আমলাতন্ত্র কাকে বলে, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য এবং আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত
আমলাতন্ত্র কি এর বৈশিষ্ট্য, আমলাতন্ত্রের সদস্যদের নিয়ােগ, প্রশিক্ষণ, কার্যাবলী ও উদ্দেশ্য
আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রশাসনের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের অ-রাজনৈতিক অংশরূপে আমলাতন্ত্র বর্তমানে নীতি নির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রয়ােগ, আইন প্রণয়ন, শাসনবিভাগের পদাধিকারীদের পরামর্শ দান, রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংরক্ষণ, আধুনিকীকরণ প্রভৃতি কার্যাবলীর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
অনেক অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্র রাজনৈতিক নিরবচ্ছিন্নতা রক্ষার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এই ব্লগে আমলাতন্ত্র কাকে বলে, আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী, আমলাতন্ত্র ও জনবিচ্ছিন্নতা, আমলাতন্ত্র ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক সমস্যা, বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র জনপ্রভু না প্রজাতন্ত্রের সেবক-কর্মচারী, আমলাতন্ত্রের রাজনৈতিক অধীনস্থতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে।
আমলাতন্ত্র কাকে বলে ?
‘Bureaucracy’ শব্দের বাংলা পরিভাষা হল ‘আমলাতন্ত্র” । ফরাসী শব্দ ‘বরাে’ (Bureau) থেকে ‘ ব্যুরুক্র্যাসি ‘ শব্দের উদ্ভব ঘটেছে। ‘বরাে’ শব্দের অর্থ ডেস্ক বা ছােট টেবিল।
সুতরাং বুরােক্র্যাসি” বলতে ডেস্ক গভর্নমেন্ট (Desk Government) বা টেবিলে বসে পরিচালিত সরকারকে বুঝায়। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় আমলাতন্ত্র বলতে এমন একটি ব্যবস্থাকে বুঝায়, যেখানে বিভিন্ন দপ্তরের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে।
আমলাতন্ত্র এমন এক শাসনব্যবস্থা যাতে স্থায়ী সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্ব বিভাজনের মাধ্যমে সরকারের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। আমলারা জনপ্রতিনিধি নয় বা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নয়। ফলে রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তিত হলেও আমলারা পদ হারায় না। এই চারিত্র্যের কারণে আমলাতন্ত্রে সরকার পরিচালনার ধারাবাহিকতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত হয়।
আমলা হচ্ছেন সরকারের অংশ যারা অনির্বাচিত। আমলাদের নীতিনির্ধারণ তৈরিকারক হিসেবেও আখ্যা দেয়া হয়। ঐতিহাসিকভাবে, আমলারা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন। যারা জনগণের ভোট দ্বারা নির্বাচিত নন। বর্তমান সময়ে, আমলাদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বড় একটি অংশ পরিচালিত হয়।
অধ্যাপক ফ্রাইনার বলেন, “আমলাতন্ত্র বলতে একটি স্থায়ী, বেতনভুক্ত এবং সুদক্ষ কর্মকর্তাদের সমষ্টিকে বুঝায় ।”
অগ বলেন, “আমলাতন্ত্র সুদক্ষ পেশাদারী কর্মকর্তা যারা স্থায়ীভাবে চাকরি করেন এবং রাজনীতির সঙ্গে যাদের কোন সম্পর্ক থাকে না।
এক কথায় সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণকারী কর্মচারীগণ আমলা নামে খ্যাত।
আমলাতন্ত্রের ধারণা
বর্তমান অর্থে “আমলাতন্ত্র” শব্দটির ব্যবহার না থাকলেও, প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থাতে আমলাতন্ত্রের উপস্থিতির অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। আজ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে দক্ষিণ মেসােপটেমিয়া অঞ্চলের সুমেরিয় সভ্যতাতেও এক ধরনের আমলাতন্ত্রের উপস্থিতির নজির পাওয়া গেছে। প্রাচীন মিসরীয়, চীন ও রােমান সভ্যতাতেও আমলাতন্ত্র প্রচলিত ছিল। আধুনিক জাতি রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিকাশের সময় থেকে বিশেষত অষ্টাদশ শতাব্দি থেকে বর্তমানে আমরা যে অর্থে আমলাতন্ত্র বুঝে থাকি তার বিকাশ শুরু হয়। উনিশ শতাব্দী নাগাদ ইউরােপিয় দেশগুলাের রাষ্ট্র পরিচালনায় আমলাতন্ত্র বড় ভূমিকা নিতে শুরু করে।
আমলাতন্ত্র বস্তুতঃ আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অঙ্গ। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের স্থায়ী বা অরাজনৈতিক অংশই আমলাতন্ত্র বা সিভিল সার্ভিস (Civil Service) নাম পরিচিতি। গণতন্ত্রে নীতি নির্ধারণ করেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সেই নীতি বাস্তবায়ন করেন আমলারা বা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। রাষ্ট্রপ্রধান ও মন্ত্রিসভার নিচে শাসন বিভাগের যে সকল স্থায়ী কর্মচারী থাকেন তাদের আমলা বলা হয়।
আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Bureaucracy’। ইংরেজি ‘Bureaucrary’ শব্দটি এসেছে ফরাসি থেকে। ফরাসিতে শব্দটি এসেছে ফরাসি ‘Bureau’ এবং গ্রিক ‘Kratos’ শব্দের সমন্বয়ে। ‘Bureau’ শব্দের অর্থ ডেস্ক বা অফিস এবং ‘Kratos’ শব্দের অর্থ শাসন বা রাজনৈতিক ক্ষমতা। সুতরাং আমলাতন্ত্রের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ‘Desk government’ বা ‘দাপ্তরিক সরকার। আক্ষরিক অর্থে আমলাতন্ত্র বলতে বুঝায় আমলা বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের শাসন।
বাস্তবে আমলারা পরস্পর সুশৃঙ্খলভাবে সংযুক্ত এবং রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করেন। জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার সর্বপ্রথম ‘Legal and rational Model’ এর মাধ্যমে আমলাতন্ত্রকে উপস্থাপন করেন। ম্যাক্স ওয়েবারকে বলা হয় আদর্শ আমলাতন্ত্রের উদ্ভাবক। ম্যাক্স ওয়েবার ছাড়াও অনেক পন্ডিত আমলাতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। জন ফিফনার ও রবার্ট প্রেসথাস বলেন, “আমলাতন্ত্র হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও তাদের কর্মকান্ডকে এমন এক পদ্ধতিতে সংগঠিত করা যা সুসংহতভাবে গােষ্ঠীর উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হয়।
” অধ্যাপক এস ই ফাইনার বলেন, “আমলাতন্ত্র একটি স্থায়ী, বেতনভুক্ত এবং দক্ষ চাকরিজীবী শ্রেণি।”
গ্যাব্রিয়েল অ্যালমন্ড ও জি পাওয়েল এর মতে, “আমলাতন্ত্র বলতে একটি ব্যাপক সংগঠনকে বুঝায়, যার মাধ্যমে শাসকবর্গ নিজেদের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার চেষ্টা করেন।”
পরিশেষে বলা যায়, আমলাতন্ত্র হচ্ছে স্থায়ী, বেতনভুক্ত, নিরপেক্ষ, দক্ষ ও পেশাদারী সংগঠন যার দ্বারা সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়।
আমলাতন্ত্রের প্রকৃতি
‘আমলাতন্ত্র” বলতে অ-রাজনৈতিক প্রশাসনে নিযুক্ত সকল স্তরের কর্মচারীকে বুঝায় না। আমলাতন্ত্র হল আমলাদের শাসন। অ-রাজনৈতিক প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থিত এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণই আমলা নামে পরিচিত। আধুনিক রাষ্ট্রে প্রশাসন পরিচালনায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। প্রশাসন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্ক, গুরুত্ব ও ভূমিকা পরিবর্তিত হয়েছে।
শাসন-বিভাগ রাজনৈতিক এবং অ-রাজনৈতিক এ দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রশাসনের রাজনৈতিক পদাধিকারীগণ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নিযুক্ত হন। যেমন- মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ। প্রশাসন পরিচালনার রাজনৈতিক দায়িত্ব তাদের উপর ন্যস্ত। তারাই সরকারি নীতি, সিদ্ধান্ত, কার্যাবলী, কর্মসূচি, সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতার রাজনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
আমলাতন্ত্র একটি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে অ-রাজনৈতিক অংশরূপে নীতি নির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়ােগ, আইন প্রণয়ন, শাসন বিভাগের রাজনৈতিক পদাধিকারীদের পরামর্শ দান, শাসন বিভাগের বিভিন্ন অংশের সংযােগ সাধন, আধুনিকীকরণ প্রভৃতি কার্যাবলীর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আধুনিক রাষ্ট্রের বিশাল আয়তন, বিপুল কর্মকাণ্ড এবং ক্রমবর্ধমান দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিশাল আমলাতান্ত্রিক কাঠামাে গড়ে উঠেছে।
আমলাতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক শক্তি। আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক পদাধিকারী শাসক বা বিধি প্রণয়নকারীগণ নিজেদের সিদ্ধান্ত প্রয়ােগ করেন। রাষ্ট্রের লক্ষ্য আমলাতন্ত্রের লক্ষ্যে এবং আমলাতন্ত্রের লক্ষ্য রাষ্ট্রের লক্ষ্যে পরিণত হয়।
বুর্জোয়া রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা সম্পর্কে লেনিন বলেছেন, “ আমলাতন্ত্র হল ক্ষমতা সম্পন্ন একটি স্তর, আধুনিক সমাজের প্রাধান্যকারী শ্রেণি, বুর্জোয়া শ্রেণির সঙ্গে এই সংস্থার প্রত্যক্ষ এবং অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বিদ্যমান। বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্য থেকেই আমলাদের নিয়ােগ করা হয়।”
আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
সমাজবিজ্ঞানী মাক্সওয়েবার আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কতগুলাে বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। নিয়ে তা বর্ণিত হল:
১। কার্যবন্টন– আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়ােজনীয় কার্যকে কর্মচারীদের মধ্যে অফিসের দৈনন্দিন কর্তব্যরূপে বণ্টন করে দেওয়া হয়।
২। কার্য পদ্ধতি নির্ধারণ– আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কার্য পদ্ধতি আইনের মাধ্যমে নির্দেশিত হয়। এতে প্রত্যেক কর্মচারীকে তার স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কার্য সম্পাদন করতে হয়।
৩।পদসােপান: আমলাতান্ত্রিক সংগঠন পদসােপান নীতি অনুসরণ করে। অর্থাৎ এখানে উর্ধ্বতনঅধঃস্তন সম্পর্ক বিরাজ করে। এই নীতি অনুসারে বিভিন্ন পদের শ্রেণি বিন্যাস ও সংগঠন করা হয়। প্রত্যেক নিম্নতর পদই কোন উচ্চতর পদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ নিম্নতর। কর্মকর্তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে থাকে।
