ব্যাংকিং ও বীমা

ইন্সুরেন্স বা বীমা সম্পর্কে বিস্তারিত

Table of Contents

ইন্সুরেন্স বা বীমা কাকে বলে?

মানব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাকে হ্রাস বা লাভ করার জন্যই ইন্সুরেন্স বা বীমা ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। আধুনিক বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতের ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাকে মােকাবেলা করা এক যুগােপযােগী ও কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন লেখক ও বীমা বিশেষত্ব বিভিন্ন সময়ে বীমার বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

 

নিম্নে এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলাে:

অধ্যাপক L.M. Taylor- এর মতে, “বীমা চুক্তি হলাে প্রিমিয়াম পরিশােধের প্রতিদানে একপক্ষ অপর পক্ষের সম্ভাব্য ক্ষতির ঝুঁকি গ্রহণের সম্মতি।”

মার্গারের মতে, “বীমা বলতে কোন সম্প্রদায় বা গােষ্ঠির সম্মতি বা চুক্তিকে বুঝায় যার দ্বারা সাধারণ ভাবে ঐ সম্প্রদায়ের প্রতিটি সদস্যের কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়।”

মার্ক গ্ৰীনি নিম্ন লিখিত ভাবে বীমার সংজ্ঞা প্রদান করেন: “বীমা হলাে এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়কে একই ব্যবস্থাপনাধীনে একটা বৃহক্সপে বিন্যস্ত করার মাধ্যমে একটা ক্ষুদ্র পরিসরে প্রধানত মাত্রা সাপেক্ষে সমাজের সার্বিক ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করে।”

 

অধ্যাপক মিশ্র বীমাকে নিম্নোক্ত দু’টি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন-

  1. কার্যকরী বা Functional সংজ্ঞা ও বীমা বলতে এমন এক সমবায় মূলক কৌশলকে বুঝায় যার মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট ঝুঁকির ফলে সৃষ্ট ক্ষতিকে এমন সব ব্যক্তি বর্গের মধ্যে বন্টন করা হয়, যারা উক্ত ক্ষতির কারণে সরাসরি প্রভাবিত হয় এবং যারা উক্ত ঝুঁকির বিরুদ্ধে নিজেদের নিরাপত্তা বিধানে সম্মত হয়।
  2. চুক্তিগত সংজ্ঞা ও বীমা হলাে এমন এক চুক্তি যাতে কোন নির্দিষ্ট দৈব দূর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট ঝুঁকির জন্য বীমা গ্রহীতাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রিমিয়াম হিসেবে পরিশােধের বিনিময়ে বীমাকারী বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশােধের নিশ্চয়তা দেয়।

উপরােউক্ত সংজ্ঞা সমূহের আলােকে আমরা বলতে পারি যে বীমা হলাে দুটি পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি যার এক পক্ষ তার সম্ভাব্য ঝুঁকি পুষিয়ে চলার জন্য অন্য পক্ষকে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশােধ করে এবং অপর পক্ষ উক্ত অর্থের বিনিময়ে তার ঝুঁকি গ্রহণ করে।

 

ইন্সুরেন্স বা বীমার বৈশিষ্ট্য কি কি?

আমরা যদি বীমার সংজ্ঞাগুলাে পর্যালােচনা করি তবে বীমার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখতে পাব।

বীমার মধ্যে যে সকল বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলাে :

 

১. একাধিক পক্ষ

বীমা চুক্তিতে অন্ততঃ দুটি পক্ষ থাকে। যথাঃ বীমা গ্রহীতাও বীমাকারী। যে অর্থের বিনিময়ে অন্যের কাছে ঝুঁকি ছড়িয়ে দেয় সে বীমা গ্রহীতা। আর যে পক্ষ অর্থের বিনিময়ে অন্যের ঝুঁকি গ্রহণ করে তাকে বীমাকারী বলে।

 

২. নিশ্চয়তা প্রদান

মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনিশ্চয়তা বিরাজমান। বীমা এ অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করে চুক্তির উপর নির্ভর করে।

