সাথে অভিজ্ঞতা যেমন সমৃদ্ধ হবে তেমনি স্যালারি রেঞ্জ ও বাড়তে থাকবে এবং এ রেঞ্জ লাখ খানেক এর কোঠায় পৌছাতে খুব বেশি সময় লাগে না।
ফার্মেসি থেকে পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার সুযোগ কেমন?
ফার্মেসি বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী পিএইচডি অর্জন করা যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে মাস্টার্সের বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে। আর বাইরের কথা বলতে গেলে যেসব দেশ মানুষের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে থাকে তা হলো – আমেরিকা, কানাডা, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, জাপান প্রভৃতি। ফার্মেসিতে পড়াশোনা শেষ করে মানুষ সাধারণত জিআরই দিয়ে পিএইচডির জন্য এপ্লাই করে, এক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন ধরনের ফ্যাক্টর এর উপর ডিপেন্ড করে।
মাস্টার্সে বাইরে এপ্লাই করার সংখ্যাটা তুলনামূলক কম কারণ এক্ষেত্রে ফান্ডিং খুব একটা পাওয়া যায় না। এছাড়া দেশের অনার্স ডিগ্রি নিয়ে আমেরিকা বাদে অন্য যেকোনো দেশের নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
ফার্মেসি বিষয়ে পড়াশোনাটা কিন্তু বেশ ধৈর্য্যের। স্নাতক চলাকালীন এমন অনেক সময় আসবে যেখানে হতাশা চলে আসে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে আর পরিশ্রম করলে ফার্মেসিতে পড়াশোনা শেষ করে জীবনে অবশ্যই ভালো কিছু করা সম্ভব। আর এখন যেহেতু দেশের অনেকগুলো সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসির ওপর ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে তাই চাকরির ক্ষেত্রে কম্পিটিশনটাও বেড়ে যাচ্ছে।
ফার্মেসি পড়ার সুবিধা হল এরপরে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে লাইফ সাইন্সের যে কোন দিকে সুইচ করা যাবে। তাই যাদের লাইফ সাইন্সের বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে তাদের প্রথম চয়েস হিসেবে ফার্মেসি কিন্তু যথার্থ।