আমরা কেন পদার্থবিজ্ঞান পড়ব এ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন
পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কেন পড়বেনঃ সাবজেক্ট রিভিউ
পদার্থবিজ্ঞান: ছোটবেলায় লোডশেডিং হলে অনেকেই রাতের আকাশে তারা গুনতে বের হয়ে যেতো। একদিন বাবার মুখেই হয়তোবা শোনা হয়েছে সপ্তর্ষীমণ্ডল, কালপুরুষ, জেমিনি সহ আরও অনেক নক্ষত্র পুঞ্জের কথা আর তাদের জীবনকথা। কিন্তু সেই ছোটবেলায় হয়তো জানা ছিল না, এটা পদার্থবিজ্ঞান এর জ্যোতির্বিদ্যা অংশের পাঠ্য বিষয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে সেদিন হয়তো অনেকেই ভেবেছিলো একদিন নিজেও এই মহাকাশে লুকিয়ে থাকা হাজারো সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবে আর পৃথিবীর বুকে রেখে যাবে অনেক জটিল ধাঁধা।
বিশ্ব এখনও, আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতা আর ম্যাক্সওয়েল এর কোয়ান্টাম ফিজিক্সের বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি, বোধ হয় পারবেও না। শুধু ভাবা যায় একদিন হয়তো প্রকৃতির এক অদেখা বাস্তব সত্যকে পৃথিবীর বুকে মেলে ধরা হবে, আর রেখে যাওয়া যাবে তার বিস্ময়!
বিজ্ঞানের এই চমৎকার অংশ পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে আজ কিছু খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেওয়া যাক।
পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স কোর্স সাধারণত কত বছরের?
অনার্স চার (০৪) বছর এবং মাস্টার্স এক (০১) বছর।
এই সাবজেক্টটি বাংলাদেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়?
ঢাবি, জবি, জাবি, রাবি, বরিশাল বিঃ সহ সকল সরকারি বিশ্ব বিদ্যালয়ে।
এ ছাড়াও ব্র্যাক (এখনও আছে কি না নিশ্চিত নই ) ও আইইউবি তে পদার্থবিজ্ঞান পড়ার সুযোগ আছে।
পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স পর্যায়ে কি কি কোর্স পড়ানো হয়?
মেকানিক্স এন্ড প্রোপার্টিস ওফ ম্যাটার, ইলেকট্রিসিটি ম্যাগনেটিসম, থার্মোডাইনামিক্স এবং স্ট্যাটিস্টিকাল ফিজিক্স, ইলেকট্রনিক্স ( ১,২), এটমিক এন্ড মলিকুলার / মডার্ন ফিজিক্স, সলিড স্টেট ফিজিক্স (১,২), কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স ও ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স, স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স (১ ও ২), কোয়ান্টাম মেকানিক্স (১,২ ও মাস্টার্স) , ক্ল্যাসিকাল ইলেকট্রোডাইনামিক্স, ক্ল্যাসিকাল মেকানিক্স ও রিলেটিভিটি, প্লাসমা ফিজিক্স, ওয়েভস এন্ড অপটিক্স, লেসার ফিজিক্স, বায়ো এন্ড মেডিক্যাল ফিজিক্স, নন ইকুইলিব্রিয়াম স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স, ফিল্ড থিওরী, এক্সপেরিমেন্টাল মেথডস ওফ ফিজিক্স, নিউক্লিয়ার ফিজিক্স (১,২ এবং মাস্টার্সে) ইত্যাদি হল ফিজিক্সের কোর্স, কম্পিউটেশনাল ফিজিক্স ও প্রোগ্রামিং, এস্ট্রোনমি, পার্টিকেল ফিজিক্স বা হাই এনার্জি ফিজিক্স।
এ ছাড়াও গণিতের ক্যালকুলাস, ডিফারেন্সিয়াল জিওমেট্রি ও ক্যালকুলাস, লিনিয়ার এলজেব্রা, ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশনস, নিউমেরিক্যাল এনালাইসিস, স্ট্যাটিসটিক্সের স্ট্যাটিসটিক্স ও প্রোব্যাবিলিটির কোর্স, কেমিস্ট্রির বেসিক কেমিস্ট্রি, বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে জিওলজি/ জিও ফিজিক্স এসব মাইনর হিসেবে পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে বিষয় গুলোর নামে ভিন্নতা থাকতে পারে।
এ বিষয়ে পড়াশোনার ধরন কেমন? তাত্ত্বিক নাকি ব্যবহারিক?
