আইন আদালত

এডভোকেট নাকি ব্যারিস্টার?

‘অ্যাডভোকেট’ ও ‘ব্যারিস্টার’-এর মধ্যে পার্থক্য কী?

এডভোকেট ও ব্যাটিস্টার দুটোই সমার্থক অর্থ প্রকাশ করে। বিভিন্ন দেশে আইনজীবীদের বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন – বাংলাদেশে আইনজরবীদের ডাকা হয় ‘এডভোকেট’, যুযক্তরাষ্ট্রে ডাকা হয় ‘আসোসিয়েট’, অস্ট্রেলিয়ায় ডাকা হয় ‘সলিসিটর’ ইত্যাদি দেশ ভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।

প্রশ্ন হলো একজন এডভোকেট এবং একজন ব্যারিস্টার একই পসিশন হোল্ড করে কিনা?

হ্যা, দুটো একই পসিশন হোল্ড করে কিন্তু আইন নিয়ে পড়াশোনা ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে করা হয় বলে এর নামের পার্থক্য দেখা দেয়।

যিনি ‘লন্ডন’ থেকে ব্রিটিশ আইন পড়ে, বিপিটিসি — বার প্রফেশনাল ট্রেইনিং সাটিফিকেট সম্পূর্ণ করে এসেছেন, তার নামের সাথে ব্যারিস্টার টাইটেলটি যুক্ত হয়ে যাবে এবং তিনি নিজেকে ব্যারিস্টার নামে আখ্যায়িত করতে পারবেন।

আর যিনি বাংলাদেশ থেকে, বাংলাদেশি আইন পড়ে, বার কান্সিল এক্সাম সম্পূর্ণ করে লাইসেন্স প্রাপ্ত হন, তাকে বলা হবে ‘এডভোকেট’। তিনি নিজেকে তখন একজন এডভোকেট হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারবেন।

তবে এডভোকেট হোক বা ব্যাটিস্টার, তাদের দক্ষতা, দূরদর্শীত এবং আইনের সাফিশিয়ান্ট জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয় একজন ভালো আইনজীবী।

একজন এডভোকেট একজন ব্যারিস্টারের চাইতে অধিকতর দক্ষ হতে পারে আবার একজন ব্যারিস্টারের একজন এডভোকেটের চাইতে ভালো একজন আইনজীবী হতে পারেন।

দিন শেষে কে কোথা থেকে আইন পড়াশোনা করে এসেছে অথবা তার টাইটেল কি, সেটা মূল্য রাখে না বরং যেটা বিষয় সেটা হলো সেই আইনজীবী তার ক্লায়েন্টের প্রতি কতটা দায়িত্বশীল, আপনার সমস্যাটি শোনার প্রতি কতটা সহনশীল এবং সহানুভূতিশীল, কতটা ধীর্যশীল, সে আমানার সমস্যাটির কতটা ইফেক্টিভ আইনভিত্তিক সলিউশন দিতে পারবে এবং সে যদি আপনাকে মাননীয় বিজ্ঞ আদালতের সামনে রিপ্রেজেন্ট করে তাহলে কতটা ভালোভাবে সে তা করতে পারবে।

See also  আমলাতন্ত্র কাকে বলে, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য এবং আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত

মনে রাখবে, কোর্ট রুমে টাইটেলের ভিত্তিতে নেয় , একজন আইনজীবির দক্ষতা ওপর ভিত্তি করে মাননীয় বিজ্ঞ আদালত রায় দিবেন।

 

উকিল এবং ব্যারিস্টারের মধ্যে অর্থগত পার্থক্য

✔️উকিল অর্থ অক্ষবিদ এবং অপরের প্রতিনিধি, আর

✔️ব্যারিস্টার অর্থ পরামর্শদাতা।

কিন্তু বাস্তবপক্ষে ব্যারিস্টার এবং এডভোকেট দেশ ভেদে ভিন্ন সনদ হলেও তাঁদের কর্মপ্রন্থা একই রকম।

এখন প্রশ্ন থেকে যায়- কিন্তু কেন আমরা ব্যারিস্টার হতে চাই এবং আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি law পাশ করে ব্যারিস্টার হওয়ার গুরুত্বই বা কতটুকু?

ব্যারিস্টার বাংলাদেশের বিচার বিভাগে বিশেষ করে আইনজীবিদের মাঝে এমনকি সর্ব সাধারনের কাছেও এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ন পেশাজীবি হিসাবে বিবেচিত। আমরা ব্যারিস্টার হতে চাই কেন? আমরা যারা law পড়ি বা পড়েছি তাদের সবারই স্বপ্ন ব্যারিস্টার হওয়া।

আমাদের দেশে advocate দের মত যারা UK(যুক্তরাজ্যে) কোর্টে practice করে তাদের দুই ধরণের আইনজীবীদের (ব্যারিস্টার ও সলিসিটর) মধ্যে একটা ধরণ ব্যারিস্টার। ঐ দেশে এই দুই ধরণের প্র্যাকটিসনারদের মধ্যে কর্ম পদ্ধতির পার্থক্য থাকলেও বাংলাদেশে UK এর ব্যারিস্টার আর বাংলাদেশের advocate দের মধ্যে কর্ম পদ্ধতির কোনো পার্থক্য নেই। এদের দুইজনের কাজই same, কোর্টে move করা। শুধু দেশ ভেদে নামটা ভিন্ন থাকে।