৪। পেশাদারী ও বেতনভুক্ত আমলা বা বেসামরিক সরকারি কর্মচারীগণ পেশাদারী ও বেতনভােগী। তারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতাদি পান।
৫। বিশেষীকরণ নীতি– আমলাতান্ত্রিক সংগঠন কর্মবিভক্তি ও বিশেষীকরণ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
৬। নিরপেক্ষতা– আমলা প্রশাসন রাজনীতি নিরপেক্ষ সংগঠন। আমলারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থেকে, ঘৃণা ও আবেগকে পরিহার করে নিয়মসিদ্ধ ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। প্রত্যেক কর্মচারীই তার ব্যক্তিগত জীবনকে প্রশাসনিক জীবন থেকে পৃথক রাখেন।
৭। নিয়ােগ ও পদোন্নতি: আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনে নিয়ােগ প্রদান করা হয় মেধার ভিত্তিতে, প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে। জ্যেষ্ঠতা এবং কৃতিত্ব বা সাফল্য এই দুই মানদণ্ডেই তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।
৮। আনুষ্ঠানিকতা– আমলাতন্ত্রে আনুষ্ঠানিকতার উপর, অনমনীয় বিধি ও কার্যপদ্ধতির উপর অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। বিধি মােতাবেক যথাযথ নিয়মে সবকিছু করা হয়। সমস্ত কাজ হয় রুটিন মাফিক।
৯। স্থায়িত্ব: আমলাদের চাকরি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত স্থায়ী। অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তাঁরা চাকরিতে বহাল থাকেন। সরকার পরিবর্তন ঘটলেও তারা থেকে যান। শুধুমাত্র দৈহিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে তারা চাকরিচ্যুত হতে পারেন।
আমলাতন্ত্রের সদস্যদের নিয়ােগ, প্রশিক্ষণ ও চাকরির শর্ত
প্রশাসনিক কর্মচারীদের নিয়ােগ এবং প্রশিক্ষণের পদ্ধতির উপর তাদের কর্ম-কুশলতা ও দৃষ্টিভঙ্গী সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। বেশির ভাগ দেশেই উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মচারীগণ সমাজের বিশেষ সুবিধাভােগী অংশ, যারা অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাগত দিক থেকে প্রভাবশালী, তাদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হন।
সাধারণত অনুকূল অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য কেবলমাত্র সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির পক্ষেই আমলা হওয়ার জন্য প্রয়ােজনীয় শিক্ষাগত যােগ্যতা অর্জন করা সম্ভব। সাধারণভাবে শাসক শ্রেণির সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতি বজায় রেখে প্রশাসনিক কর্মচারী বিশেষভাবে আমলাদের নিয়ােগ ও প্রশিক্ষণের নিম্নরূপ ব্যবস্থা করা হয়।
(ক) নিয়ােগ
আমলাদের নিয়ােগের সময় তিনটি বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখা হয়।
প্রথমত, সমাজের কোন স্তর থেকে প্রশাসনের পদস্থ কর্মচারীরা নিযুক্ত হন তার উপরে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের স্বার্থ ঠিকমত রক্ষিত হয় কিনা তা নির্ভর করে।
দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মচারীদের মূল্যবােধ, মনােবৃত্তি ও অঙ্গীকার এবং সরকারের নীতিনির্ধারণে তার প্রতিফলন সমাজের মৌলিক চরিত্র ও সামাজিক ক্ষমতার বিন্যাসকে স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত করে।
তৃতীয়ত, আমলাতন্ত্রের শীর্ষস্থানীয়দের সামাজিক ভিত্তি সামাজিক শক্তি বন্টনের প্রকৃতি স্পষ্ট করে তােলে।
আধুনিক রাষ্ট্রে বিশেষভাবে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির প্রবক্তা রাষ্ট্রে, আমলাতন্ত্রের ভূমিকা জনস্বার্থের সাথে সঙ্গতিসম্পন্ন হওয়া প্রয়ােজন। এ কারণেই আমলাতান্ত্রিক কাঠামােয় সমাজের সকল অংশের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করার জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং শিক্ষাগত সুযােগ-সুবিধার সমবণ্টন প্রয়ােজন।
প্রশাসনের পদস্থ কর্মচারীগণ নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য আইন রচনার ক্ষেত্রে পরামর্শ দেন এবং মন্ত্রীদের নির্দেশে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রয়ােগ নিশ্চিতকরণের জন্য সাধারণ প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব বহন করেন।
সুতরাং প্রশাসনিক কর্মচারীদের নিয়ােগের জন্য যােগ্যতা বিচার অবশ্যই প্রয়ােজনীয়। এখানে প্রার্থীর শিক্ষাগত যােগ্যতার পাশাপাশি তার বাস্তব দক্ষতা, বিচার-বুদ্ধি, সমযােগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে নেতৃত্ব দানের এবং আলােচনার গতিকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার বিচারই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক দেশেই অ-রাজনৈতিক প্রশাসনের বেশির ভাগ উচ্চ পদাধিকারী প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মনােনীত এবং নিযুক্ত হন। বাংলাদেশ, ভারত, গ্রেট ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সে এই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে কার্যকর হয়েছে।
