নৌ বীমা কাকে বলে এবং নৌ-বীমার শ্রেণীবিন্যাস ও আওতা
নৌ বীমা Marine Insurance কি এবং নৌ বীমার প্রকারভেদ ও আওতা
নৌ বিমা(marine insurance) কাকে বলে?
নৌ- পথে চলাচলকারী জাহাজ, জাহাজের পণ্য, জাহাজ ভাড়া সংক্রান্ত ঝুকির বিপক্ষে যে বিমাচুক্তি করা হয় তাকে নৌ বিমা বলা হয়। নৌ-বিমার মাধ্যমে বিমা ব্যবসায়ের যাত্রা শুরু হয়।
নৌ-বিমার ক্ষেত্রে “এডওয়ার্ড লয়েডস” এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি লন্ডনে কফিখানা পরিচালনা করতেন। ‘
Association of Lloyd’s’ বা ‘The corporation of Lloyd’s’ হচ্ছে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বিমা কোম্পানী বা নৌ-বিমা কোম্পানী।
নৌ-বিমার প্রকারভেদ
বিষয়বস্তু অনুযায়ী নৌ-বিমাকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়।
১। জাহাজ বিমা: জাহাজের নামে জাহাজ কর্তৃপক্ষ বিমা করলে তাকে জাহাজ বিমা বলা হয়। জাহাজের কোন ক্ষতি হলে বিমা কোম্পানি তা পূরণ করে দেয়।
২। পণ্য বিমা: জাহাজস্থিত পণ্যের জন্য পণ্যের মালিক যে বিমাচুক্তি সম্পাদন করে তাকে পণ্য বিমা বলা হয়।
৩। মাশুল বা জাহাজ ভাড়া বিমা: পণ্যের মালিক জাহাজ কর্তৃপক্ষ কে পণ্য অক্ষত অবস্থায় পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে ভাড়া প্রদান করে থাকে। পণ্য সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে না পারলে পণ্যের মালিক উপযুক্ত ভাড়া দিতে চায় না। তাই ভাড়াপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তার জন্য জাহাজ কর্তৃপক্ষ যে বিমাচুক্তি করে তাকে মাশুল বা ভারা বিমা বলা হয়।
৪। নৌ-দায় বিমা: জাহাজ কর্তৃপক্ষের সৃষ্ট দায় প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বিমা কোমপানি গ্রহন করলে তাকে নৌ-দায় বিমা বলা হয়। জাহাজের কোন শ্রমিক দ্বারা পণ্যের কোন ক্ষতি হলে, জাহাজের কোন শ্রমিকের কোন ক্ষতি হলে অথবা জাহাজের ধাক্কায় অন্য কোন জাহাজ বা কার ও ক্ষতি হলে এ দায় জাহাজ কোম্পানীর। তবে নৌ দায় বিমা করা বিমা কোমপানি ক্ষতিপূরণ করে দেয়।
নৌ বীমার কেন প্রয়োজন?