 

৩. ঝুঁকির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা

See also  ব্যাংকার হওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা

বীমার উৎপত্তিই ঝুঁকিকে মােকাবেলা করার জন্য ঝুঁকিকে ভাগ করে দিয়ে হ্রাস করা।

 

৪. বীমা সরল বিশ্বাসের চুক্তি

বীমার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই সরল বিশ্বাসে সকল গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য খুলে বলবে। কোন তথ্য গোপন করা যাবে না।

 

৫. বীমা ক্ষতি পূরণের চুক্তি

বীমার মাধ্যমে যতটুকু ক্ষতি হবে ততটুকু ক্ষতি পূরণ করা হবে। কোন লাভ করতে দেয়া হবে না।

 

৬. সমবায় পন্থা

বীমার জন্মই সমবায় নীতির উপর। আজও সে নীতির উপরই বীমা ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।

 

৭. ঝুঁকি বন্টন

একজন বীমাকারী অন্যের ঝুঁকি গ্রহণ করে। যার কোন আর্থিক ক্ষতি হলে সে তার ক্ষতি পূরণ করে। এজন্য বীমা গ্রহীতাকে প্রিমিয়াম প্রদান করতে হয়। এভাবে ঝুঁকি সকলের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়।

 

৮. ঝুঁকি মূল্যায়ন

ঝুঁকিকে পরিমাপ করে তার জন্য প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়। যত বেশী ঝুঁকি গ্রহণ করে তত বেশী প্রিমিয়াম আদায় করে থাকে।

 

৯. বীমা চুক্তি কোন জুয়া খেলা নয়

জুয়া খেলার ক্ষেত্রে শুধু মাত্র ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। কেউ কোন ঝুঁকি গ্রহণ করে। এটা আইনে অবৈধ। বীমা অর্থের বিনিময়ে ঝুঁকি গ্রহণ করে, এটা বৈধ চুক্তি।

 

১০. বীমা কোন দাতব্য বিষয় নয়

বীমা সেবা দান করে কিন্তু তার বিনিময়ে অর্থ আদায় করে থাকে অর্থাৎ প্রতিদান গ্রহণ করে, বিনা প্রতিদানে কোন বীমা হয় না।

 

ইন্সুরেন্স বা বীমা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কয়েকটি পরিভাষা

বীমাকারী (Insurer):

বীমা চুক্তি অনুযায়ী যে পক্ষ টাকার বিনিময়ে অপর পক্ষের ঝুঁকি গ্রহণ করে তাকে বীমাকারী বলে। বীমাকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হতে পারে।

 

বীমা গ্রহীতা (Insured)

যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ামের বিনীময়ে নিজের ঝুঁকি অন্যকে হস্তান্তর করে তাকে বীমা গ্রহীতা বলে।

 

প্রিমিয়াম (Premium)

যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বীমা গ্রহীতা এককালীন বা কিস্তিতে বীমা কারীকে প্রদান করে তাকে প্রিমিয়াম বলে। এটা এক কালীন, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক বা বাৎসরিক যে কোন কিস্তিতে প্রদান করা যেতে পারে।

 

বীমা পত্র বলতে কি বোঝায়?

যে লিখিত দলিলে বীমা চুক্তি সম্পাদিত হয় তাকে বীমা পত্র বলে। বীমা পত্রে বীমা সংক্রান্ত সকল শর্ত বিস্তারিত ভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বীমার বিভিন্ন পরিভাষা দেখান হলাে ঃ ধরুন মিঃ জাফর ডেলটা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানীর সাথে মাসিক ৫০ টাকা কিস্তিতে দশ বৎসর মেয়াদী ২,০০,০০০ টাকার একটি জীবন বীমা চুক্তিতে আবদ্ধ হলাে। এক্ষেত্রে মিঃ জাফর বীমা গ্রহীতা, ডেলটা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানী লিঃ বীমাকারী, ৫০০ টাকা মাসিক কিস্তি প্রিমিয়াম, আর যে চুক্তিটি সম্পাদিত হলাে যাতে সকল শর্ত থাকবে তাকে বীমা পলিসি বা বীমা পত্র বলা হয়।

