আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International Relation) নিয়ে কেন পড়বেন: সাবজেক্ট রিভিউ
International Relation বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়টা কেমন?
আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থায় আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও চুক্তি, বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান, বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা এই সব জায়গাতে দাপটের সাথে কাজ করে ইত্যাদি বিষয়ে জানতে হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে জানা থাকা প্রয়োজন। আই আর (IR), ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস (International Relations) নামেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় পরিচিত।
IR বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সাবজেক্ট রিভিউ
অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্সের সময়কাল:
৪ বছরকালীন অনার্স এবং ১ বছরের মাস্টার্স। মোট ৫ বছর।
পড়ালেখার ধরণ
কূটনীতি বিষয়ক শিক্ষা হলেও মূলত বিশ্ব-রাজনীতি এবং ওয়ার্ল্ড অর্ডার বা বিশ্ব ব্যবস্থা এই বিভাগের মূল পাঠ্য। ৫ বছরের সিলেবাসের বিশাল একটি অংশ জুড়ে রয়েছে রাজনৈতিক ইতিহাস। রাষ্ট্রগঠনের ইতিহাস থেকে শুরু করে দুটি বিশ্বযুদ্ধ, কোল্ড ওয়ার, ৯০ পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা ইত্যাদি অনেক বিষয় পড়ানো হয়ে থাকে। শিক্ষকরা আন্তরিক এবং ক্লাসগুলোও বেশ উপভোগ্য হয়ে থাকে। আইয়ারের থিওরিগুলো সহ বেশ কিছু তাত্ত্বিক কোর্সও রয়েছে। এছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতির মত সামাজিক অনুষদের অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও কোর্স রয়েছে। আইআরের অন্যতম একটি সুবিধা হচ্ছে এই বিভাগে ইংরেজির বাইরে অন্য আর একটি বিদেশী ভাষা শিখতে হয় দ্বিতীয় বর্ষে (ফ্রেঞ্চ অথবা জাপানিজ)।
তবে বিশ্ব রাজনীতি কিংবা ডিপ্লোমেসি নিয়ে আগ্রহ না থাকলে ৪-৫ বছরের পরাশুনা কিছুটা বোঝা মনে হতে পারে। আর একটি বিষয় হচ্ছে, এই বিষয়ের প্রায় সব বই এবং উপকরণ ইংরেজি ভাষায় লেখা। তাই ইংরেজিতে মোটামুটি দক্ষতা না থাকলেও কিছুটা বেগ পেতে হবে। আর বিশ্বরাজনীতিতে ঘটে যাওয়া প্রতিদিনের ঘটনার সাথেও আপডেটেড থাকতে হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে দেশে চাকুরী এবং গবেক্ষণা ক্ষেত্র
আইআরের ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বিসিএস। কথিত আছে, পররাষ্ট্র ক্যাডার বাছাইয়ে আইআরের ছাত্রদের প্রাধান্য দেওয়া হয়, যদিও বিগত কয়েক বছরে তার প্রমাণ খুব একটা মিলছে না। তবে বিসিএসে আইআরের ছাত্ররা ভাল করে তাদের পরাশুনার ধরণ এবং বিষয়াদির জন্য।
এর বাইরে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এনজিও এবং গবেষণা সংস্থায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে পলিসি লেভের বেশ কিছু সরকারী-বেসরকারী সংস্থায় চাকরি করতে পারবে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অনেক উন্নয়ন সংস্থায় আইআরের ছাত্ররা কর্মরত রয়েছে। এছাড়া দেশে অবস্থিত বাহিরের দেশের দূতাবাস এবং হাই কমিশনগুলোতেও চাকরি মেলে এই বিভাগের ছাত্রদের।
ব্যাংক, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র এবং মিডিয়াগুলোতেও অনেকে ক্যারিয়ার গড়ে এই বিভাগে পরাশুনা করে। মোট কথা, এই বিভাগ থেকে পাশ করে প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই ফ্লারিশ করার সুযোগ রয়েছে।
উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ গমনের হার
বিজ্ঞান অনুষদের মত আইআরের ছাত্রদের মধ্যে বাইরে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার প্রবণতা তেমন একটা নেই। তবে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। প্রতি বছরই অনেকে দেশের বাইরে যাচ্ছে। অনেকে ফুলব্রাইট, কমনওয়েলথ, ইরাসমাসের মত প্রেস্টিজিয়াস স্কলারশিপও অর্জন করে এই বিভাগ থেকে। তবে সবাই যে ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কিংবা আইআরেই পড়াশুনা করে তা না। অনেকে এই বিষয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স কমপ্লিট করে ডেভেলাপমেন্ট স্টাডিজ, অর্থনীতি, গভারনেন্স, পাবলিক পলিসির মত বিষয়েও উচ্চতর ডিগ্রি নেয় দেশের বাইরে।
পাশ করতে সময় কত লাগে? সেশনজ্যাম কতটুকু?
