অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কেন পড়বেন?
অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টা পড়ার জন্য কেমন?
অ্যারোনটিক্যাল: ছোটোবেলায় আকাশে বিমান দেখলে আমরা সবাই কমবেশি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। মানুষের আকাশে ওড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে শতবর্ষেরও বেশি আগে। তবে দিনকে দিন এই আকাশে ওড়ার প্রযুক্তি উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। বিমানের গঠন, উৎপাদন, পরিচালনা ইত্যাদি নিয়েই গড়ে উঠেছে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভিত্তি। যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সাব্জেক্টটি অত্যন্ত নবীন।
অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রিভিউ
অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সাধারণত কত বছরের?
৪ বছর, ৮ টি সেমিষ্টার।
এই সাবজেক্টটি বাংলাদেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়?
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম MIST তে ২০০৯ সালে এটি চালু হয়। এর বাইরে বাংলাদেশ এভিয়েশন ইউনিভার্সিটিতে এটি পড়ানো হয়।
অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ৪ বছরে কি কি কোর্স পড়ানো হয়?
সাবজেক্টটি মূলত ২ ভাগে বিভক্ত। একটি Aerospace অপরটি Avionics । এই দুটি discipline নিয়ে সংক্ষেপে নিচে বর্ণনা করা হল:
Aerospace: Aerospace Engineering এ বিমানের মেকানিক্যাল অংশ নিয়ে পড়ানো হয়।
এই বিভাগের আলোচ্য বিষয়গুলো হল:
1. Aerospace Propulsion
2. Applied & High Speed Aerodynamics
3. Aerospace Vehicle Design
4. Rotorcraft Performance
5. Weapons Engineering
6. Aircraft Structural Design
7. Aircraft Loading & Structural Analysis
8. Space Engineering etc.
Avionics: Avionics এ বিমানের ইলেক্ট্রিক্যাল অংশ পড়ানো হয়।
এই বিভাগের আলোচ্য বিষয়গুলো হল:
1. Avionics Engineering
2. Radar Engineering
3. Satellite Communication
4. Optoelectronics
5. Optical Fiber Communication
6. Microwave engineering
7. Aero-measurement & Instrumentation
8. Guidance, Navigation & Control etc.
এই বিষয়ে ভাল করতে উচ্চমাধ্যমিকের কোন কোন সাব্জেক্টে দক্ষ হতে হয়?
অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেশিরভাগ জিনিসই নতুন হলেও পদার্থবিজ্ঞান এবং উচ্চতর গণিতে পারদর্শিতা একজন শিক্ষার্থীকে অনেকাংশে সুবিধা দিয়ে থাকে।
একজন সদ্য এইচএসসি পাশ শিক্ষার্থী কিভাবে বুঝতে পারবে এ বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে কিনা?
এই সাব্জেক্টটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন। একইসাথে বেশি জায়গায় পড়ারও সুযোগ নেই। একজন শিক্ষার্থীর যদি বিমান নিয়ে আগ্রহ থাকে , পরবর্তীতে এই নিয়ে কাজ করতে চায় তাহলে তার জন্য অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বেশ ভাল একটি অপশন হতে পারে।
অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার ধরন কেমন?
এখানে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ধরনের পড়াশোনাই করানো হয়। তবে অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং সাব্জেক্টগুলোর মতন এখানেও ব্যবহারিকেই বেশি জোর দেওয়া হয়ে থাকে।
এই বিষয়ে পড়াকালীন কি কি এক্সট্রা কারিকুলার আক্টিভিটির সাথে যুক্ত থাকা যায় যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে হেল্প করবে?
পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সট্রা করিকুলার একটিভিটি তে যুক্ত থাকা যায় যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে ভূমিকা রাখে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ক্লাব রয়েছে যেগুলোতে জয়েন করে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় কোনো ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে?
অবশ্যই। অধ্যয়নরত অবস্থায় যেকোন এভিয়েশন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ রয়েছে।
অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?
এই বিষয় থেকে বিএসসি অনার্স কমপ্লিট করার পর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিসিএস ছাড়াও এয়ারক্রাফট মেইন্টেইন্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে প্রাইভেট চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?
এ বিষয়ে পড়া শেষ করে চাকরির প্রধান ক্ষেত্রই হলো প্রাইভেট সেক্টর। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে বিদেশে। সেখানে বোয়িং, এয়ারবাস, নাসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সকল এয়ারক্রাফট কোম্পানিতেই চাকরির সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হবার সুযোগ কেমন?
অবশ্যই। পড়াশোনা শেষে ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হবারও সুযোগ রয়েছে এখানে।
অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে চাকরির ক্ষেত্রে স্যালারী রেঞ্জ কেমন?
যেহেতু সাব্জেক্টটি এদেশে নতুন তাই চাকরির বাজারে তুলনামূলক প্রতিযোগিতা কম। সেই সাথে অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরিগুলোর তুলনায় এখানে বেতন যথেষ্ঠ বেশি। আন্তর্জাতিক বড় কিছু প্রতিষ্ঠানের বেতন ইউএস ডলারে প্রায় লাখের কাছাকাছি। তবে সব কিছুই নির্ভর করে স্কিল এবং কাজ করার ক্ষমতার উপরে।
রিসার্চের কেমন সুযোগ রয়েছে?
রিসার্চের জন্য এখানে বেশ ভালরকমের সুযোগ রয়েছে। প্রতিদিনই উড়োজাহাজের গঠন পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন নতুন সুবিধা যোগ হচ্ছে। এইসব নিয়ে গবেষণার জন্য সুযোগ প্রচুর।
এই বিষয় পড়ে বাইরের কোন দেশগুলোয় যাওয়ার সুযোগ বেশি?
এই বিষয়ে পড়ে বাইরের দেশগুলোয় যাওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছরই অনেকে বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলে স্কলারশিপ কি ধরণের পাওয়া যায়? স্কলারশিপ পেতে কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হয়?
দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য মেরিট বেইজ্ড স্কলারশিপ পাওয়া যায়। এছাড়া কোন সাব্জেক্টের জন্য এপ্লাই করছে সেটিও এখানে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে তুলনামূলক অন্যান্য সাব্জেক্টের তুলনায় অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্কলারশিপ বেশি পাওয়া যায়।
সবশেষে , যদি অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতি প্যাশোনেট হও, বিমান নিয়ে আগ্রহ থাকে, কিভাবে কাজ করে এইসব নিয়ে ঝোক থাকে তাহলে তোমার জন্য অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এক দারুণ মুগ্ধতা নিয়ে অপেক্ষা করে আছে। যদি চাপ নিয়ে এই সাব্জেক্টটি পড়তে আসো কিংবা অন্যের কথা শুনে আসো তাহলে হয়ত ভালো নাও করতে পারো তবে একবার অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংকে ভালোবেসে এখানে আসলে দুহাত ভরে সব পাবে।