সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞান নিয়ে কেন পড়বেন : সাবজেক্ট রিভিউ
বাংলাদেশে সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা কেমন হবে?
মানুষ কেন ভালবাসে? সাইকোলজি, একই মানুষ কেন অন্যকে খুন করে? তোমার ছোটবেলা যদি একটার পর একটা মিসির আলি পড়ে কাটে, মিসির আলীর মত জটিল মনস্তত্ব নিয়ে চিন্তা করতে যদি তুমি ভালবাসো তাহলে সাইকোলজি বিষয়টি তোমার জন্য।
সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞান সাবজেক্ট রিভিউ
আসো জেনে নেই এই সাবজেক্ট এর কিছু খুঁটিনাটি বিষয়।
সাইকোলজি কোর্স সাধারণত কত বছরের?
স্নাতক কোর্সটি ৪ বছরের এবং স্নাতকোত্তর ২ বছরের।
এই সাবজেক্টটি বাংলাদেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়?
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোপালগঞ্জ) ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ডিপার্টমেন্টটি রয়েছে।
এই সাবজেক্টে পুরো ৪ বছরে কি কি কোর্স পড়ানো হয়?
৪ বছরের কোর্সে যেসব বিষয় পড়ানো হয়
প্রথম বছরে ৬ টি কোর্সঃ
1. Introduction to Psychology
2. Statistics in Psychology 1
3. Experimental Psychology
4. Bangladesh Studies (EDC)
5. Introduction to Sociology (EDC)
6. Practical (Experimentation)
দ্বিতীয় বছরে রয়েছে ৭ টি কোর্স :
1.Developmental Psychology 1
2.Statistics in Psychology 2
3.Psychological Testing
4.Social Psychology
5. Computers and Data Analysis (EDC)
6. Social Work (EDC)
7. Practical (Experimentation)
৩য় বছরে রয়েছে ৮ টি কোর্স
1.Developmental Psychology 2
2.Statistics in Psychology 3
3.Abnormal Psychology
4.Psychology of Perception
5.Industrial Psychology
6.Research Methodology
7.Biopsychology
8.Practical(Testing)
৪র্থ বছরে রয়েছে ৯ টি কোর্স
1.Positive Psychology
2.Personality Psychology
3.Theories of Learning
4.History and Systems in Psychology
5.Organizational Behavior
6.Counseling Psychology
7.Educational Psychology
8.Cognitive Psychology
9.Practical(Research Project)
এ বিষয়ে পড়াশোনার ধরন কেমন? তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক নাকি উভয়ই?
সাইকোলজি একটি ব্যবহারিক নির্ভর বিষয়। স্নাতক চলাকালীন এমন অনেক ধরনের কোর্স পাওয়া যাবে যেটা প্রাকটিক্যালে আরো ভালোভাবে শেখা যায়। তাই বেশিরভাগ বিষয়ই এখানে হাতে কলমে শিখতে হয় কিন্তু পড়াশোনার পদ্ধতিগত প্রথার জন্য একইসাথে প্রচুর বই পড়ার অভ্যাসও থাকতে হবে।
একজন সদ্য এইচএসসি পাশ শিক্ষার্থী কিভাবে বুঝতে পারবে এ বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে কিনা?
প্রথমত নিজেকে চেনার মাধ্যমে। তারপর তার সাইকোলজি বিষয়ে পড়াশোনা সম্পর্কে, পড়াশোনা শেষে ক্যারিয়ার সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা নেওয়া উচিত। সবকিছু জানার পর যদি মনে হয় আমার এ বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে, এ বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে আমি ভালো করতে পারবো তখনই সে সাইকোলজি বিষয়ে পড়তে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এ বিষয়ে পড়াশোনা করে ভালো করতে হলে এসএসসি অথবা এইচএসসি লেভেলের কোন বিষয়গুলোর উপর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন?
সবার প্রথমে ইংলিশ নিয়ে বেসিক ক্লিয়ার থাকা প্রয়োজন কারণ অনেক শিক্ষার্থী উচ্চতর শিক্ষায় সবকিছু ইংলিশে থাকায় প্রথমদিকে সমস্যা ফেইস করে। এরপরে জেনারেল ম্যাথ ভালোমতো শেখা উচিত, না হলে পরবর্তীতে স্ট্যাটিসটিকস কোর্সগুলোয় সমস্যা হতে পারে। এছাড়া প্রবলেম এনালাইসিস প্র্যাকটিস করা, ক্রিটিক্যাল থিংকিং এবং কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করার দিকে নজর দেয়া উচিত।
এই বিষয়ে পড়াকালীন কি কি এক্সট্রা কারিকুলার আক্টিভিটির সাথে যুক্ত থাকা যায় যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে হেল্প করবে?