ভূমিকা ফিরিঙ্গী জলদস্যুদের লুটতরাজের ইতিহাস এ দেশের মানুষের অজানা নয়। জল দস্যুদের উৎপাত কমে গেলেও নৌ-পথে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ কমেনি বরং বেড়েই চলছে। বর্তমানেও সমুদ্রপথে সওদাগরী নৌ-যান চলাকালীন সময়ে প্রবল ঝড়ঝঞা, তরঙ্গ, জলদস্যুর আক্রমণ ইত্যাদি নানা বিপদ-বিপত্তির কারণে বিপুল ক্ষতি হতে পারে। যে কোন সময় পণ্য বােঝাই জাহাজ নাবিকসহ সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারে। এজন্যেই আধুনিক কালে নৌ-বীমার ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পরেছে। এই ব্লগে থেকে আপনি নৌ বীমার নানাবিধ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে আসুন আমরা এটা পড়ি এবং বিষয়গুলাে জেনে নিই।
বিমাবিষয়ক স্বনামধন্য লেখক অধ্যাপক এম. এন. মিশ্র (M. N. Mishra) বলেন,
নৌবিমা চুক্তি বিমাকারী ও বিমাগ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত এমন এক প্রকার চুক্তি যার মাধ্যমে সমুদ্রগামী জাহাজ এবং এর সাথে সম্পর্কযুক্ত স্বার্থের কোনো ক্ষতির জন্য বিমাকারী চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করে।”
নৌ বীমা এক ধরনের সম্পত্তি বীমা (Property Insurance)
অগ্নিবীমার ইউনিটে আমরা জেনেছি সম্পত্তি বীমার ধরন এবং প্রয়ােজনীয় শর্তাবলী। এ পাঠে আমরা নৌ-বীমার ধারণা ও এর প্রকাভেদ সম্পর্কে জানব। নৌ-বীমাপত্র সামুদ্রিক কারনে ক্ষতির বিপরীতে যে বীমা করা হয় তা নৌ বীমা। তরে, সমুদ্র পথে পরিবহণের পণ্য যদি সমুদ্র পর্যন্ত আনতে অভ্যন্তরীণ নৌপথ বা স্থলপথে বহণ করে নিয়ে আসতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট স্থলপথও নৌ বীমাপত্রের আওতাভুক্ত হবে। এবার আসুন আমরা বীমা আইনে নৌ-বীমার কী ধরনের সংজ্ঞা দিয়েছে তা নিয়ে আলােকপাত করি।
১৯০৬ সালের বৃটিশ বীমা আইন (The British Insurance Act.1906) অনুযায়ী “A Contract of Marine Insurance is a contract whereby the insurer undertakes to indemnify the assured, in manner and to the extent there by agreed, against marine losses, that is to say the losses incident to marine adventure. (et – বীমা একটি চুক্তি যেখানে বীমাকারী বীমাগ্রহীতাকে নৌ-পথে ক্ষতির বিপরীতে নির্ধারিত পন্থায় ও নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দায় গ্রহণ করে।
ঘােষ ও আগরওয়ালা বীমা বিষয়ে খুৰ স্বনামধন্য লেখক। তাঁদের মতে নৌ বীমা হল “A contract of marine insurance is a contract of indemnity where by the insurer undertakes to indemnity the insured in a manner and to the extent there by agreed against the loss caused in connection with a marine adventure.” Grete (CI
বীমা ক্ষতিপূরণের চুক্তি যার দ্বারা কোন সমুদ্র অভিযানজনিত ক্ষতির বিপরীতে বীমাকারী বীমাগ্রহীতাকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এবং নির্দিষ্ট সীমাপর্যন্ত ক্ষতিপুরণের দায় গ্রহণ করে)। সুতরাং আমরা দেখতে পাই যে, এদের দেখা নৌ-বীমা সংজ্ঞাটি মূলত: বীমা আইনের চুক্তির সাথে সমতাপূর্ণ। এবার আসুন আমরা অন্য একজন লেখকের নৌ-বীমার ধারণা সম্পর্কে জেনে নিই।