(খ) প্রশিক্ষণ
প্রশাসনের পদস্থ কর্মচারীদের নিয়ােগের মত তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মনােনীত প্রার্থীদের কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে নিয়ােগের পূর্বে তাদের একটি অবেক্ষাধীন (বা পরীক্ষাধীন) পর্যায় থাকে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যাবলীর সঙ্গে তাদের পরিচিত করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করা হয়।
সাধারণত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে নির্দিষ্ট ধরনের রাজনৈতিক মূল্যবােধ সঞ্চারিত করা হয়। পরবর্তীকালে তারা ঐ মূল্যবােধের দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রশিক্ষণের প্রকৃতি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং মূল্যবােধের দ্বারা প্রভাবিত হয়। প্রশাসন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুতরাং প্রশাসনের পদস্থ কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মূল্যবােধের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ করা হয় সে বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
বাংলাদেশের মত সদ্য স্বাধীন দেশসমূহের প্রশাসনিক মূল্যবােধ এবং কাঠামাে পূর্বতন ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবমুক্ত হতে পারে না। অথচ স্বাধীন রাষ্ট্রের চাহিদা পূরণের জন্য প্রশাসনিক কাঠামাের মূল্যবােধ ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতির আমূল পুনর্বিন্যাসের প্রয়ােজন।
(গ) চাকরির শর্ত
চাকরির স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তা আমলাদের নৈপুণ্য বৃদ্ধির সহায়ক। অপসারণ অথবা পদচ্যুত হওয়ার নিরন্তর ভীতি আমলাদের কার্য-পরিচালনার গুণগত মান হ্রাস করে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের অনিশ্চয়তা আমলাদের রাজনৈতিক আনুগত্য অর্জনের প্রতি আকর্ষণ করে। এ কারণে আমলাদের অবসর গ্রহণের বয়স, অপসারণ ও পদচ্যুতির পদ্ধতি স্পষ্টভাবে সংবিধানে উল্লেখ থাকা প্রয়ােজন।
আমলাদের অপসারণের পদ্ধতি বিচার-বিভাগীয় সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়ােজন। আমলাদের আর্থিক সুযােগ-সুবিধা, অবসরকালীন আর্থিক নিরাপত্তা তাদের নৈপুণ্যের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। বেতন হার ও চাকরির শর্তাবলী প্রতিকূল হলে উচ্চ মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষণ বােধ করবে না। সুতরাং উচ্চ গুণাবলি এবং যােগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের আকর্ষণের জন্য উচ্চ বেতন হার, অনুকূল চাকরির শর্ত এবং অবসরকালীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।
পদোন্নতি নৈপুণ্যের একটি নির্ধারক। পদোন্নতির মানদণ্ড কি হওয়া উচিত এ বিষয়ে অবশ্যই বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। প্রবীণতা, প্রমাণিত যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রভৃতিকে অনেকে পদোন্নতির মানদণ্ডরুপে উল্লেখ করেছেন। পদোন্নতির সুযােগ ব্যতীত চাকরি উৎসাহহীন এবং বােঝাস্বরূপ হয়ে উঠে।
দায়িত্ববােধ ও সচেতনতা হ্রাস পায়। তাই পদোন্নতির যথেষ্ট ব্যবস্থা ও পদোন্নতির নির্দিষ্ট নীতি থাকা প্রয়ােজন। পদোন্নতির অনিশ্চয়তা আমলাদের মধ্যে কেবল দক্ষতার পরিপূরণে বাধার সৃষ্টি করে না, তাদের মধ্যে রাজনৈতিকীকরণের প্রক্রিয়া শক্তিশালী হয়ে উঠে।
আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী
সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। বর্তমানকালে আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার ব্যবস্থায় এটি এক অপরিহার্য অঙ্গরূপে পরিণত হয়েছে।
নিম্নে আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী আলােচনা করা হল।
(১) সরকারি নীতি বাস্তবায়ন– আইনসভা যে আইন ও নীতি প্রণয়ন করে তা বাস্তবে প্রয়ােগ করার দায়িত্ব আমলাদের। তাদের মাধ্যমেই সরকারের নীতি বাস্তবায়িত এবং আইন প্রযুক্ত হয় ।
(২) আইন প্রণয়নে সহায়তা দান– আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমলাদের গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিভাগীয় আমলাগণ আইনের খসড়া প্রণয়নে মন্ত্রীদেরকে সাহায্য করে থাকেন। মন্ত্রীরা আইন সংক্রান্ত ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নন। তাই তারা আমলাদের উপর নির্ভর করে থাকেন। আইনসভায় আমলারা মন্ত্রীদেরকে প্রশ্নের জবাব তৈরি করে দেন এবং বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেন।
(৩) অর্পিত আইন সংক্রান্ত কাজ- আইনসভা কোন বিষয়ে আইনের সাধারণ নীতিই শুধু স্থির করে। আইনের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রদানের ক্ষমতা শাসন বিভাগের হাতে ন্যস্ত থাকে। শাসন বিভাগের পক্ষে আমলারা এ দায়িত্ব পালন করেন। এরূপ অর্পিত আইনের মাধ্যমে আমলাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