দু’টোই, ব্যবহারিক জ্ঞান ছাড়া তত্ত্বীয় বিদ্যা অনেকটাই অচল। প্রচুর ব্যবহারিক করতে হয়। এ ছাড়াও বর্তমান বিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রদের কম্পিউটেশনাল ফিজিক্স, প্রোগ্র্যামিং এ ভাল দখল থাকতে হবে কারণ এখন বেশির ভাগ ফিজিক্সের এক্সপেরিমেন্ট সিমুলেট করে দেখা হয়।
একজন সদ্য এইচএসসি পাশ শিক্ষার্থী কিভাবে বুঝতে পারবে এ বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে কিনা?
গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে প্রচুর আগ্রহ ও দক্ষতা থাকলে। দেশ বিদেশের গবেষনা সম্পর্কে আগ্রহ থাকলে। ইন্টারনেটে পদার্থবিজ্ঞানের প্রচুর লেকচার আছে, এসব লেকচার দেখে ধারণা নিতে পারো বিষয়টা তোমার কেমন লাগছে, বুঝতে পারছো কী না।
এ বিষয়ে পড়াশোনা করে ভালো করতে হলে এসএসসি অথবা এইচএসসি লেভেলের কোন বিষয়গুলোর উপর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন?
গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে।
এই বিষয়ে পড়াকালীন কি কি এক্সট্রা কারিকুলার আক্টিভিটির সাথে যুক্ত থাকা যায় যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে হেল্প করবে?
আসলে পদার্থবিজ্ঞান অজানা কে ব্যাখ্যা করার বিজ্ঞান। পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্রের প্রোগ্রামিং বা গণিতে উৎসাহ যেমন কাযে দেবে তেমনি ছবি আঁকা কিংবা সংগীত ও কাজে দেবে না এমন বলা যায় না। (পৃথিবীর সব থেকে বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানের কথা মনে করে চোখ বুজলেই যার ছবি মনে ভাসে, সেই আইনেস্টাইন নিজেও বেহালা বাজাতেন, ফাইনম্যান বাজাতেন বঙ্গো, আমাদের সত্যেন বসু ও খুব ভাল এস্রাজ বাজাতেন। সুতরাং তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে বাদ্য যন্ত্রের যে ভাল যোগাযোগ আছে এমন দাবী করাই যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় কোনো ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে?
সরাসরি ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কীত বিষয় না হওয়ায় নেই, তবে দেশের গবেষণা কেন্দ্র ও বিশবিদ্যালয় শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করার সুযোগ আছে।
এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল পর্যন্ত শিক্ষকতার সুযোগ আছে। এ ছাড়াও সারা দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( যেমন- বাপশক, বিসিএসআইআর, স্পার্সো, পাট গবেষণা কেন্দ্র, সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি), পরমাণু শক্তি উৎপাদন কোম্পানি, বাপেক্স, পেট্রোবাংলা ইত্যাদি। এ ছাড়াও প্রচুর ছাত্র বিসিএস, ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানেও আছেন।
এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে প্রাইভেট চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?
প্রাইভেট ব্যাংক (তবে কিছু ব্যাংকে পদার্থবিদ্যার ছাত্ররা এপ্লাই করতে পারেন না, কিন্তু কেন তা ঠিক নিশ্চিত নয়, কারণ পদার্থ বিদ্যার ছাত্রদের যে গণিত ও যুক্তি বিজ্ঞানের যে গাথুনি থাকে তা ফিনানশিয়াল এনালাইসিস, একচুরিয়াল সায়েন্স সহ ব্যাংকিং এর সব ক্ষেত্রে কাজে লাগানো সম্ভব)। ওয়াল্টন সহ কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান পদার্থবিজ্ঞানের গ্রাজুয়েট দের নিয়োগ দেয়, প্রাইভেট স্কুল ও কলেজ আছে।
বিদেশে পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্ররা সেমিকন্ডাকটর ইন্ডাস্ট্রি, ডেটা সায়েন্স, ম্যাটেরিয়ালস ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও অনেক ইন্ডাস্ট্রি তে চাকরির সুযোগ আছে। আমি নিশ্চত আমাদের দেশেও এমন সব সুযোগ আস্তে আস্তে তৈরী হবে।
এ বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হবার সুযোগ কেমন?