Halsbury -র মতে যে চুক্তির মাধ্যমে বীমাকরী বীমাগ্রহীতাকে নির্ধারিত পদ্ধতি ও সীমা পর্যন্ত সামুদ্রিক যাবতীয় ক্ষতিপূরণ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে তাকে নৌ-বীমা চুক্তি বলে। এ ছাড়া এম, এন মিশ্র বলেন “Marine Insurance Contract is a contract between insurer and insured where by the insurer undertakes to indemnify the insured in a manner and to the interest there by agreed against marine adventure”
এবার আসুন আমরা ভারতীয় আইনে নৌ-বীমার নিয়ে কী বর্ণনা দিয়ে তা জেনে নিই।
১৯৩৮ সালের ভারতীয় বীমা অনুযায়ী ২(১৩-ক) ধারা মােতাবেক “Marine Insurance business means the business of effecting contracts of insurance upon vessels of any description, including cargoes, freights and other interests which may be legally insured in or in relation to such vessels cargoes and freights, goods wares merchandise and property of whatever or not including warehouse risks or similar risks in addition or as incidental to such transit and includes any other risks customarily included among the risks insured against in marine insurance policies”, এবার জানা হল নৌবীমার সংজ্ঞা। তবে এ নৌ-বীমা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তাহলে আসুন সেগুলাে জানার চেষ্টা করি।
নৌ বীমার শ্রেণীবিন্যাস Classification of Marine Insurance
১। জাহাজ বীমা (Hul Insurance)
বাণিজ্য তরী অর্থাৎ জাহাজের উপকরণাদির সম্ভাব্য ক্ষতির বিপরীতে যে বীমা করা হয়, তাকে জাহাজ বীমা বলে।
২। পণ্য বীমা (Cargo Insurance)
বাণিজ্যিক জাহাজে পরিবহনকৃত পণ্যসমগ্রী সংক্রান্ত ক্ষতির অনিশ্চয়তার বিপরীতে যে বীমা করা হয় তাকে পণ্য বীমা বলে।
৩। মাসুল বীমা (Freight Insurance)
সামুদ্রিক বিপদে জাহজের পণ্যসামগ্রীর ক্ষতি হলে বা সমুদ্রে পণ্য ফেলে দিলে তার মাসুল পাওয়া যায় না। এই মাসুলের ক্ষতির বিপরীতে যে বীমা করা হয় তাকে মাসুল বীমা বলা হয়। উল্লেখ্য যে, সমুদ্র পথে ঝড়ের তান্ডব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেক সময় জাহাজের পণ্য সমুদ্রে ফেলে দিতে হয়। এ ধরনের বিষয়ের জন্যও বীমা করা হয়।
৪। দায়-বীমা (Liability Insurance)
নৌ-বীমার ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ক্ষতির বিপরীতে যে বীমা করা হয় তাকে দায় বীমা বলা হয়। যেমনঃ সমুদ্র যাত্রাকালীন সময়ে নিয়ম-কানুনের পরিবর্তন হতে পারে। এতে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। এধরনের কোন ক্ষতির বিপরীতে যে বীমা করা হয় তাকে নৌ-বীমার ক্ষেত্রে দায়বীমা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
নৌবিমা পত্রের শ্রেণিবিভাগ
বিমাগ্রহীতার সুবিধার কথা বিবেচনা করে বর্তমানকালে বিমা কোম্পানিগুলু বিভিন্ন ধরনের বিমাপত্র ইস্যু করে থাকে:-
১. মূল্যায়িত বিমা:- যে বিমাপত্রে বিষয়বস্তু অর্থাৎ বিমাক্রিত সম্পদের মুল্য উভয় পক্ষের সম্মতিতে নির্ধারণ করে বিমাচুক্তি সম্পাদন করা হয় তাকে মূল্যায়িত বিমাপত্র বলা। এ ক্ষেত্রে ক্ষতি হওয়ার পূর্বে বিষয়বস্তুর মূল্য নির্ধারণ করা হয় এবং ঐ মূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপুরণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাজারমূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ করা হয় না। সাধারণত; ছবি, পেইন্টিংস,মূল্যবান শিল্পকর্ম ইত্যাদির জন্য মুল্যায়িত বিমা পত্র গ্রহণ করা হয়।
