বাংলাদেশে বীমা ব্যবস্থা কেমন?
বীমা ব্যবসা বলতে কি বোঝায়?
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে বীমা ব্যাবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। সেসাথে প্রসার ঘটেছে বীমা ব্যবসার। বীমা ব্যবসা প্রসার ঘটার আরাে একটি কারণ হল এ দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝর ইত্যাদি আঘাত হানে এবং ধংশ করে দেয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অতিত্ব। এ ছাড়া দেশের ধর্মীয় সংস্কৃতি ও বীমা ব্যবসা প্রসারে যথেষ্ঠ অবদান রেখেছে। আমাদের দেশের ৮৫% মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। যে কারণে ইসলামী তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে ইসলামী বীমা ব্যবস্থা। এ ইউনিটের মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের বীমা ব্যবসার উপর একটি ধারণা লাভ করতে পারবেন। তাহলে আসুন আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।
কিভাবে বাংলাদেশে বীমা ব্যবসার প্রসার হয়?
বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা নতুন নয়। এদেশে বীমা ব্যবসায়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মূলত: বৃটিশ আমল থেকেই বীমা ব্যবসার প্রচলন হয়। এ উপমহাদেশে Clauson Committee -এর সুপারিশ অনুযায়ী ১৯২৮ সালে The Indian Insurance Companies Act” নামে একটি বীমা আইন প্রণয়ন করা হয়; যা ১৯৩৮ সালে পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংযােজন হয়ে পুন:ঘােষিত হয়।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পর তদানিন্তন পাকিস্থানে উক্ত বীমা আইন কার্যকর করা হয়। তবে ১৯৫৪ ও ১৯৫৮ সালে কিছু সংশােধন করা হয়। ভারতে ১৯৫৭ সালে বীমা ব্যবসায় রাষ্ট্রীয়করণ করা হলেও তৎকালীন পাকিত্সনে তা ব্যক্তি মালিকানাধীনই থেকে যায়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বীমা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির ৯৫নং আদেশ বলে দেশের সকল বীমা কোম্পানীগুলােকে জাতীয়করণ করা হয়। তখন দেশে ৭৫ টি বীমা কোম্পানী চালু ছিল।
সবগুলাে বীমা কোম্পানীকে ৫ টি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
যথা:
- বাংলাদেশ জাতীয় বীমা কর্পোরেশন,
- কর্নফুলী বীমা কর্পোরেশন,
- তিস্তা বীমা কর্পোরেশন
- সুরমা জীবন বীমা কর্পোরেশন ও
- রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশন।
জাতীয় বীমা কর্পোরেশন Underwriting Corporation হিসেবে কাজ করত না। এটা ছিল কেন্দ্রীয় কর্পোরেশন, যার মূল দায়িত্ব ছিল অন্যান্য বীমা কর্পোরেশনগুলাের তদারকী ও নিয়ন্ত্রণের কাজ; তিস্তা ও কর্নফুলীর দায়িত্ব ছিল সাধারণ বীমা কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং সুরমা ও রূপসা বীমা কর্পোরেশন মূলত জীবন বীমা ব্যবসা পরিচালনা করত। পরে ১৯৭৩ সালের ১৪ মে বীমা কর্পোরেশন অধ্যাদেশ’ ঘােষণা করা হয় এবং উক্ত পাঁচটি বীমা কর্পোরেশনকে ২ টি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা হয়।
পাঁচটি বীমা কর্পোরেশনকে ২ টি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা হয়
যথা:
১। জীবন বীমা কর্পোরেশন ও
২। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন।
কিন্তু, রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা কর্পোরেশন ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন তাদের প্রশাসনিক, ব্যবস্থাপনা ও সাংগঠনিকভাবে তেমন দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে ব্যর্থ হয়। কথায় আছে ‘সরকারকা মাল দরিয়ামে ঢাল। ফলে পরবর্তীতে গড়ে উঠে ব্যক্তি মালিকানাধীন বীমা কোম্পানী।
ব্যক্তি মালিকানাধীন বীমা কোম্পানীগুলো কি কি?
রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা কর্পোরেশন ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন তাদের প্রশাসনিক, ব্যবস্থাপনা ও সাংগঠনিকভাবে তেমন দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে ব্যর্থ হয়। কথায় আছে ‘সরকারকা মাল দরিয়ামে ঢাল। ফলে পরবর্তীতে গড়ে উঠে ব্যক্তি মালিকানাধীন বীমা কোম্পানী।
যেমন:
- বাংলাদেশ জেনারেল ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি
- পিপল্স ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি
- গ্রীন ডেল্টা ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি
- বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ কোম্পানী লি
- ইউনাটেড ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি
- পপুলার ইস্যুরেন্স কোম্পানী
- প্রগতি জেনারেল লাইফ ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি
- কর্নফুলী ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি
- পূবালী ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি
- সেন্ট্রাল ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি
- ফিনিক্স ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি
- রিলায়েন্স ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি ইত্যাদি।
জীবন বীমার ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানা বীমা কোম্পানীগুলাে হলাে
- ন্যাশনাল লাইফ ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি:
- ডেল্টা লাইফ ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি:
- সন্ধানী লাইফ ইস্যুরেন্স কোম্পানী লি:
বাংলাদেশে বর্তমানে কিছু ইসলামী বীমা কোম্পানীও ব্যবসা পরিচলনা করে আসছে।
যেমন:
- ফারইষ্ট ইসলামী বীমা কোম্পানী।
ইসলামী শরীয়াহ আইন অনুযায়ী এই বীমা ব্যবসা পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে বিদেশী বীমা কোম্পানী যেমন আমেরিকান লাইফ ইন্সরেন্স কোম্পানীও ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা সরকারী, বেসরকারী, বিদেশী এমনকি ইসলামী বীমা কোম্পানীগুলাে পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে। তাই এদেশে বীমা ব্যবসা এক শক্তিশালী অবস্থান গড়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে যা অর্থনীতির চাকাকে আরও গতিশীল করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বীমা ব্যবসায়ের বি-রাষ্ট্রীকরণ এনে দিয়েছে এক অভূতপূর্ব সাফল্য। বাংলাদেশে বীমা ব্যবস্থাকে প্রসার ও গতিশীল করার জন্য বাংলাদেশ ইস্যুরেন্স একাডেমী প্রবর্তিত হয়। এবার আসুন এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ে বিচ্ছুরিত আলােচনা করি।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স বা বীমা একাডেমির (Bangladesh Insurance Academy) কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ও এর উদ্দেশ্য?
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সব বীমা কোম্পানীগুলাে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। জাতীয়করণ করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক সেবা ও জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বেশীর ভাগ বীমা কোম্পানীগুলাের মালিক ছিল পশ্চিমারা, যারা এদেশে বীমা ব্যবস্থাকে দক্ষ ও শক্তিশালী করার জন্য খুব কমই নজর দেয়। যার ফলে বাংলাদেশের বীমা কোম্পানীগুলাে পরিচালনার জন্য একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। যার মধ্যে দক্ষ ও যােগ্য লােকের অভাব দারুণভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাই ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও অধিকতর সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ইস্যুরেন্স | একাডেমীর প্রবর্তন করেন, যা নিম্ন লিখিত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য গঠিত হয়েছিল।
- বীমা ক্ষেত্রে উন্নয়ন, সংগঠন ও পেশাগত বিদ্যাদানের জন্য বীমার উপর ডিগ্র, ডিপ্লোমা, ও সার্টিফিকেট প্রদান।
- দেশে বীমা ব্যবসার প্রসার ঘটানাের জন্য গবেষণা পরিচালনা করা।
- বীমা পেশার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য ইন-সার্ভিস শিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
- বীমা বিষয়ের উপর প্রকাশনার জন্য উৎসাহ দান ও সুবিধা প্রদান করা।
- বীমার সাথে সম্পৃক্ত দেশীয় ও বিদেশীয় সংগঠনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও ঘনিষ্ট যােগাযােগ রক্ষা করা।
- বীমা পেশার উপর বিভিন্ন ডিগ্রী, ডিপ্লোমা, ও সার্টিফিকেট পাবার জন্য কোচিং সুবিধা প্রদান।
- যারা বীমা ব্যবসায় ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখবে তাদের উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন পুরুষ্কার ও পদক প্রদান করা।