সাবজেক্ট রিভিউ

নৃবিজ্ঞান (Anthropology) নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ

Anthropology নৃবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে কেন পড়বো?

সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আসা অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের কাছে নৃবিজ্ঞান বিষয়টি নিয়ে কোন ধারণাই থাকে না সাধারণত। নাম দেখেই দুর্বোধ্য লাগা এই চমৎকার, বিশ্বব্যাপী খ্যাতনামা বিষয়টি থেকে দূরেই থাকেন অনেক শিক্ষার্থী।

এই সমস্যার সমাধানকল্পে নৃবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বুঝিয়ে বলেছেন তার অধ্যয়নরত বিষয়টি নিয়ে।

 

নৃবিজ্ঞান সাবজেক্ট রিভিউ

পড়াশোনার ধরণ 

নৃবিজ্ঞান বলতেই অনেকের ধারণা, কেবল মাটি খোঁড়াখুঁড়ি নিয়েই আমাদের পড়াশোনা! কেউ কেউ আবার মনে করেন, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বা সাধারণ ভাষায় আদিবাসীরাই আমাদের সব ধ্যান-জ্ঞান। হ্যাঁ! এগুলো তো আছেই, তবে নৃবিজ্ঞান মানে কেবল এগুলোই নয়। ‘নৃ’ কথাটির অর্থ হচ্ছে মানুষ। মানুষ সম্পর্কিত যা কিছু আছে, তা সবকিছু নিয়েই আমাদের পড়াশোনা।

অর্থাৎ মানুষের সংস্কৃতি, ভাষা, ইতিহাস, ধর্ম, সমাজ, প্রত্নতত্ত্ব বা আর্কিওলজি, বিবর্তন, স্বাস্থ্য – এগুলোই আমাদের অধ্যয়নের ক্ষেত্র। এখানে পরিবেশ নিয়েও প্রচুর পড়ানো হয়, শেখানো হয় একটা সমাজের আচার প্রথা কিভাবে তাদের রেগুলার এক্টিভিটিজ এর মাধ্যমে ইকোলজি কে নিয়ন্ত্রণ করে। দারুণ ইন্টারেস্টিং এই সাবজেক্টটা আনন্দ নিয়ে পড়লে চমৎকার তো লাগবেই, সাথে ভাবনা-চিন্তার খোরাকও যোগাবে প্রতিনিয়ত।

 

নৃবিজ্ঞান নিয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্সের সময়কাল

৪ বছর ও ১ বছর। এই বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স করা ছাত্র ব্যতীত আর কেউ মাস্টার্স করার সুযোগ পায় না।

See also  বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে কেন পড়বেন?

 

চাকুরী এবং গবেষণা ক্ষেত্র

দেশি-বিদেশি এনজিও এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই বিভাগের চাকরির ক্ষেত্র রয়েছে। তবে শুধু চাকরির ক্ষেত্র বললে ভুল হবে, বেশ খ্যাতি আছে এমন সংস্থায় নৃবিজ্ঞানের প্রচুর শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন।
যেমন – ব্র্যাক, আইসিডিডিআর, বি; সেভ দ্য চিলড্রেন, নেলসনের কথা বলা যেতে পারে। এছাড়াও দেশের কর্পোরেট চাকরিবাজারে (ব্যাংক, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি) প্রবেশ করার সুযোগও আছে এই বিভাগ থেকে।

 

নৃবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ গমনের হার

প্রতি ব্যাচে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা পঞ্চাশের ঘরে থাকে, তাই উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে পড়তে যাওয়ার হার অনেক বেশি, তা নয়। তবে বেশ ডাইনামিক একটা সাবজেক্ট হওয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য বেশ ভালো সুযোগ আছে। প্রতি ব্যাচেই বেশ কয়েকজন বাইরে পড়তে যান।

 

গ্র্যাজুয়েশন করতে সময় কেমন লাগে? সেশনজ্যাম কতটুকু? 

সেশন জট একেবারে নেই তো বটেই, পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও দ্রুত ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞান বিভাগ বেশ অগ্রগণ্য।

 

পরীক্ষার টাইমলাইন

বছরে দুটো সেমিস্টার। সেই হিসেবে মে-জুন ও নভেম্বরের শেষার্ধ্ব থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের প্রথমভাগ এরকম সময়ে সেমিস্টার ফাইনালগুলো হয়। আর মার্চের শেষে আর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে হয় মিড টার্ম। এছাড়া প্রতি কোর্সে টিউটোরিয়াল এক্সাম থাকে, যেটা সেমিস্টারের মধ্যেই এক ফাঁকে হয়ে যায়।

See also  কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস নিয়ে কেন পড়বেনঃ সাবজেক্ট রিভিউ

 

সপ্তাহে কয় ঘন্টা ক্লাস? ল্যাব আছে?