২. অমুল্যায়িত বিমাপত্র:- যে বিমাপত্রে বিষয়বস্তুর মূল্য নিরধারণ না করেই বিমাচুক্তি সম্পাদন করা হয় তাকে অমুল্যায়িত বিমাপত্র বলে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতি হওয়ার পর সম্পত্তির মুল্য নির্ধারণ করে তখনকার বাজারমূল্য অনুযায়ি ক্ষতিপূরণ করা হয়। সাধারণত যে সকল সম্পদের বাজারমূল্য সহজে নির্ধারণ করা যায় ঐ ধরণের সম্পদের জন্যে মূল্যায়িত বিমাপত্র গ্রহণ করা হয়।
৩.যাত্রা বিমাপত্র:- যে বিমাপত্রে যাত্রাপথের উল্লেখ থাকে তাকে যাত্রাবিমাপত্র বলা হয়। এ ক্ষেত্রে সময়ের উল্লেখ থাকবে না। যেমন:- ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজ ব্যাংকক যাবে’ —-এটি যাত্রাবিমাপত্রের মধ্যে পড়বে।
৪.সময় বিমাপত্র:- যে বিমাপত্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নৌ-বিমা করা হয় তাকে সময় বিমাপত্র বলা হয়। এ ক্ষেত্রে যাত্রাপথের উল্লেখ থাকবে না। যেমন:- আগামি ৬ মাসের জন্য নৌ-বিমা করা হলো/৩১ শে জানুয়ারি ২০১৬ হতে ৩১ শে জানুয়ারি ২০১৭ ইং তারিখ পর্যন্ত সময়ের জন্য বিমা করা হলো।
৫.মিশ্র বিমাপত্র: যে বিমাপত্রে নির্দিষ্ট যাত্রাপথের উল্লেখের পাশাপাশি সময়ের বা তারিখের ও উল্লেখ থাকে তাকে মিশ্রবিমাপত্র বলা হয়। যেমন:- জাহাজ আগামি ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে ব্যাংকক গিয়ে পৌঁছাবে।
৬.বৃহৎ ঝুকির বিমাপত্র :- দুই বা ততোধিক বিমা কোম্পানী মিলে কোন বিষয়বস্তুর বিমা করলে তাকে বৃহৎ ঝুকির বিমাপত্র বলা হয়।
৭.বন্দর ঝুকির বিমাপত্র: বন্দর কর্তৃপক্ষ বনদরের সম্পদ যেমন- লাইটার জাহাজ, বার্জ,বন্দরে অবস্থানরত জাহাজের পণ্যের ক্ষতিপূরণের জন্য যে বিমাপত্র গ্রহণ করে তাকে বন্দরঝুকি বিমাপত্র বলে।
৮. ভাসমান বা ছাউনি বিমাপত্র:- একটি বিমাপত্রের অধীনে একই মালিকের আকাধিক জাহাজ বা সম্পদের বিমা করা হলে তাকে ভাসমান বা ছাউনি বিমাপত্র। উদ্দিপকে একাধিক জাহাজ বা সম্পদের বিমা করার কথা থাকলে বুঝতে হবে তা ছাউনি বিমাপত্র।
৯. খোলা প্রতিরক্ষা বা উন্মুক্ত বিমা:- বার বার বিমাপত্র খুলার ঝামেলা এড়ানোর জন্য একবারে এক বছরের জন্য উন্মুক্ত বা খোলা প্রতিরক্ষা বিমাপত্র গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
নৌ বীমার আওতা Scope of Marine Insurance
শুধু নৌ-পথে সম্পদ-সম্পত্তি সম্ভাব্য ক্ষতির বিপরীতে যে বীমা করা হয়, তাকে নেী-বীমা বলা হয় না; অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ এমনকি, স্থলপথও নৌবীমার আওতায় আসতে পরে। সমুদ্র পথে পরিবহনের জন্য জাহাজে পণ্য বােঝাই করার উদ্দেশ্যে আভ্যন্তরীণ নৌ-পথে তা বহন করার প্রয়ােজন হতে পারে; পথে যে কোনস্থানে কোন কারণে পণ্যসামগ্রী কোথাও কোন গুদামে সাময়িকভাবে মজুত করতে হতে পারে। সুতরাং, উক্ত পথে ও স্থানে পণ্য রাখা ও বহন করার ঝুঁকিও সামুদ্রিক বীমার আওতায় অন্তভুক্ত হবে। সুতরাং সমুদ্রপথে পরিবহনের উদ্দেশ্যে গােদাম থেকে মূল গন্তব্যে পৌছানাে পর্যন্ত সকল বীমাই নৌ-বীমার আওতাভুক্ত হবে।
সামুদ্রিক বিপদ কি?