সেচ্ছাসেবী হিসেবে বিভিন্ন অরগানাইজেশানে যুক্ত থাকা যা ক্যারিয়ার গঠনে পরবর্তীতে সহায়ক হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় কোনো ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে?
স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টার্নশিপের সু্যোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ আওয়ার নির্দিষ্ট করা থাকে।
সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো কি কি?
এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরির সু্যোগ রয়েছে। এছাড়া ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজের সু্যোগ তো রয়েছেই। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইকোলজিস্টদের কাজের ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজিস্ট হিসেবে যোগদানের সুযোগ রয়েছে।
সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে প্রাইভেট চাকরির ক্ষেত্র গুলো কি কি?
বিভিন্ন ধরনের অরগানাইজেশন কিংবা এনজিওতে সাইকোলজিস্ট হিসেবে যোগদানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া নিজের একটি চেম্বার খুলে, নিজের প্রচেষ্টায় মানুষকে সেবাদান করা যায়। এছাড়াও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যে ধরনের ক্ষেত্রগুলো আছে, একই ধরনের সুযোগ প্রাইভেট সেক্টরেরও রয়েছে।
এ বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হবার সুযোগ কেমন?
শিক্ষক হবার জন্য স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অবশ্যই রেজাল্ট ভালো হতে হবে এবং স্নাতকোত্তর শেষ করতে হবে।
সাইকোলজি নিয়ে চাকরির ক্ষেত্রে স্যালারি রেঞ্জ কি ধরনের হয়?
সরকারী চাকরিতে, প্রতি মাসে প্রায় 35k থেকে বেতন শুরু হয় কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে তা আলাদা হতে পারে। বেসরকারী চাকরিতে, মাসিক প্রায় 43k থেকে বেতন শুরু হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হয়ে মাসে 32.5k এর বেসিক বেতন সচরাচর পাওয়া যায়। এক্সপেরিয়েন্স এবং সময়ের সাথে সাথে এ রেঞ্জ অবশ্যই ভবিষ্যতে বাড়তে থাকে।
সাইকোলজি নিয়ে রিসার্চের কেমন সুযোগ রয়েছে?
বাংলাদেশে গবেষণার সুযোগগুলি এখনও ডেভেলপ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি রিসার্চ পেপার, কম্পিউটার ল্যাব, ইন্টারনেট ইত্যাদির মতো কিছু প্রাথমিক সুবিধা দিয়ে থাকে কিন্তু বাস্তবে, আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলা এখনও একটি ট্যাবু। তাই বাংলাদেশে খুব উন্নত গবেষণার ক্ষেত্র আশা করা অনেকটা দিবাস্বপ্নের মতো। কিন্তু আশা করা যায়, স্বপ্নপূরণের দিনগুলি শীঘ্রই আসবে। বর্তমানে অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে কথা বলার বিষয়টি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই কেউ চাইলেই পজেটিভ দিকে ফোকাস করতে পারে।
এই বিষয় পড়ে বাইরের কোন দেশগুলোয় যাওয়ার সুযোগ বেশি?
বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই সাইকোলজির বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন প্রোগ্রাম অফার করা হয়। কিন্তু আমেরিকা, ইউকে, কানাডা, জার্মানি এ দেশগুলো স্টুডেন্টদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে থাকে। কারণ এ দেশগুলোতে সাইকোলজিকাল ডিগ্রির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা অফার করা হয়।
বাইরে স্কলারশিপ পেতে গেলে কি ধরনের পন্থা অবলম্বন করতে হয়?
স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের রেজাল্ট এবং কিছু এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি থাকলে প্রায়ই ফুল ফ্রি স্কলারশিপ অথবা হাফ ফ্রি স্কলারশিপ পাওয়া যায়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পৃথক স্কলারশিপের ক্রাইটেরিয়া রয়েছে। একজন শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য অবশ্যই তা পূরণ করতে হবে।
সব মিলিয়ে সাইকোলজি একটি চমৎকার বিষয়। স্নাতক শেষ করার পরে কেউ কিছু না করলেও নিজেকে এটলিস্ট একজন উন্নত মানুষ হিসাবে খুঁজে পাবে। এই বিষয়টি তোমাকে কেবল অন্যকে সহায়তা করতে সাহায্য করবে না বরং নিজের পার্সোনাল গ্রোথের জন্য, স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য তোমার সবচেয়ে ভালো সাহচর্য হিসেবে কাজ করবে।
এই সাবজেক্টের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল, মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী লোকদের সহায়তা করার জন্য যা প্রয়োজন তা তোমার নিজেরও প্রয়োজন। তাই তুমি দেখবে “আমার এটা করা উচিত বা নাকি না করা উচিত” এসব বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ থাকবে না। সুতরাং যদি নিজেকে জানতে চাও, চিনতে চাও তাহলে সাইকোলজি বিষয়ে তোমাকে স্বাগতম!