বেশ সাজানো গোছানো একটা কম্পিউটার ল্যাব আর লাইব্রেরী আছে আমাদের। সেখানে তোমরা নৃবিজ্ঞানের একাডেমিক বইয়ের বেশ ভালো একটা সংগ্রহ পাবে, পড়াশোনার কাজে ব্যবহারও করতে পারবে সারাদিনই। আর ক্লাসের প্রেশারটা খুব বেশি না। সপ্তাহে সব মিলিয়ে ১০-১২ ঘণ্টা ক্লাস থাকে সব ব্যাচেরই।

 

নৃবিজ্ঞান নিয়ে কতজন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হয় প্রতি বছর?

মোটামুটি ৪৫-৫৫ এর কাছাকাছি একটা সংখ্যার শিক্ষার্থী প্রতিবছর এই বিভাগে ভর্তি হয়।

 

পার্টটাইম কাজের সুযোগ আছে কি?

অবশ্যই। ক্লাসের টাইম বাদে বেশ ভালো একটা সময় পাওয়া যায় অন্য কাজের জন্য। টিউশনি করাতে চাও কিংবা কোন অর্গানাইজেশনে কাজ – সবটাই সম্ভব, শুধু টাইম ম্যানেজমেন্টটা নিজের মত করে গুছিয়ে নিতে হবে।

 

ক্লাব এক্টিভিটিজে সময় দিতে গেলে পড়ালেখা কতটুকু করতে পারা যাবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব তো আছেই। বিভাগেই আছে দুটো ক্লাব। নৃবিজ্ঞান ডিবেটিং ক্লাব – পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক অঙ্গনের অন্যতম নাম, কিংবদন্তিতুল্য অনেক বিতার্কিকের আত্নপ্রকাশ ঘটেছে এখান থেকেই। এছাড়া প্রতি বছরই কর্মশালা ও উৎসবের আয়োজন করছে।

আর ভিজ্যুয়াল অ্যানথ্রোপোলজি ক্লাব কয়েক বছর আগে যাত্রা শুরু করলেও এই অল্প সময়েই আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, সেমিনার ও উৎসব আয়োজন করেছে সফলভাবে। আর ক্লাস করা ব্যতীত সময় তো আছেই। তাই সমস্যা হবার কথা নয়। তবে নিয়মিত পড়ার সময়টা আলাদা করে রাখলে পরীক্ষার সময়েও চাপ আসবে না তেমন।

See also  ফলিত গণিত নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ

 

এই বিষয়ে পড়ে অনুষদের অন্য কোন বিষয়ে মাস্টার্স করতে পারা যাবে কী?

হ্যাঁ। এই বিষয়ে পড়ে যেসকল বিভাগ অন্য বিভাগের ছাত্রদের মাস্টার্সে গ্রহণ করে, সেই সকল বিভাগেই মাস্টার্স করা যাবে।

 

ইয়ার সিস্টেম নাকি সেমিস্টার সিস্টেম? এটা ভাল নাকি মন্দ?

সেমিস্টার সিস্টেম। গোছানো সিস্টেম, সাথে ধারাবাহিকতা থাকে পড়াশোনার।

নবাগতদের উদ্দেশ্যে কী বলার আছে?

২৯ বছরে পা দিয়েছে এই বিভাগ। অনেক পুরনো নয়, আবার ঠিক নতুনও হয়। ছোট্ট বিভাগ, সব ব্যাচ মিলিয়ে আড়াইশ শিক্ষার্থীর একটা পরিবার বলা চলে। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ, আর গুছিয়ে নিতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা মন্দ যাবে না! অনার্সের প্রথম ও শেষ বর্ষে থাকবে ফিল্ডওয়ার্ক। সেখানে গবেষণাকাজ শিখতে পারবে হাতে-কলমে। আর পিকনিক, নবীন বরণ, বৈশাখ-বসন্ত বরণ তো আছেই। এছাড়াও অন্তঃবিভাগ ক্রিকেট

আর ছোট্ট করে যদি বলতে হয় -অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় একটা বিষয় হচ্ছে নৃবিজ্ঞান। শেখার সুযোগ আছে, বিচরণের সুযোগ আছে আর আছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ। বাধ্য হয়ে পড়তে এসো না, শিখতে এসো। দেখবে চারপাশের সবকিছুই সহজ লাগবে। স্বাগতম তোমাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন স্বাদের বিভাগগুলোর একটি – নৃবিজ্ঞান বিভাগে!

Related Articles

Back to top button