(৪) জাতীয় স্বার্থ রক্ষা- আমলারা কোন রাজনৈতিক দলের লােক নন। তারা নিজেদেরকে দল নিরপেক্ষ ও জাতীয় স্বার্থের রক্ষক মনে করেন। তাই তাঁরা বিভিন্ন গােষ্ঠীর দ্বন্দ্বের উপরে উঠে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে থাকেন।
(৫) সভ্যতার ধারক ও বাহক- আমলাতন্ত্র প্রশাসন ব্যবস্থাকে গতানুগতিকতার হাত থেকে উদ্ধার করে আধুনিকীকরণের দিকে ধাবিত করে। ফলে সমাজ ও শাসন ব্যবস্থা উন্নত হয় এবং সভ্যতার বিকাশ ঘটে।
(৬) সংগঠনের কর্মকুশলতা বৃদ্ধি- আমলাতন্ত্র যােগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। যােগ্য কর্মকর্তাগণ তাদের যােগ্যতা, দক্ষতা ও কর্মকুশলতার দ্বারা সংগঠনকে শক্তিশালী করে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
(৭) শাসক শ্রেণিকে সজাগ ও সতর্ক রাখা- বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে কোন নীতি গ্রহণ করা প্রয়ােজন, কোন পদক্ষেপ নিলে সুফল পাওয়া যাবে ইত্যাদি সম্পর্কে আমলাতন্ত্র সঠিক ধারণা দিতে সক্ষম। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে পূর্ব মন্তব্য প্রদান করে আমলাতন্ত্র ক্ষমতাসীন শাসক শ্রেণিকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সজাগ করে।
(৮) গণসংযােগ রক্ষা করা- গণসংযােগ সরকারের সফলতার চাবিকাঠি। আমলাতন্ত্র গণসংযােগের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি জনগণের কাছে তুলে ধরে।
আদর্শ আমলাতন্ত্র বলতে কি বুঝায়?
(ক) আদর্শ আমলাতন্ত্র-
এ্যালিম ও পাওয়েল আদর্শ আমলাতন্ত্র বলতে নিচের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন।
প্রথমত, বিভাগীয় ন্যায় বিচার এবং বিভাগীয় আদালতের প্রসারের ফলে আমলাতন্ত্রকে কিছু বিচার সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়।
দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংযােগসাধনের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র অপরিসীম গুরুত্বের অধিকারী। স্বার্থান্বেষী গােষ্ঠী, রাজনৈতিক দল এবং জনসাধারণ অনেক সময়ে প্রশাসনিক কর্মচারীদের দ্বারা প্রচারিত তথ্যের উপর নির্ভরশীল থাকেন। সরকারি নীতি ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তথ্য প্রদানের সূত্র হিসেবে এবং গণসংযােগের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা উল্লেখযােগ্য।
তৃতীয়ত, রাজনৈতিক উন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে আমলাগণ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তারা আধুনিকীকরণের কর্মসূচি প্রণয়ন ও প্রয়ােগে সাহায্য করে থাকেন। আধুনিকীকরণের এজেন্সী নামে আমলাদের চিহ্নিত করা হয়। অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহে তাদের এই ভূমিকা বেশি। কার্যকর। প্রাক্তন ঔপনিবেশিক অঞ্চল এবং সদ্য স্বাধীন দেশে আমলারাই সরকার পরিচালনা, নীতিপ্রণয়ন এবং প্রয়ােগের মাধ্যম।
রাজনৈতিক নেতাদের প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতা আমলাদের উদ্যোগী হতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিকীকরণ এমন এক দৃষ্টিভঙ্গী এবং মূল্যবােধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যার সাথে দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থের কোন সংযােগ থাকে না। তথাপি আমলাতন্ত্র রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বিশিষ্ট এবং অপরিহার্য উপাদান হিসেবে পরিণত হয়েছে।
আমলাতন্ত্র, জনবিচ্ছিন্নতা ও লালফিতা
উদারপন্থী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। আমলাতন্ত্র অপব্যাখ্যামূলক শব্দে পরিণত হয়েছে। কেবলমাত্র সাধারণ নাগরিকই নয়, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও এর বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছেন। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে, আমলাতন্ত্র জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। রাজনৈতিক এবং আইনের দিক থেকে আমলারা প্রত্যক্ষভাবে জনসাধারণের নিকট জবাবদানে বাধ্য নয়।
আমলাগণ সমাজের অন্যান্য অংশের তুলনায় নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন ও স্বতন্ত্র বলে গণ্য করেন। আমলাগণ পেশাদারী প্রশাসক। বৈষয়িক উন্নতি এবং প্রশাসনে নতুন মর্যাদা অর্জনের জন্য আমলাগণ সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন। জনজীবনের সমস্যা সম্পর্কে তারা সজাগ থাকেন না। দেশের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাঠামাে সরকারি দায়িত্বে নিযুক্ত থাকার জন্য সমাজের অন্যান্য অংশের প্রতি আমলাদের তাচ্ছিল্যের মনােভাব গড়ে ওঠে। নিজের পদোন্নতি এবং বৈষয়িক পুরস্কার অর্জন তাদের দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রভাবিত করে।
আমলাগণ সরকারি কাঠামাের মধ্যে নির্দিষ্ট বিধি, পদ্ধতি, আচরণ ও পদোন্নতি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এ কাঠামাের বাইরের জীবন তার কাছে অপরিচিত হয়ে উঠে। সাধারণ জীবন থেকে এই বিচ্ছিন্নতা আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের ফলপ্রসূ কার্য-পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি গুরুতর সীমাবদ্ধতা।