নৌ-পথে চলাচলের সময় জাহাজ যে সকল বিপদের সম্মুখীন হয় তাকে সামুদ্রিক বিপদ বলা হয়।
সামুদ্রিক বিপদ দুই প্রকার
- প্রাকৃতিক বিপদ
- অপ্রাকৃতিক/নৈতিক/মনুষ্যসৃষ্ট বিপদ
১.প্রাকৃতিক বিপদ: প্রাকৃতিক কারণে কোন বিপর্যয় দেখা দিলে তাকে প্রাকৃতিক বিপদ বলা হয়।যেমন: সামুদ্রিক ঝড়, নিমজ্জিত পাহাড় বা বরফ খন্ডের সাথে ধাক্কা ইত্যাদি।
২.অপ্রাকৃতিক/নৈতিক/মনুষ্যসৃষ্ট বিপদ: প্রাকৃতিক কারণ ব্যতীত মানুষের দ্বারা বা অন্য কোন কারণে বিপদ সৃষ্টি হলে তাকে নৈতিক বিপদ বলা হয়। যেমন: জলদস্যুর আক্রমণ, পণ্য নিক্ষেপণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি।
সামুদ্রিক ক্ষতি কি?
সামুদ্রিক পিবদের কারণে যে পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে থাকে তাকে সামুদ্রিক ক্ষতি বলা হয়।
সামুদ্রিক ক্ষতি মূলত দুই প্রকার:
- সামগ্রিক ক্ষতি
- উদ্ধারযোগ্য সামগ্রিক ক্ষতি
১. সামগ্রিক ক্ষতি: বিমাকৃত সম্পদ বা বিষয়বস্তু সমপূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা নষ্ট হলে তাকে সামগ্রিক ক্ষতি বলা হয়।যদি এমনভাবে নষ্ট হয় যে তা আর উদ্ধারকরা সম্ভব না তাহলে তা হবে প্রকৃত সামগ্রিক ক্ষতি।
২. উদ্ধারযোগ্য সামগ্রিক ক্ষতি: আর যদি উদ্ধার করা সম্ভব হয় কিন্তু উদ্ধারখরচ অনেক বেশি হওয়ায় উদ্ধার করা হয় নি তাহলে তা হবে উদ্ধারযোগ্য সামগ্রিক ক্ষতি।
আংশিক ক্ষতি কি?
বিমাকৃত সম্পদ বা বিষয়বস্তু আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে আংশিক ক্ষতি বলা হয়।
আংশিক ক্ষতি দুই প্রকার:
- সাধারণ আংশিক ক্ষতি
- বিশেষ আংশিক ক্ষতি
সাধারণ আংশিক ক্ষতি: সকল পক্ষকে রক্ষা করার জন্য স্বেচ্ছায় যে ত্যাগ স্বীকার করা হয় তাকে সাধারণ আংশিক ক্ষতি বলা হয়। মূলত জাহাজকে বাচানোর লক্ষে সাধারণ ক্ষতির সৃষ্টি হয়ে থাকে।যেমন:গচ্চা, ত্যাগ স্বীকার ইত্যাদি।
বিশেষ আংশিক ক্ষতি:– অনিচ্ছাকৃতভাবে বা প্রাকৃতিক কারণে জাহাজের কোন অংশের ক্ষতি হলে, পণ্যের বা ভাড়ার কোন ক্ষতি হলে তাকে বিশেষ আংশিক ক্ষতি বলা হয়। এ ক্ষেত্রে কার ও হাত থাকে না।
জেটিসন বা পণ্য নিক্ষেপন কাকে বলে?
জাহাজ এবং জাহাজের পণ্যকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বা বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় কিছু পণ্য ফেলে দেওয়াকে পণ্য নিক্ষেপন বলা হয়। এর ফলে জাহাজ হাল্কা হয়। এ ক্ষেত্রে যার পণ্য ফেলে দেওয়া হয়েছে তাকে অন্য পক্ষ মিলে আনুপাতিকহারে ক্ষতিপূরণ করে দিবে। এরূপ ঝুকি বিমা করা থাকলে বিমা কোম্পানীর নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।
নৌ-বিমা কিভাবে অদৃশ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করে?