See also  ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিচারকের মধ্যে পার্থক্য

গতানুগতিক পদ্ধতিতে ব্যারিস্টার হতে গেলে English law এর উপর bachelor degree নিতে হয় অর্থাৎ LL.B করতে হয় যা এদেশে practice করার ক্ষেত্রে খুব কমই কাজে আসে কারন তাদের law ও আমাদের law এর মধ্যে এখন অনেক পার্থক্য আছে।

এরপর ব্যারিস্টার হতে গেলে BPTC নামক এক বছরের একটা course করতে হয় যেখানে বাংলাদেশের CPC, CRPC এর মতো module পড়ানো হয় অর্থাৎ সে দেশের কোর্টের procedure গুলা শিখানো হয়। এবং এসব শিক্ষা পরবর্তিতে বাংলাদেশে practice করার ক্ষেত্রে কোনো কাজে আসে না। কারন তাদের court procedure ভিন্ন এবং আমাদের দেশের কোর্ট procedure ভিন্ন। বরং আমাদের দেশের law যদি কেউ মনোযোগ দিয়ে পড়ে তাহলে তাদের success পাওয়ার chance অনেক বেশি থাকে।

কোর্টে successful lawyer দের মাঝে কয়জন ব্যারিস্টার আছে আর কয়জন advocate তা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উপর নির্ভর নয়।উপরন্তু ব্যারিস্টার হওয়ার নামে আমরা কোটি কোটি টাকা বিদেশি university গুলোকে দিয়ে আসছি, যা সম্পূর্ন অর্থহীন।

দেশের টাকা বিদেশে পাচার যাতে না হয় তার জন্য অনেক আইন আছে। তাহলে এ degree নেওয়ার জন্য খরচকৃত টাকাগুলো অপচয়ের পর্যায়ের মধ্যে পড়ে না? কারন ব্যারিস্টার হয়ে তো আর তারা UK তে practice করছে না। বেশীর ভাগই বাংলাদেশে এসে practice করেন।

ব্যারিস্টরদের নিয়ে আমাদের দেশে গুরুত্ব দেখালেও পার্শ্ববর্তী ভারতে এ degree আমাদের দেশের মত গুরুত্ব বহন করে না, কারন আমাদের দেশের বর্তমান ব্যারিস্টাররা এবং কিছু interested মহল এটাকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকা income করছে। এই colonial system চলে গেলে তাদের সব business এর ক্ষতি। এজন্য কিছুতেই তারা সত্যকে বাইরে আসতে দিবে না।

See also  আমলাতন্ত্র কাকে বলে, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য এবং আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত

আর BTT (Bar Transfer Test) এর কথা নাইবা বললাম। এটা হল একটা নতুন কৌশল টাকা হাতাবার। শুধু student কাছ থেকে না বরং lawyer দের কাছ থেকেও টাকা হাতাবার নতুন কৌশল হল BTT. এটা নিয়েও already আমাদের দেশে business শুরু হয়ে গেছে।

এতক্ষণ ব্যারিস্টার হওয়া নিয়ে অধিকাংশই নেগেটিভ কথাবার্তা বললাম।কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনায় তো শুধু একতরফা নেগেটিভ দিকগুলো তুলে ধরলে হয়না,পজিটিভ কিছুও তুলে ধরতে হয়।আর জগতের সকল কিছুরই তো ক্রিয়া আর প্রতিক্রিয়া উভয় দিকই থাকে,তাই নয় কি?

ব্যারিস্টার হওয়ার প্রধান সুবিধাসমুহ

১.ব্যারিস্টারদের ফি সাধারণ উকিলদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।যে কারণে তাদের আর্থিক উপার্জনও বেশি হয়।

২.বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো লিগ্যাল এডভাইজর হিসাবে ব্যারিস্টারদের বেশি পছন্দ করে।

৩.প্র্যাকটিক্যালী ব্যারিস্টাররা সাধারণত বিভিন্ন কেসে বিভিন্ন দেশের রেফারেন্স ব্যবহার করে থাকে,যার ফলে কেস জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৪.অন্যদেশের আইন পড়ে ব্যারিস্টার হলেও এদেশের আইন জেনে তাঁকে কোর্ট প্র্যাকটিসে নামতে হয়।

অর্থাৎ আইন পেশায় নিঃসন্দেহে একজন ব্যারিস্টার সমৃদ্ধ জ্ঞানের ভান্ডার নিয়ে পেশা চর্চা করেন।

সবশেষে,আপনি ব্যারিস্টার হোন কিংবা উকিল,আপনার ব্যাক্তিগত দক্ষতার উপরই এই পেশার সাফল্যে নির্ভর করবে।তাই- দক্ষ হোন, পথই আপনাকে খুঁজে নিবে।

 

Back to top button