 

ইন্সুরেন্স বা বীমা এর গুরুত্ব (Importance of Insurance)

আমরা পূর্বের আলােচনার মাধ্যমে জেনেছি যে বীমা ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষ তার ব্যক্তিক ও ব্যবসায়িক ঝুঁকি হ্রাস করে থাকে। ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক ও সমাজ জীবনের বিভিন্ন স্তরে বীমা আর্থিক নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা ও প্রতিরক্ষা প্রদান করে আর্থিক ব্যবস্থাকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ করে তােলে।

যাই হােক আধুনিক জটিল ও প্রতিযােগিতামূলক ব্যবসায় জগতে এবং মানুষের জীবনে বীমার গুরুত্ত্ব সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা করা হলাে:

 

ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স বা বীমা এর ভূমিকা ও তাৎপর্য (Importance to an individual):

মানুষের পরিবারের কোন উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু বা যেকোন দূর্ঘটনার কারণে উক্ত পরিবারটি আর্থিক সংকটে পতিত হয়, বীমা ব্যবস্থা এসব ক্ষেত্রে মানুষকে সামান্য পরিমাণে হলেও আর্থিক সংকট মুক্ত করতে সচেষ্ট হয়। ব্যক্তিগত বীমার মধ্যে রয়েছে- জীবন বীমা, দূর্ঘটনা বীমা ও স্বাস্থ্য বীমা। একজন ব্যক্তি বীমা ব্যবস্থার মাধ্যমে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সুবিধা ভােগ করে থাকে

  1. জীবন বীমা গ্রহণকারীর অকাল মৃত্যুতে তার উত্তরাধীকারীগণ নিরাপত্তা সুবিধা ভােগ করে।
  2. অনুরূপভাবে অগ্নি-বীমা, নৌ-বীমা, দূর্ঘটনা বীমা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দূর্ঘটনা ঘটলে বীমা গ্রহীতা আর্থিক নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার সুবিধা পায়।
  3. কোন বন্ধকী সম্পত্তি বীমা করা থাকলে তার যথাযথ সুরক্ষা বীমা বিধান করে ।
  4. এছাড়াও পারিবারিক চাহিদা পূরণ, বৃদ্ধ বয়সের প্রয়ােজন, অন্তবর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ, শিক্ষা, বিবাহ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ইত্যাদি বিবিধ প্রয়ােজনে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে বীমা একজন বীমাগ্রহীতার বিবিধ চাহিদা পূরণ করে।
See also  দুর্ঘটনা বীমা কাকে বলে, কেন দুর্ঘটনা বীমা করবেন?

 

ব্যবসায়-এর ক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স বা বীমা এর গুরুত্ব (For business)

ব্যবসায়ের প্রতিক্ষেত্রেই ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা থাকার কারণে ব্যবসায়কে ঝুঁকির খেলা (Game of risk) ও বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- বাজারদর কমে খাওয়া, পণ্যদ্রব্য ও উৎপাদনের বা সরবরাহের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়া (ধর্মঘটের কারণে), আগুন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধবিগ্রহের কারণে আভ্যন্তরীণ বা আন্ত র্জাতিক বাজারে অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে, পণ্য পরিবহনকালে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে, গুদামে আগুন লাগতে পারে অথবা চুরি-ডাকাতি বা রাহাজানি জনিত কারণে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। বীমার সাহায্যে এই সমস্ত ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা হ্রাস করা যায়। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বীমার প্রচলন সবচেয়ে বেশী।

ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বৃদ্ধিতে বীমা নিম্নলিখিতভাবে সহায়তা করে।  যথাঃ