আমলাতন্ত্রের দীর্ঘসূত্রতা, আনুষ্ঠানিকতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনিচ্ছার ফলে জনগণের সমস্যার কথা, আবেদন-নিবেদন তাদের কাছে প্রেরিত হলে সহজে সেই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় না। সকল প্রস্তাব দীর্ঘদিন ফাইলবন্দী থাকে। সিদ্ধান্ত অযথা বিলম্বিত হয়।
ফাইলের লালফিতার বাঁধন সহসা খােলা হয় না। এজন্য অনেকে মনে করেন আমলাতন্ত্র হচ্ছে লালফিতার দৌরায়। আমলাতন্ত্রের ঔদাসীন্য, আনুষ্ঠানিকতা, রুটিনমাফিক কাজের প্রবণতা, দীর্ঘসূত্রিতা, বিভাগীয় মনােভাব এবং গড়িমসির প্রচেষ্টা দূর করার চেষ্টা করা প্রয়ােজন।
আমলাতন্ত্রের ত্রুটি
বর্তমান যুগে আমলাতন্ত্র প্রায় প্রতিটি রাজনীতিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ। আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য আমলাতন্ত্রের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ভাবিয়ে তুলেছে। হিউয়ার্ট (Lord Hewart) তাঁর New Despotism গ্রন্থে আমলাতন্ত্রের বিরূপ সমালোচনা করেছেন। দেশের সাধারণ মানুষ এবং রাজনীতিক নেতা নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষকেই অল্পবিস্তর আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করতে দেখা যায়। উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র অপরিহার্য বিবেচিত হয়।
অথচ এই উদারনীতিক রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই আমলাতন্ত্র দুর্নীতি, অপচয় প্রভৃতি বহুবিধ ত্রুটি-বিচ্যুতি দ্বারা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তার ফলে, বিরূপ সমালোচনারও বিরাম নেই। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আমলাতন্ত্রের কতকগুলি বিশেষ ত্রুটির কথা বলা হয়ে থাকে।
(১) জনস্বার্থের প্রতি উদাসীনতা
সরকারী প্রশাসনে আমলাতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। এর স্থায়িত্ব, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর বিশেষ জ্ঞানের অধিকার, একে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতে সাহায্য করে। তার ফলে আমলারা প্রশাসনকে নিজেদের স্বার্থে ও ইচ্ছানুসারে নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়। সমাজের অন্যান্য অংশ থেকে আমলারা নিজেদের স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন বলে মনে করে। সরকারী কাঠামোর অংশ হিসাবে এলিট-শ্রেণী-চেতনার সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যে আত্মগৌরব ও অহংবোধ প্রবল হয়ে ওঠে।
নিজেদের বৈষয়িক উন্নতি ও মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যাপারেই আত্মনিয়োগ করে। নিজেদের কর্তৃত্ব ও গুরুত্বের ব্যাপারেই তাদের যাবতীয় আগ্রহ দেখা যায়। তার ফলে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়। জনগণের মতামত ও অভাব অভিযোগ সম্পর্কে আমলাতন্ত্র উদাসীন থাকে। আমলারা আত্মকেন্দ্রিকতার দ্বারা আচ্ছন্ন থাকেন। জনসাধারণের সমস্যাদি ও অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে আমলাদের অবহেলার মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। দেশ ও দেশবাসীর প্রতি দায়বদ্ধতার পরিবর্তে আমলাদের হৃদয়হীন আচরণ পরিলক্ষিত হয়।
(২) গণতন্ত্রের শত্রু
সরকারী প্রশাসনে আমলাদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের জন্য তারা নিজেদের নির্বাচিত রাজনীতিক অংশের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে গণ্য করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে আমলাদের রাজনীতিক শাসকের প্রতিদ্বন্দ্বিতে পরিণত হতে দেখা যায়। সরকারী প্রশাসনের বিস্তৃতির ও মান উন্নয়নের দাবি যত বাড়তে থাকে প্রশাসনের গণতান্ত্রিক চরিত্র তত অন্তর্হিত হতে থাকে।
আমলাতন্ত্রের ক্ষমতার বিস্তার গণতন্ত্রকে আমলাতন্ত্রে পরিণত করে। র্যামসে ম্যুর ব্রিটিশ সমাজব্যবস্থার পর্যালোচনা করে মন্তব্য করেছেন: “Under the cloke of democracy it has thrive and grown until, like Frankenstein’s monster, it sometimes seems likely to devour its creator….” আমলাতন্ত্রের এই বিপদ সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন।
(৩) অভিজাততন্ত্রের আশঙ্কা
অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক সদস্য প্রতিনিধিমূলক উদারনীতিক গণতন্ত্রের দলীয় সরকারকেও ক্রমশ কিছু ব্যক্তির শাসনের ধাঁচে গড়ে তুলতে পারে। তার ফলে উদারনীতিক গণতান্ত্রিক সরকার ধীরে ধীরে মুষ্টিমেয় কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির অভিজাততান্ত্রিক শাসনে পরিণত হতে পারে। বল বলেছেন: “The demands for more extensive and standardised government service may gradually transforms party government into more oligarchic patterns even in the more representative liberal democracies.”