সাধারণত সেবা প্রদানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হলে তাকে অদৃশ্য রপ্তানি বলা হয়। নৌ-বিমায় পণ্য বিমা করে জাহাজের মাধ্যমে আমদানিকারকের নিকট পাঠানো হয়। আমদানিকারকের নিকট থেকে পণ্যের মূল্য এবং বিমা খরচ আদায় করা হয়ে থাকে। পন্যের মূল্য বাবদ যে পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয় তা হচ্ছে দৃশ্যমান রপ্তানি আর বিমা খরচ বাবদ যে পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয় তা হচ্ছে অদৃশ্যমান রপ্তানি।
নৌ বিমা নিয়ে মনে রাখা প্রয়োজন
১.জেটিসন =ত্যাগস্বীকার অর্থাৎ জেটিসন আর ত্যাগস্বীকার এক ই বিষয়। যদি প্রশ্নে কোন ধরনের বিপদ জানতে চায় তাহলে হবে জেটিসন আর কোন ধরনের ক্ষতি চাইলে হবে ত্যাগস্বীকার।
২.বিমাকোম্পানির নিকট তথ্য গোপণ করলে সদ-বিশাসের নিতি ভংগ হয় এ জন্য বিমা কোম্পানি ক্ষতি পূরণ করবে না।
৩.যে বিষয়ের উপর বিমা করা হয়েছে তার ক্ষতিপুরন দাবি করা আইন-সম্মত কিন্তু অন্য কোন বিষয়বস্তুর ক্ষতিপুরন দাবি করলে বিমাযোগ্য সার্থের বিরুদ্ধ এ যাবে।
৪.যে কারণে ক্ষতি হলে বিমা কোম্পানি ক্ষতিপুরণ করবে সরাসরি ঐ কারণে ক্ষতি না হলে বিমা কোম্পানি তা পূরণ করবে না। যেমন- ঝড়ে পণ্যের ক্ষতি হলে পূরণ করা হবে। দেখা গেলো সমুদ্রে ঝড় উঠেছে কিন্তু ঝড়ে পণ্যের কোন ক্ষতি হয় নাই, জাহাজটি চরে আটকে যায় এবং সেখানে আটকে থাকার কারণে কমলালেবু ছিল যা পচে যায়। এ ক্ষেত্রে বিমাকোম্পানি ক্ষতিপূরণ করবে না।
৫.বিমা “গ্রহিতা যদি নিজে ” তার সসম্পদ একাধিক বিমা কোম্পানির ণিকট বিমা করে তা হবে দৈত বিমা কিন্তু বিমাকৃত বিষয়বস্তু যদি “বিমাকোম্পানি ” পুনরায় অন্য বিমা কোম্পানীর নিকট বিমা করে তাহলে হবে পুনর্বিমা। এক্ষেত্রে ক্ষতি হলে সব কোম্পানি মিলে আনুপাতিকহারে ক্ষতিপুরন করবে। যদি একটি কোম্পানি একাই ক্ষতিপুরণ করে দেয় পরে সে অন্য কোম্পানির নিকট থেকে বাকিটাকা আদায় করে নিবে।
৬.সমুদ্রযাত্রার তারিখ, গন্তব্যস্থান ও পৌঁছানোর তারিখ,বিমাকৃত সম্পদের বৈধতা, নৌ-পথ ও জাতীয়তার ঘোষণা, রক্ষীবহর সাথে রাখা হচ্ছে নৌ-বিমার ব্যক্ত শর্ত কারণ এগুলো চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে।
৭.জাহাজের চলাচলযোগ্যতা,যাত্রাপথ পরিবর্তন না করা, যাএার বৈধতা,নির্দিষট সময়ে যাত্রা শুরু করা,হচ্ছে অব্যক্ত শর্ত কারণ এগুলো লিখা থাকে না কিন্তু পালন করতে হয়। ব্যক্ত বা অব্যক্ত যে কোন শর্ত ভংগ হলে বিমা কোম্পানি ক্ষতিপুরন করবে না।