সাবজেক্ট রিভিউ

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ

Mass Media And Journalism বা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়টা কেমন?

প্রতিদিন সকালে আমাদের সামনে দেশ বিদেশের হাজারো গুরুত্বপূর্ণ খবর নিয়ে হাজির হয় সংবাদপত্র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা। টেলিভিশন চালু করলেই দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ের ব্রেকিং নিউজ। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমরা হয়তো হারিয়ে যাই খবরের কাগজের পাতায়, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এর পেছনের কারিগরদের কথা খেয়াল করিনা। সাংবাদিকতা এমনই এক মহৎ পেশা, জনগণের সামনে সত্য তুলে ধরাই যার মূল লক্ষ্য। বর্তমান যুগে জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়, আর সে অধিকার নিশ্চিতকরণেই নিরলস কাজ করে চলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকবৃন্দ।

একারণে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও পছন্দের প্রথম সারিতে ঠাঁই করে নিয়েছে সাংবাদিকতা। গণমাধ্যমের উত্তরোত্তর প্রসারের ফলে বাড়ছে এ বিষয়ের চাহিদা। তাই তোমরা যারা গণমাধ্যমের সাথে নিজেকে জড়াতে চাও, উচ্চশিক্ষার বিষয় হিসেবে বেছে নিতে পারো এই Mass Communication & Journalism। এখন চলো, এই সাবজেক্টটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা সাবজেক্ট রিভিউ

কোর্স সাধারণত কয় বছরের হয়?

চারবছর মেয়াদী।

 

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা নিয়ে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মাধ্যমে এই গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ভর্তি হওয়া যায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদের মাধ্যমে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া যায়। এছাড়াও ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ রয়েছে।

See also  সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ

 

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা নিয়ে পুরো ৪ বছরে কি কি কোর্স পড়ানো হয়?

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চারবছর ব্যাপী এই সাবজেক্টের যেসকল কোর্স পড়ানো হয়, এখানে তা উল্লেখ করা হলো-
Concepts of Communication, Concepts of Journalism, Mass Media in Bangladesh, Development Communication, Media Law and Ethics, Editing and Publishing, News Gathering and Writing, Gender and Communication, Photo Journalism, Newspaper Reporting ইত্যাদি।
এসকল বিষয়ের পাশাপাশি মিডিয়া রিসার্চ, পাবলিক রিলেশান, মিডিয়া এডভোকেসি প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হয়। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে পড়ানো হয়।

 

একজন সদ্য এইচএসসি পাশ শিক্ষার্থী কিভাবে বুঝতে পারবে এ বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে কিনা?

সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। তোমরা কেউ যদি দেশ ও দশের জন্য ঝুঁকি নিতে ভালোবাসো, তোমাদের কারো যদি সৃজনশীল লেখালেখিতে দক্ষতা থাকে, সর্বোপরি তোমরা যদি প্রতুৎপন্নমতি হয়ে থাকো, তবে তোমরা নির্দ্বিধায় এ পেশায় আসতে পারো।

 

এ বিষয়ে পড়াশোনার ধরণ কেমন? তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক নাকি উভয়ই?

সাংবাদিকদের সকল বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকা দরকার, এজন্য তাত্ত্বিক পড়াশোনাই একটু বেশি করতে হয়। সিলেবাসভুক্ত পাঠ্যপুস্তকেও বৈচিত্র্য থাকে। তবে এ বিভাগের সাধারণত এমন কোনো কোর্স নেই যেখানে প্রতিদিন ল্যাব বা প্র্যাকটিকাল করতে হয়।

 

এ বিষয়ে পড়াকালীন কি কি এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজের সাথে যুক্ত থাকা যায়, যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে হেল্প করবে?

আগ্রহী শিক্ষার্থীরা চাইলেই প্রায় সব ধরণের ক্লাব, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকতে পারে। এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষ থেকেই বিভিন্ন পার্ট টাইম চাকরি বিশেষত ক্যাম্পাস রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতে পারে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংবাদপাঠক হিসেবে ইন্টার্নশিপে অংশ নিতে পারে ।

See also  Sociology বা সমাজতত্ত্ব নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় ইন্টার্নশিপের সুযোগ কেমন?

জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে প্রশিক্ষণের সুযোগ। পিআইবিতে (প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ) সাংবাদিকতার উপর এক বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স করা যায়।

 

এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?

দেশে সরকারের আয়ত্তাধীন গণমাধ্যম কিংবা সংবাদপত্রের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে ছোট বড় প্রায় সব ধরণের সরকারি প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ সেল রয়েছে। সেখানে পাবলিক রিলেশান্স অফিসারসহ বিভিন্ন পোস্টে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের নেওয়া হয়। সরকারি সংস্থা, যেমন- বিটিভি (বাংলাদেশ টেলিভিশন), বিটিভি ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ বেতার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে রিপোর্টার, এডিটর, নিউজ প্রেজেন্টার সহ বিভিন্ন পদে কাজের সুযোগ রয়েছে।

 

এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে প্রাইভেট চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?

আমাদের দেশের অধিকাংশ টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। এসকল প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লোকবল প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরাই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এখানে নিউজ রিপোর্টার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক, আর্টিস্ট, কার্টুনিস্ট ইত্যাদি বিভিন্ন পদে কাজের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পিআর এজেন্সিতে এই বিভাগের স্টুডেন্টরা চাকরি করতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হওয়া যায়।

 

এই বিষয়ে পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হবার সুযোগ কেমন?

একাডেমিক পারফর্মেন্স খুব ভালো হলে প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই লেকচারার হিসেবে জয়েন করা যায়।

See also  আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International Relation) নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ

 

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা শেষে স্যালারি কেমন?

ফ্রেশার হিসেবে জয়েনের পর স্যালারি হয় সাধারণত ১০ থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে। পরবর্তীতে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর ভিত্তি করে এটি বাড়তে থাকে।

 

এ বিষয় পড়ে বাইরের কোন দেশগুলোতে যাওয়ার সুযোগ বেশি?

জার্নালিজমের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সর্বাধিক সুবিধাসম্পন্ন।

 

দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলে স্কলারশিপের সুযোগ কেমন?

বিভিন্ন শর্তাদি ও ক্রাইটেরিয়া পূরণ সাপেক্ষে বিশ্বের নানা দেশে এখন জার্নালিজমে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ প্রদান করা হয়, এদের মাঝে Mike Reynolds Scholarship ও Abe Schechter Graduate Scholarship উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও নিয়মিত অনার্স ও মাস্টার্সসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার উপর রয়েছে দুইবছর মেয়াদী রিজিওনাল মাস্টার্স কোর্স। এ কোর্সের অধীনে স্টুডেন্টরা স্কলারশিপ নিয়ে পাকিস্তান, নেপাল, নরওয়ে প্রভৃতি দেশে পড়াশোনা করতে পারে।

 

রিসার্চের কেমন সুযোগ রয়েছে?

বর্তমানে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ সংক্রান্ত গবেষণা কাজেরও পরিধি বাড়ছে। ব্রাক ইউনিভার্সিটির আন্ডারে পরিচালিত হয় জার্নালিজম ট্রেইনিং এন্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (JATRI) নামক প্রোগ্রাম, যার লক্ষ্য নবাগতদের ট্রেনিং প্রদান এবং গঠনমূলক গবেষণাকার্য কনডাক্ট করা। দেশের বাইরে ব্রাসেলস ইনস্টিটিউট ফর জার্নালিজম স্টাডিস নিয়মিত বিভিন্ন ওয়ার্কশপ পরিচালনা করে পোস্টডক্টরাল রিসার্চারদের জন্য।

এছাড়াও উন্নতমানের মিডিয়া টেকনোলজি ডেভেলপের জন্য দীর্ঘদিন যাবত নিয়োজিত আছে বিবিসি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট। সত্য প্রকাশের সৎসাহস নিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় আসতে হয়। রয়টার্স, আলজাজিরা, বিবিসি প্রভৃতি বিখ্যাত সংবাদসংস্থা সিস্টেমের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তেমনি আগামীদিনের নির্ভীক ও কর্মনিষ্ঠ সাংবাদিক হতে চাইলে তুমিও চলে এসো জার্নালিজম পেশায়!

Related Articles

Back to top button