দেশের সব সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক দরকার পড়ে, পদার্থবিজ্ঞান না পড়ালেও ইঞ্জিনিয়ারিং এমনকী বিবিএ এমবিএ পড়তেও পদার্থিবিজ্ঞান পড়তে হয়। তবে এ জন্যে রেসাল্ট ভালো থাকতে হবে (৩.৫+) এছাড়াও বাইরের ডিগ্রি বা পাবলিকেশন থাকলে ভাল হয় তবে লেকচারার পদের জন্য মাস্ট নয়।
এই বিষয়ে পড়াশোনা শেষে স্যালারি কেমন?
সরকারি স্কেলে ৯বম গ্রেডের বেতন (৪০,০০০/-), বেসরকারি স্কেলে ৩০,০০০ থেকে ৭০,০০০/- পর্যন্ত। অভিজ্ঞতার সাথে সাথে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেড-১ অধ্যাপক হবার সুযোগ আছে যেখানে বেতন দেড় লাখের মতন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকের ৩-৪ লক্ষ কিংবা তারও বেশি পাবার দৃষ্টান্ত আছে। মোট কথা, সময় এবং অভিজ্ঞতার সাথে সাথে স্যালারি স্কেল ও বাড়তে থাকে।
রিসার্চের কেমন সুযোগ রয়েছে?
এক কথায় প্রচুর, পদার্থবিজ্ঞানের উদ্দেশ্যই মূলত গবেষণা। দেশে যেমন আছে বিদেশে প্রচুর আছে। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া এসব দেশে প্রচুর প্রচুর অর্থ লগ্নি করা হয় গবেষণায়। আমাদের দেশেও কম নয়, হয়ত আমরা খবর রাখি না তেমন।
এই বিষয় পড়ে বাইরের কোন দেশগুলোয় যাওয়ার সুযোগ বেশি?
ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া ইত্যাদি।
পদার্থবিজ্ঞান পড়ে কি হবে?
পদার্থ বিজ্ঞানে ক্যারিয়ার সম্পর্কিত চমৎকার কিছু প্লাটফর্মের সংক্ষিপ্ত বর্ননা করার চেষ্টা করছি
উচ্চতর গাণিতিক ও কেস সলভিং দক্ষতা
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়তে আসা স্টূডেন্টদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ঠ হলো উচ্চতর গানিতিক দক্ষতা, উচ্চতর সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং যে কোন বিষয় সম্পর্কে সহজে বুঝতে পারার ক্ষমতা, যা তাদের পরবর্তী জীবনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিশ্বের মস্ত বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে গিয়ে কেবল পড়াশুনাই করে নাই, শিক্ষকতাও করেছে। জগতের সবচেয়ে বড় গবেষণা সংস্থাগুলোতেও (CERN, NASA) কাজ করেছে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরাই।
প্রোগ্রামিং করার ক্ষেত্রে এক্সট্রা সুবিধা
প্রোগ্রামিং যাদের প্যাশন তারা যদি কোন কারনে প্রযুক্তিমূলক সাবজেক্ট (CSE, IT, ICT) সাবজেক্টগুলোতে চান্স না পাও তবে অনায়াসে ফিজিক্স নিয়ে পড়তে পারো। মোটামুটি ওয়েব ডেভলপিং ছাড়া অন্যান্য প্রোগ্রামিং এর ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞান ষ্পষ্টভাবে কাজে লাগবে। যদি তুমি গেইম ইঞ্জিন তৈরি করতে চাও কিংবা গেইম ডেভলপিং, রোবটিক্স নিয়ে কাজ করতে চাও তবে পদার্থবিজ্ঞান অবশ্যই কাজে দেবে। পদার্থবিজ্ঞানের কিছু কিছু অ্যালগরিদম সরাসরি কাজে লাগবে প্রোগ্রামিং এ।
এছাড়া পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের অনেক বেশি বিশ্লেষনমূলক চিন্তা দক্ষতা (Analytical Thinking Skill) থাকে যা বলতে অপেক্ষা রাখে না যে কতটুকু প্রয়োজন হয় প্রোগ্রামারদের জন্য।
তাছাড়া পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে প্রোগ্রামিং নিয়ে আলাদা একটা আস্ত কোর্সই থাকে।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (Scientific Officer)
পদার্থবিদদের জন্য বিশেষভাবে বাংলাদেশে স্বপ্নের দুটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন (BAEC) এবং বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রন (BEARC)। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর পদার্থবিদরা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন। তবে এ দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে যা দরকার হয় তা হলো SSC, HSC, স্নাতক (Honors) ও স্নাতকোত্তর (Masters) -এ প্রথম শ্রেনীর রেজাল্ট থাকতে হবে এবং “Nuclear Physics” এর উপরে থিসিস থাকতে হবে।
কিন্তু যাদের প্রথম শ্রেনীর রেজাল্ট নেই তাদের কি হবে? তাদের জন্য রয়েছে আরো বেশি সেক্টর।
এগুলোর মধ্যে-
১. বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষনা পরিষদ (BCSIR)
২. মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা (SPARRSO)
