সাবজেক্ট রিভিউ

বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে কেন পড়বে: সাবজেক্ট রিভিউ

কেন পড়বো  বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ে

“বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি “ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধীনস্থ একটি বিভাগ যার স্লোগান বা লক্ষ্য হল “Religions for Peace “ বা শান্তির জন্য ধর্ম। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ইতিহাসে, সভ্যতা, ও জীবনবোধ, দর্শন সম্পর্কে জানতে পারে এবং নিজের জ্ঞানের ভান্ডারকে করে সমৃদ্ধ।

এ বিভাগের নৈতিক বা প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মের মূল বাণী সকলের নিকট পৌছে দেয়া; ধর্মের বা সাম্প্রতিকতার অদৃশ্য দেয়াল ভেঙ্গে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করা; ধর্ম যে ভালবাসা, সহানুভূতি, পরোপকারিতা, পরার্থপরতা, মানবতার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে তা শিক্ষা দেয়া; অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এভাবে, এ ডিপার্টমেন্ট একজন শিক্ষার্থীকে “লিবারেল এবং টলারেন্ট” মাইন্ড সেটের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। উল্যেখ্য এখানে কোন ধর্ম বড় অথবা কোন ধর্ম ছোট, কোন ধর্ম সত্য অথবা কোন ধর্ম মিথ্যা এগুলো বিশ্লেষণ করা হয় না।

কারন, বিভাগটি “ Comparative Religion “ বা “ তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব” না। এটা “ World Religions and Culture “। এখানে Sympathetic way তে শিক্ষার্থীদের Philosophy of Religion এবং Religious Pluralism সম্পর্কে বিশদভাবে শিখানো হয়। এখানে পাবেন ড. কাজী নূরুল ইসলাম, ড. নিরু কুমার চাকমা, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ড. নিরঞ্জন অধিকারী, কে এম সাদ উদ্দিন- স্যারদের মত দেশবরেণ্য স্কলারদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ। আর ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র -জুনিয়রদের বন্ডিং অনেক স্ট্রং; পরিবারের মত। তাই আমরা WRC কে ডিপার্টমেন্ট বলি না, বলি একটা পরিবার।

See also  অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং:সাবজেক্ট রিভিউ

মেইনস্ট্রিম সমাজব্যবস্থায় মনেই করা হয় ধর্মশিক্ষা স্রষ্টার প্রতি প্রার্থনা করা, পূজো দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। ধর্মের প্রায়োগিক দিকগুলো আমরা অনেকেই চিন্তা করি না। প্রায়োগিকভাবে বিবেচনা করলে অনেক অজনা কিছুই জানতে পারবেন এখান থেকে। এখানে ধর্মের spiritual দিকের চেয়ে practical, functional, এবং regulatory দিকটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যেমন,ধর্ম কিভাবে বিশ্বরাজনীতিকে প্রভাবিত করছে, De- Politicization এ ধর্মের ভূমিকা কি, ধর্ম কিভাবে Human psychology কে প্রভাবিত করে, একটি দেশের আইন প্রণয়নে ধর্মের ভূমিকা কেমন, একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ধর্মের ভূমিকা কি রুপ, একটি দেশ বা সমাজের মানুষের Sociological and Anthropological, Political development এর ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা কেমন, কোন বিপ্লব বা রেনেসাঁর পেছনে religious revitalization (ধর্মীয় আন্দোলন) এর প্রভাব কেমন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ধর্মের গুরুত্ব, ধর্মের সাথে terrorism, religious extremism, feminism, science, philosophy ইত্যাদি বিষয়ের সম্পর্ক কি রুপ তা শিক্ষা দেয়া।

Women in Religion, New Religious Movement, Comparative Religions এর বিষয় পড়ানোর মাধ্যমে ধর্মের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করা। অর্থাৎ, Development এবং ethical discourse এ ধর্মের অবস্থান বা ভূমিকা কোথায় তা বিশ্লেষণ করাই এ বিভাগের প্রধান উদ্দেশ্য । এখানে আপনাকে শুধু ধর্মই পড়ানো হবে বিষয়টি এমন না তার সাথে আপনাকে Philosophy, Economics, Philosophy, Anthropology, History, Political Science এর আলোকে ধর্ম বা অন্যকিছুকে কিভাবে বিশ্লেষণ করতে হয় ; কিভাবে critical thinking, abstract reasoning, logical analysis মত স্কিলগুলো অর্জন করা যায় তাও দেখানো হয়।

 

বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি সাবজেক্ট রিভিউ

দেশে চাকুরী ও গবেষনার ক্ষেত্র

এবার আসি সবচেয়ে বেশি আলোচিত প্রশ্নে “এ ডিপার্টমেন্টে পড়ে চাকরি পাওয়া যাবে কি না?” ভবিষ্যতে কি করা যাবে এখানে পড়ে?” সরকারী বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই চাকুরীর সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জিও, এনজিও, গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর সুযোগ আছে। তুলনামূলক নতুন ডিপার্টমেন্ট হওয়ায় গবেষণার ক্ষেত্রও রয়েছে অনেক। এছাড়া রেজাল্ট ভালো হলে শিক্ষক হওয়ার সুযোগও থাকে। চাকরি পাবার বিষয়টি আসলে নির্ভর করে নিজের Communication skill, managing skill এর উপর। ডিপার্টমেন্ট কাউকে এসব দক্ষতা শিখিয়ে দেয় না; নিজে নিজেই শিখতে হয়। তবে আশার বাণী বা অনুপ্রেরণা নিতে পারেন-ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র এক্স-স্টুডেন্টরা অনেকে বিভিন্ন ব্যাংক, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রজেক্ট, প্রশাসন,পুলিশ, পররাষ্ট্র ক্যাডারে আছেন, নন-ক্যাডারে তো আছেনই। আপনি যদি গতানুগতিক চিন্তাধারার বাইরে কিছু করতে চান এ ডিপার্টমেন্ট আপনার জন্যই।

See also  আমরা কেন পদার্থবিজ্ঞান পড়ব এ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন

Do not run in the same track that others are running. Create your own track. – Edward de Bono

World Religions and Culture যেহেতু একটি গ্লোবাল সাবজেক্ট আমাদের দেশের তুলনায় বিদেশে ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা, প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা, চাকরির সুযোগ অনেক বেশি। যে কেউ এই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে পড়াশুনা করে গবেষক, আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সংস্থার কর্মী, কুটনৈতিক, বিভিন্ন NGO’ র কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতে পারে। তাছাড়া বিশ্বের টপ রেংকড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে Comparative Religion, Religious studies, Theology নিয়ে higher study করার সুযোগ তা থাকছেই।

উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ গমনের হার

যেহেতু এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয় তাই উচ্চশিক্ষার জন্যে বিদেশ গমনের সুযোগ বেশী। এই বিভাগের অনেক শিক্ষার্থীই বিদেশে পড়াশোনা করছে।

 

অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের সময়কাল

অনার্স ৪ বছর ও মাস্টার্স ১ বছর।

 

পাশ করতে সময় কত লাগে? সেশনজ্যাম কতটুকু?

অনার্স এর কোর্স সবমিলিয়ে ২৮টি যা ৪ বছরের মধ্যেই শেষ করা হয়।মাস্টার্স ১ বছর। অর্থাৎ ক্লাস ও পরীক্ষাগুলিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করলে পাঁচ বছরেই সব সম্পন্ন করা সম্ভব।সেশনজ্যাম একেবারেই নেই।

See also  আর্কিটেকচার নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ

 

পরীক্ষার ফ্রিকুয়েন্সি

ছয়মাসের একেকটি সেমিস্টারে প্রতি কোর্সের একটি মিডটার্ম ও একটি ফাইনাল পরীক্ষা হয়।

 

পার্টটাইম কাজ করার মত ফিল্ড আছে কি না?

পার্ট টাইম জবের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নিজের স্কিলের উপর। তবে ডিপার্টেমেন্টের পড়াশোনার বাইরে পার্ট টাইম কাজ করার মতো ভালোই সময় পাওয়া যায় কারণ এই বিভাগে ক্লাসের চাপ তুলনামূলক কম।

 

ক্লাব এক্টিভিটিজে সময় দিলে পড়াশোনা কতটুকু করা যাবে?

যাবে। নিজের টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিক রেখে দুটোই করা যাবে।

 

ইয়ার সিস্টেম নাকি সেমিস্টার সিস্টেম? এটা ভাল নাকি মন্দ?

সেমিস্টার সিস্টেম। ছমাসে এক সেমিস্টার হিসেবে বছরে দুইটি সেমিস্টার।আপাতদৃষ্টিতে ইয়ার সিস্টেম সহজসাধ্য মনে হলেও সেমিস্টার সিস্টেমই ভাল কেননা এতে পড়া জমে থাকার সুযোগ পায় না।

 

নবাগতদের উদ্দেশ্যে কি বলার আছে?

দেশ যেমন তার নাগরিকদের দ্বারা বিশ্বে পরিচিত হয়, মহিমান্বিত হয় আন্তর্জাতিক দরবারে ; তেমনি ডিপার্টমেন্টের ব্র্যান্ডিং করে ছাত্ররা নিজেই। দুঃখজনক হলেও সত্যি যেটা এই সাবজেক্টে স্বেচ্ছায় আসা মানুষের সংখ্যা কম। বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়টা আমাদের দেশে কিছুটা নতুন শুনালেও সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব রয়েছে। তাই এর কোর্সগুলিও সাম্প্রতিক সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিবেচনা করে সাজানো হয়েছে। সবমিলিয়ে বলব, জানা জগতে নতুন আঙ্গিকে জানার আগ্রহ,সমাজ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা থাকলে এই বিভাগ বেস্ট। কবি রুমির একটি লাইন দিয়ে শেষ করব “As you start the walk on the way, the way appears.”

Related Articles

Back to top button