  1. বীমা আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসায়িক ক্ষতির অনিশ্চয়তা দুর করে।
  2. যেকোন আর্থিক ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা দূর করার ক্ষেত্রে সহায়তার মাধ্যমে বীমা ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যাবলীতে গতিশীলতা বজায় রাখে এবং ফলশ্রুতিতে ব্যবসায়িক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
  3. ব্যবসা-বাণিজ্যের বীমা গ্রহণ করা থাকলে ঐ প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহণের ক্ষমতা ও সুবিধা উভয়ই বৃদ্ধি পায়। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের বীমা প্রচলিত সেগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে- নৌ-বীমা, অগ্নি-বীমা, দূর্ঘটনা-বীমা, রপ্তানী-বীমা ইত্যাদি।

 

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স বা বীমা এর গুরুত্ব (For economy):

আধুনিক অর্থনীতিতে বীমার গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। ব্যক্তিগত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বীমার ভূমিকা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে বীমার ভূমিকা নিম্নরূপ

  1. বীমা কোম্পানীগুলাে প্রিমিয়াম আকারে সারা দেশ হতে অর্থসংগ্রহ করে এবং তা বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়ােগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
  2. বীমা কোম্পানী ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় খাতের সকল প্রকার উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের সার্বিক আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির ঝুঁকি বহন করে। ফলে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠে, আয় বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত ও ত্বরান্বিত হয়।
  3. বীমাকারী প্রতিষ্ঠানগুলাে পরােক্ষভাবে জাতীয় সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালন করে।
  4. কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য, পরিবহনসহ সকল উৎপাদনশীল খাত বীমা সুবিধার আওতায় এসে ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয়।

 

সামাজিক ক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স বা বীমা এর ভূমিকা (For Society):

আধুনিক যুগে ব্যক্তিগত, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ছাড়াও সামাজিক ক্ষেত্রেও বীমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

নিম্নে সামাজিক ক্ষেত্রে বীমার গুরুত্ব বা তাৎপর্য বর্ণনা করা হলােঃ

  1. বীমা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় নিরাপত্তার ভূমিকা পালন করে জীবন বীমা, সাধারণ বীমা ও অগ্নি বীমার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ যথাযথ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে।
  2. অর্থনৈতিক কল্যাণ যেমন ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় খাতের সর্ব প্রকার আর্থিক ঝুঁকির বড় একটি অংশ বীমা কোম্পানীগুলাে বহন করে থাকে।
  3. বীমা জনসাধারণের মধ্যে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জন সচেতনা সৃষ্টি করে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং প্রয়ােজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ উৎসাহিত করে তুলে।
  4. বীমা বিভিন্ন খাতে বিনিয়ােগ করে ফলে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনায়নে অবদান রাখে। যার ফলে মানুষের আরও ভােগ বৃদ্ধি পায় যার ফলে জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পায়।
  5. বীমা বিভিন্ন খাতে বিনিয়ােগের ফলে নতুন নতুন কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হয়। ফলে বীমা দেশের বেকারত্ব হ্রাস পাবার ক্ষেত্রেও অবদান রাখে। উপরের আলােচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, বীমা ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে। এর ফলে এ সকল কর্মকাণ্ডে নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায় ও শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।
See also  প্রাইভেট না সরকারি কোন ব্যাংকে চাকরি করবেনঃ সার্বিক প্রিপারেশনের প্রাথমিক বিষয়

 

ইন্সুরেন্স বা বীমা ব্যবসায়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও বাংলাদেশে বর্তমান ধারা (Brief History of Insurance and Its Present Situation in Bangladesh)