একদম ৪ বছরে অনার্স এবং ১ বছরে মাস্টার্স শেষ হয়। সেশনজ্যাম বলতে কিছু নেই। তবে রেজাল্ট পেতে মার্চ মাস গরিয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পরীক্ষার ফ্রিকুয়েন্সি
বছরে দুটি সেমিস্টার ফাইনাল হয়। একটি মে-জুনের দিকে, আর একটি নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে। এছাড়া মিড পরিক্ষা আর ইনকোর্স সেমিস্টারের মধ্যে হতেই থাকে। তবে, সামাজিক বিজ্ঞানের অন্য কয়েকটি বিভাগের মত কোন মিডউইক থাকে না। এক এক কোর্সের মিড এক এক সময় অনুষ্ঠিত হয়।
সপ্তাহে কয় ঘন্টা ক্লাস? কয় ঘন্টা ল্যাব? ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ কেমন?
প্রতি সপ্তাহে দেড় ঘণ্টা করে ৮টা ক্লাস। মোট ১২ ঘণ্টা ক্লাস হয়। ঐভাবে কোন ল্যাব নেই। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার ল্যাব এবং সেমিনার লাইব্রেরির ব্যবস্থা আছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কতজন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হয় প্রতি বছর?
৯০ জনের মত।
পার্টটাইম কাজ করার মতন ফিল্ড আছে কি?
প্রচুর রয়েছে। ক্লাস কিংবা পড়াশুনার প্রেশার খুব বেশি রয়েছে, তেমন না। অনেকেই পড়াশুনার বাইরে শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, গবেষণার কাজকর্ম করে। পড়াশুনার সাথে সাথে ছোটখাটো কাজ করার ব্যাপারে শিক্ষকরাও উৎসাহ প্রদান করে থাকে।
ক্লাব এক্টিভিটিজে সময় দিতে গেলে পড়ালেখা কতটুকু করতে পারবো?
দুটো একসাথে চালানো কোন ব্যাপার না। ক্লাবে টাইম দিয়ে নিজের পড়াশুনা সঠিকভাবে করাটা কখনোই চ্যালেঞ্জ না। তবে পড়াশুনাকেই সবসময় প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ ক্লাবের কাজের মধ্যেও।
এই বিষয়ে পড়ে অনুষদের অন্য কোন বিষয়ে মাস্টার্স করতে পারবো কী?
এই উত্তর উপরেই দেওয়া আছে। অবশ্যই পারবেন।
ইয়ার সিস্টেম নাকি সেমিস্টার সিস্টেম? এটা ভাল নাকি মন্দ?
সেমিস্টার সিস্টেম। ভাল-মন্দ দুইদিকই আছে। ভাল দিক হচ্ছে রেগুলারিটি থাকে যেহেতু ছয় মাস পর পরই ফাইনাল হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরাও ফোকাসড থাকে। মন্দ দিক বলতে বিভিন্ন কোর্স রয়েছে যেগুলো চার-পাঁচ মাসের ক্লাসে পুরোটা কাভার করা একটু কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এক বছর হলে আরও গভীরভাবে পড়াশুনার সুযোগ থাকে।