৩. বাংলাদেশ পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট (BJRI)
৪. বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট (BINA) উল্লেখযোগ্য।
এসব প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে পদার্থবিদরা আবেদন করতে পারবেন।
এরোড্রম অফিসার
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB) প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর এরোড্রম অফিসার হিসেবে পদার্থবিদদের চাহিদা থাকে।
সহকারী কার্ট্রোগ্রাফার
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (BIWTA) এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন করপোরেশন (BIWTC) এ দুটি প্রতিষ্ঠানে সহকারী কার্ট্রোর্গ্রাফার হিসেবে
পদার্থবিদরা আবেদন করতে পারবেন।
ইলেক্ট্রিকাল পাওয়ারপ্লান্ট এ এক্সিগিউটিভ ট্রেইনি (Executive Trainee)
বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানী বাংলাদেশ, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন, সামিত পাওয়ার লিমিটেড, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন, ম্যাক্স পাওয়ার সহ আরো অনেকগুলো পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে। এ পাওয়ার প্লান্টগুলোতে এক্সিগিউটিভ ট্রেইনি হিসেবে পদার্থবিদদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
Google এ জবের সুযোগ
Google এর মত স্বপ্নের সেক্টরটি সবারই প্রত্যাশার শীর্ষে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে পদার্থবিদদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে যার জন্য অবশ্যই প্রথম শ্রেনীর রেজাল্ট প্রয়োজন হয়।
এছাড়া গুগল এ মার্কেটিং অ্যানালাইটিক ম্যানেজার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, অডিও সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, টাচ সেনসর হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি পদে পদার্থবিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রছাত্রীরা অগ্রাধিকার পায়। গুগলে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর মাসিক স্যালারি ৯৩ হাজার মার্কিন ডলার।
NASA তে জবের সুযোগ
The National Aeronautics and Space Administration । বলা বাহূল্য পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার অন্যতম উদ্দেশ্যই থাকে NASA তে জব পাওয়া। তবে এ জন্য নিঃসন্দেহে প্রয়োজন প্রথম শ্রেনীতে প্রথম ফলাফল।
NASA তে কম্পিউটার সায়েন্স, অ্যাস্ট্রো-ফিজিক্স, ফিজিকাল সায়েন্টিস্ট, রিসার্চ কনসালট্যান্ট, কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট, সিনিওর সায়েন্টিস্ট হিসেবে পদার্থবিদদের চাহিদা ব্যাপক।
পদার্থবিজ্ঞান থেকে স্নাতক শেষ করে #নিউক্লিয়ার_ইঞ্জিনিয়ারিং (যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়ে থাকে) এর উপর স্নাতকোত্তর করা হলে NASA তে অগ্রাধিকার এবং বাংলাদেশের কিছু ক্ষেত্রে জবের সুযোগ বেড়ে যাবে।
প্রোবেশনারি অফিসারঃ (১ম শ্রেনীর অফিসার)
পদার্থবিদরা বাংলাদেশের কিছু সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রোবেশনারী অফিসার হিসেবে জয়েন করতে পারবে। এসব জায়গাতে স্বল্প-বয়স এবং সম্প্রতি গ্রাজুয়েটদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। যারা খুব সম্প্রতি গ্রাজুয়েটেড হয়েছে তাদের জন্য এটি একটি প্লাস পয়েন্ট।
শিক্ষকতা
সবচেয়ে আরামদায়ক, জনপ্রিয় ও সহজ সেক্টর হলো শিক্ষকতা। বাংলাদেশে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকের চাহিদা অনেক বেশি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মুহাম্মাদ রাশেদ নিজাম স্যারের উপাত্ত থেকে জানা যায় বাংলাদেশে প্রায় ৮২ টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩১৫০ টি কলেজ, ১৮৫০০ টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ২৭২৮ টি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদদের জন্য সুবিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকে। যাদের ধ্যান জ্ঞান শিক্ষকতা, তারা খুব সহজে এসব সেক্টরে নিজের স্থান গড়ে নেয়।
ফিজিক্স কম্পিটিশন