বীমার উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা খুবই দূরুহ। নিকট অতিত থেকে বর্তমান পর্যন্ত সংগৃহীত কিছু ইতিহাস বিভিন্ন গ্রন্থাকার, লেখক ও বিশেষজ্ঞ উপস্থাপন করেছেন। এ থেকে দেখা যায় যে, ভূমধ্যসাগরের উত্তর অঞ্চলে বিশেষতঃ ইটালিকে কেন্দ্র করে ইউরােপীয় কয়েকটি দেশে ৪র্থ শতাব্দীতে বীমা ব্যবসায়ের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ইউরােপে শিল্প বিপ্লব এর ফলে ব্যবসায়ের পাশাপাশি বীমারও সম্প্রসারণ ঘটে। ইউরােপের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য গড়ার ফলে অন্যান্য দেশ ঝুঁকি মােকাবেলার জন্য বীমাকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়।

তখন অবশ্য বীমা সমবায়ের মাধ্যমে পরিচালিত হত। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম নৌবীমার প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৬৬৬ সালে লন্ডন এবং ১৮৬১ সালে টালি এস্টেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে প্রথম ব্রিটেনে আগুনের ক্ষতি মােকাবেলার জন্য অগ্নিবীমা শুরু হয় ১৮৬৫ সালে। অতপর ১৮৯৬ সালে “Hand in Hand” নামক জীবন বীমার উদ্ভব ঘটে ইংল্যান্ডে।

কিন্তু এ উপমহাদেশে ১৮১৮ সালে ইউরােপিয় উদ্যোক্তাগণ কলিকাতায় The Oriental Life Insurance Company নামে একটি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বীমা ব্যবসায়ের সূচনা করে। পর্যায়ক্রমে অগ্নি বীমাও নৌ-বীমার গােড়াপত্তন হয় । ১৯২৮ সালে The Indian Insurance Company Act নামে একটি বীমা আইন পাশ করা হয়। ১৯৩৮ সালে তা সংশােধিত, পরিমার্জিত ও সংযােজিত হয়ে তা আবার ঘােষিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর উক্ত আইন তৎকালিন পাকিস্তানে বলবৎ করা হয়। তবে ১৯৫৪ ও ১৯৫৮ সালে কিছু পরিবর্তন করা হয়। ১৯৫৭ সালে ভারতে বীমা ব্যবসা জাতীয় করণ করা হলেও পাকিস্তানে তা ব্যক্তি মালিকানাধীনই থেকে যায়।

 

ইন্সুরেন্স বা বীমা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হয় কবে?

১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ Bangladesh Insurance (Emergency Provision) Order, 1972 জারি করা হয়। এতে ১৯৩৮ সালের বীমা আইনটি বাংলাদেশের বীমা আইন বলে বিবেচিত হবে বলে ঘােষণা দেয়া হয়। পরবর্তীতে একই সালের ৮ই আগস্ট রাষ্ট্রপতির ৯৫ নং আদেশ বলে তৎকালিন ৭৫টি বীমা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে প্রথমে ৫টি সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

যথা-

  1. বাংলাদেশ জাতীয় বীমা কর্পোরেশন,
  2. কর্ণফুলী বীমা কর্পোরেশন,
  3. তিস্তা বীমা কর্পোরেশন,
  4. সুরমা জীবন বীমা কর্পোরেশন এবং
  5. রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশন।

 

অতপর ১৯৭৩ সালের ১৪ই মে বীমা কর্পোরেশন অধ্যাদেশ (Insurance Corporation Ordinance, 1973) ঘােষণার মধ্য দিয়ে ৫টি বীমা সংস্থাকে ২টি সংস্থার অধীনে আনা হয়।

যথা-

  • জীবন বীমা কর্পোরেশন ও
  • সাধারণ বীমা কর্পোরেশন।

১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ব বীমা কর্পোরেশনের পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানায় বীমা ব্যবসার অনুমতি দেয়া হয়। বর্তমানে | বাংলাদেশে প্রচুর বেসরকারী বীমা ব্যবসা চালু আছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশ জেনারেল ইনসিউরেন্স কোং লিঃ, ন্যাশনাল লাইফ ইনসিওরেন্স ইত্যাদি উল্লেখ্যযােগ্য। বিদেশী বীমা কোম্পানী ও কাজ করছে। যেমন, আমেরিকান লাইফ ইনসিউরেন্স।

Related Articles

Back to top button