(৪) জনকল্যাণের পরিপন্থী
উন্নতিশীল দেশসমূহের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত আমলাতন্ত্র একটা সমস্যা হিসাবে দেখা দিতে পারে। জনকল্যাণ ও দ্রুত আর্থনীতিক উন্নয়নের যে বিশেষ প্রয়োজনীয়তা এই সব দেশে প্রবলভাবে অনুভূত হয় তা অনিয়ন্ত্রিত আমলাতন্ত্রের জন্য বহুলাংশে ব্যাহত হয়। আপন ক্ষমতার বৃদ্ধি ও বিস্তারের মোহে ক্ষমতালোভী পদস্থ আমলারা জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচী বাস্তবায়নের পথে বাধার সৃষ্টি করেন। এই কারণে আমলাতন্ত্র জনকল্যাণ-বিমুখ বলে বিবেচিত হয়।
(৫) ব্যক্তি-স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক
আমলাতন্ত্র ব্যক্তি-স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে পড়তে পারে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের শাসন থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তি স্বাধীনতা নিরাপদ থাকে। কিন্তু গণতন্ত্র ক্ষমতালিপ্স আমলাদের শাসনে পরিণত হলে ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়ে। ল্যাস্কি মন্তব্য করেছেন: “Bureaucracy is a system of government the control of which is so completely in the hands of officials that their power jeopardises the liberties of ordinary citizens.”
(৬) রক্ষণশীলতা দোষে দুষ্ট:
আমলাতন্ত্র রক্ষণশীলতার ধারক ও বাহক হিসাবে অভিযুক্ত হয়ে থাকে। আমলাদের মধ্যে প্রথা ও ঐতিহ্যের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়। আমলাদের মধ্যে পূর্ববর্তী নজিরের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ও অন্ধ আনুগত্য পরিলক্ষিত হয়। প্রচলিত রীতি-নীতি ও পন্থা-পদ্ধতির প্রতি আমলাদের অবিচল নিষ্ঠা বর্তমান থাকে। এই পরিবর্তন-বিমুখ মানসিকতা আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর একটা বড় বৈশিষ্ট্য। আমলারা গতানুগতিক ধারায় রুটিন মাফিক কাজ করে চলেন। তাঁরা রুটিনবাঁধা কাজের বাইরে কিছু করতে চান না।
তার ফলে আমলাতান্ত্রিক কাজকর্ম নিষ্প্রাণ ও যান্ত্রিক হয়ে পড়ে। প্রখ্যাত দার্শনিক রাসেল (Bertrand Russell ) -এর মতানুসারে এক নেতিবাচক মানসিকতা আমলাদের মধ্যে কাজ করে। তাই আমলারা প্রগতিমূলক কোন সংস্কার বা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকে সহজে মেনে নিতে পারেন না। আমলাদের কাছ থেকে সৃজনশীল ও প্রগতিমূলক কোন পদক্ষেপ আশা করা যায় না। উদ্যোগহীনতা প্রবলভাবে প্রতিপন্ন হয়।
(৭) দীর্ঘসূত্রতা
দীর্ঘসূত্রতা আমলাতন্ত্রের আর একটি বড় ত্রুটি। আমলারা আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির বাইরে যেতে চান না। তার ফলে আমলাতান্ত্রিক কাজকর্মের মধ্যে যান্ত্রিকতা ও দীর্ঘসূত্রতা প্রকট হয়ে ওঠে। আমলারা প্রতিটি বিষয়ে খুঁটিনাটি বিভিন্ন দিক বিচার-বিবেচনার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আবার নিয়ম মাফিক আনুষ্ঠানিকতার স্বার্থে এক বিভাগকে অন্য বিভাগের মতামত জানতে হয়। তারফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমগ্র ধারাটি অযথা বিলম্বিত হয়। ‘লাল ফিতার বাঁধন’ (redtapism) কাটিয়ে সরকারী কাজকর্মে গতি আসতে চায় না। সরকারী প্রশাসন গতিহীনতায় ভোগে। দেশ ও দেশবাসীর স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। এবং সরকারের দায় দায়িত্বের বোঝা বাড়তে থাকে।
(৮) বিভাগীয় সংকীর্ণতা
বিভাগীয় দৃষ্টিভঙ্গি আমলাতন্ত্রের একটি ত্রুটি বিশেষ। আমলাতান্ত্রিক কাঠামোতে সরকারের কাজকর্মকে বিভিন্ন বিভাগ বা দপ্তরের মধ্যে বণ্টন করা হয়। নিজস্ব সংকীর্ণ বিভাগীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রত্যেক দপ্তর কাজ করে চলে। আন্তঃবিভাগীয় সামঞ্জস্যের ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে উদ্যোগ বা আগ্রহ দেখা যায় না।
সরকারের সাধারণ নীতি ও কর্মধারার পরিবর্তে সংকীর্ণ বিভাগীয় মনোভাব (departmentalism) প্রাধান্য পায়। তারফলে আন্তঃবিভাগীয় বিরোধ ও প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় সরকারী কাজকর্মের পরিচালনার ক্ষেত্রে অকারণে সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং সামগ্রিক বিচারে প্রশাসনিক শক্তি-সামর্থ্যের অবক্ষয় ঘটে।
(৯) বিচ্ছিন্নতা