তোমরা কি সবাই ফিজিক্স কন্টেস্টগুলোর সঙ্গে পরিচিত? ফিজিক্সের কন্টেস্টগুলোর মধ্যে “প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ফিজিক্স কম্পিটিশন” ও “ইউনিভার্সিটি ফিজিক্স কম্পিটিশন” অনেক জনপ্রিয়। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিকভাবে কম্পিটিশনটি অনুষ্ঠিত হয়। এ কম্পিটিশনটি শুধুমাত্র আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্রছাত্রীদের জন্য। যেখানে দুটি সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হয়। ৪৮ ঘন্টাব্যাপি এ প্রোগ্রামটিতে কম্পিটিশন শেষে স্বর্ন পদক, রৌপ্য পদক এবং ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী হিসেবে ফলাফল প্রদান করা হয়। বরাবরের মত বাংলাদেশ থেকেও পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহন করছে এবং পদক বিজয়ী হচ্ছে। গত বছর (২০১৭) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা গ্রুপ সিলভার পদক, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮ টা ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকেও ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহন করেছে।
ইউনিভার্সিটি ফিজিক্স কম্পিটিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারো-
http://www.uphysicsc.com
এছাড়া বাংলাদেশের আরো যেসব স্থানে পদার্থবিদদের ব্যাপক চাহিদা থাকে –
- বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD)
- বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (BPDB)
- বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (BCC)
- বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এন্ড এক্সপ্লোরেশন কোঃ লিঃ (BAPEX)
- ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরন কর্তৃপক্ষ (DESA)
- বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (BERC)
- বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ কর্পোরেশন (PETROBANGLA)
- বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (BSTI)
- ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরন কোঃ লিঃ (DESCO)
সমাজবিজ্ঞান, ব্যবসা ফ্যাকাল্টি এবং আর্টস ফ্যাকাল্টির ছাত্রছাত্রীরা যেসব সেক্টরে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারে, পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা সেই একই সেক্টরে একই পদের জন্য আবেদন করতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে উল্টোটি কিন্তু ঘটেনা।
দেশের বাইরে স্কলারশীপ
দেশের বাইরে পদার্থবিজ্ঞানের উপর স্কলারশীপ পাওয়া তুলনামূলক সহজ। চলতি বছরেও আমেরিকা, মালয়শিয়া, জাপান, জার্মান, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রায় ২৪৬৮ এর বেশী বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞানের উপর স্কলারশীপ অর্গানাইজ করেছে। সাধারনত এক্ষেত্রে তারা GRE, TOEFL এবং CGPA 3.00 প্রেফার করে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি CGPA ভাল না হয় তখন GRE, TOEFL – এ নম্বরটা ভাল থাকতে হবে।
দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলে স্কলারশিপ কি ধরণের পাওয়া যায়? স্কলারশিপ পেতে কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হয়?
প্রচুর স্কলারশিপ আছে, চোখ কান খোলা রাখতে হবে। জাপানে মেক্সট, আমেরিকার ফুলব্রাইট ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গবেষণা বা টিচিং এসিসটেনটশিপের ফান্ড, ইউরোপে ইরাসমাস মুন্ডাস, সুইডিশ সরকারের বৃত্তি, অস্ট্রেলিয়াতে নানা ধরণের বৃত্তি কিংবা গবেষণা ভাতা রয়েছে।
পদার্থবিজ্ঞান সরাসরি ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড বিষয় নয়, সুতরাং অল্প পড়ে-দ্রুত পাশ করে চাকরি পাবার আশা থাকলে পদার্থবিজ্ঞান তোমাকে নিরাশ করতে পারে। তোমার মুঠোফোন, মুঠোফোনের জিপিএস, মাথার উপর যে ফ্যান ঘুরছে, চোখের সামনে যে মনিটর চলছে সব। আবহাওয়া বিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান বিশেষত ক্যান্সার চিকিৎসা, ফিন্যান্স, ইকোনমিক্স এমন কী ভাষা বিজ্ঞানে পর্যন্ত পদার্থ বিজ্ঞানের অবদান আছে। পদার্থ বিদ্যা কঠিন, তা অস্বীকার করার উপায় যেমন নেই, আবার অজানাকে জানার যে তীব্র আনন্দ তাকেও অস্বীকার করার উপায় নেই।