আমলারা সাধারণ জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বহির্জগতের সঙ্গে সম্পর্ক রহিত অবস্থায় অবস্থান করেন। সরকারী কাঠামোর মধ্যেই নির্দিষ্ট পন্থা-পদ্ধতি, আচার-আচরণ, বিধি-ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁদের ব্যস্ত থাকতে হয়। এই বিচ্ছিন্নতা আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের সীমাবদ্ধতা হিসাবে প্রতিপন্ন হয়।
(১০) ক্রমস্তরবিন্যস্ত কাঠামো
আমলাতন্ত্রের সাংগঠনিক কাঠামো বহুলাংশে পিরামিডের আকৃতি বিশিষ্ট এবং ক্রমস্তরবিন্যস্ত। নিম্নস্তরে অবস্থিত আমলাদের সঙ্গে জনসংযোগ বর্তমান থাকে। আবার উচ্চপদস্থ আমলাদের সঙ্গে সরকারের রাজনীতিক কর্তাব্যক্তিদের সংযোগ বর্তমান থাকে। জনজীবনের সঙ্গে এঁদের কোন যোগাযোগ থাকে না। এই ক্রমস্তরবিন্যাস আমলাতন্ত্রের আভ্যন্তরীণ সংহতির পরিপন্থী।
(১১) দায়িত্বহীনতা
আমলাদের মধ্যে দায়িত্বহীনতার প্রবণতাও পরিলক্ষিত হয়। সরকারী কাজকর্মের ত্রুটি-বিচ্যুতি দায়-দায়িত্ব থেকে নিজেকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখার জন্য কোন আমলা কোন বিষয়ে সহজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চান না। সরকারী কোন কাজের ব্যর্থতার দায় এক বিভাগের আমলা অন্য বিভাগের আমলার উপর চাপিয়ে নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করেন। এই প্রবণতার ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নৈপুণ্যের অবক্ষয় ঘটে।
(১২) আমলাদের মধ্যে মানসিক অনুভূতির অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাঁরা প্রশাসনের পন্থা-পদ্ধতি, আনুষ্ঠানিক রীতি-নীতি ও বিধি-ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মানুষের অভাব-অভিযোগ ও অনুভূতি সম্পর্কে তাঁরা উদাসীন থাকেন। তার ফলে শাসনব্যবস্থা মানবিকতাবোধ রহিত হয়ে পড়ে।
(১৩) পারকিনসনের মত
পারকিনসন আমলাতন্ত্রের কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর মতানুসারে চূড়ান্ত কেন্দ্রিকতা আমলাতন্ত্রের প্রকৃতি। এর ফলে গণতন্ত্রের বিপদ দেখা দেয়। অকারণ জটিলতা, নিষ্ক্রিয়তা ও অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হল আমলাতন্ত্রের স্বভাবধর্ম। আমলাতন্ত্র অনেক সময় অনড় এবং গতি ও উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে।
(১৪) মার্কসের মতামত
আমলাতন্ত্রের ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রসঙ্গে কার্ল মার্কসের অভিমতও উল্লেখ করা আবশ্যক। Towards a Critique of Hegel’s Philosophy of Right (1843) শীর্ষক রচনাটিতে এ বিষয়ে মার্কসের মতামতের পরিচয় পাওয়া যায়।
- (ক) আমলাতন্ত্র সমাজের প্রাধান্যকারী শ্রেণীর স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে এবং সংশ্লিষ্ট স্বার্থকে আমলাতান্ত্রিক স্বার্থ হিসাবে পরিপোষণ করে। তারফলে সমাজ ও সমাজবাসীদের স্বার্থ ও প্রয়োজন অবহেলিত হয়।
- (খ) আমলাতান্ত্রিক কাঠামো বা সংগঠন হল স্তরবিন্যস্ত। এ হল জ্ঞান ও মর্যাদার স্তরবিন্যাস। উচ্চস্তরে অবস্থিত আমলারা নিম্নস্তরে অবস্থিত আমলাদের নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান দেন। এবং বিপরীতক্রমে নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তরকে সর্বসাধারণের বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে এইভাবে পরস্পর পরস্পরকে প্রতারিত করে থাকে মাত্র। প্রতারণার এই বৃত্ত থেকে কেউই রেহাই পায় না।
- (গ) আমলাতন্ত্র হল রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক শক্তি। এই শক্তি রাষ্ট্রের আধ্যাত্মিকতায় পর্যবসিত হয়। এবং এই আমলাতন্ত্র কার্যত এক কাল্পনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তোলে। তারফলে বাস্তবে রাষ্ট্র অবহেলিত হয়।
- (ঘ) আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যের উপর জোর দেয়। এবং আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক লক্ষ্যকে নিজেদের লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করে। এইভাবে রাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য অবহেলিত হয় এবং প্রকৃত লক্ষ্যের সঙ্গে বিরোধ বাধে।
আমলাতন্ত্রের অস্তিত্ব বিশেষত উদারনীতিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় অপরিহার্য অথচ আমলাতন্ত্রের উপরিউক্ত ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলিকে উপেক্ষা করা যায় না। এই কারণে এই সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি অপসারণের জন্য আমলাতন্ত্রের উপর কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা বলা হয়।