জড়তার ভ্রামক এবং টর্ক এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
জড়তার ভ্রামক এবং টর্ক কাকে বলে?
জড়তার ভ্রামক কাকে বলে?
কোনো অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণনরত দৃঢ় বস্তুর কণাগুলোর ভর এবং ঘূর্ণন অক্ষ থেকে এদের দূরত্বের বর্গের গুণফলের সমষ্টিকে ওই অক্ষের সাপেক্ষে বস্তুর জড়তার ভ্রামক বলে।
জড়তার ভ্রামক সঠিকভাবে বোঝানোর জন্যে একটু অনুসাঙ্গিক কথা বলতে চাচ্ছি আশা করি একটু খেয়াল করবেন। নইলে শেষের প্যারা পড়তে পারেন।
নিউটনের ১ম সূত্র আমাদের কী বলে? “কোন বস্তুর উপর কোন বল প্রয়োগ করা না হলে স্থির বস্তু আজীবন স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সরলরেখা বরাবর সমবেগে চলতে থাকবে”।
খেয়াল করবেন এ থেকে কিন্তু আমরা জড়তা এবং বল উভয়েরই ধারণা পাচ্ছি। বস্তুত নিউটনের ৩টি সূত্র হতেই আমরা জড়তার ধারণা পাই। জড়তা হচ্ছে সেই জিনিস যার জন্যে কোন স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকতে চায় এবং গতিশীল বস্তুও চিরকাল গতিচীল থাকত চায়।
জড়তা কত প্রকার?
জড়তা কিন্তু ২ প্রকার।
- স্থিতি জড়তা এবং
- গতি জড়তা।
স্থিতি জড়তা, এটি কিন্তু সম্পূর্ণটাই বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে।খেয়াল করবেন তুলনামূলক ছোট পাথরকে আপনি কিন্তু খুব সহজেই গতিশীল করতে পারবেন কিন্তু বড় কোন পাথরকে সরাতে আপনাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে।গতি জড়তা,এটা নির্ভর করে বস্তুর ভরবেগের উপর।
খেয়াল করবেন ভরবেগ হচ্ছে p=mv
অর্থাৎ, মনে আছে সেই ছোট পাথরটির কথা? ঐ পাথরটাকে যদি আপনি অনেক বেগে গতিশীল করতে পারেন তাহলে কিন্তু ওকে থামাতে অনেক কষ্ট হবে! যেখানে সেই ভারী পাথরটিকে (কম গতিপ্রাপ্ত) থামাতেও এতো কষ্ট করতে হবে না।
জড়তার ভ্রামক এবং টর্ক এর মধ্যে পার্থক্য
সংজ্ঞাঃ কোনো অক্ষরের সাপেক্ষে ঘূর্ণনরত বস্তুর উপর যে বিন্দুতে বল ক্রিয়াশীল ঐ বিন্দুর অবস্থান ভেক্টর ও প্রযুক্ত বলের গুণফলকে ঘূর্ণন বল বা টর্ক বলে ৷
এখন আসি টর্ক ও জড়তার ভ্রামকে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে এতক্ষন আমরা যে বল ও জড়তার কাজগুলো জানলাম, ঐ একরকম কাজই করে টর্ক ও জড়তার ভ্রামক তবে তা ঘূর্ণনশীল বস্তুতে।
অর্থাৎ, টর্ক হলো যা কোন স্থির বস্তুকে ঘূর্ণনশীল করে বা করতে চায় এবং স্থির বস্তুকে ঘূর্ণনশীল করে বা করতে চায়।
এবং জড়তার ভ্রামক হলো ভর ও ব্যাসার্ধের সমানুপাতিক বা I=mr
এর খুব সুন্দর সুন্দর উদাহরণ রয়েছে, ধরুন দুজন আইস স্কেটার জোরে ঘোরার চেষ্টা করছে। আপনি কি বলতে পারবেন কে বেশি জোরে ঘুরবে?
চিত্রের ২য় ব্যক্তিই জোরে ঘুরবে।কিন্তু কেন?এর কারণ কী হতে পারে? কারণ হচ্ছে উনি তার হাত কম প্রসারিত করেছেন তাই উনার জড়তার ভ্রামক কম।এর জন্যে যেমন তিনি খুব সহজেই ঘূর্ণনশীল হতে পারবেন তেমনি খুব সহজেই স্থির হতে পারবেন।
ধরুন আপনি একই দৈর্ঘ্যের সুতায় ১টিতে ১০ কেজি ও অপরটিতে ৫০ কেজি ভরের কোন গোলক ঝুলিয়ে দিলেন। বলতে পারবেন কোনটাকে সহজে ঘোরানো যাবে? খুব সহজ!বেশী ভারের বস্তুটি!
এখন কিন্তু আপনি এটা খুব সহজেই বলে দিতে পারবেন। এবার একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করবো, আপনি কি জানেন আমাদের পৃথিবীই এই জড়তার জন্যে নির্দিষ্ট বেগে ঘূর্ণনশীল। সৃষ্টির শুরুতে বিভিন্ন পদার্থ কেন্দ্রীভূত হয়ে পৃথিবীর সৃষ্টি হবার সময়ই তা একটা বেগপ্রাপ্ত হয় এবং শূণ্যস্থানে কোন বাঁধা না থাকায় পৃথিবী এখনো সেই বেগেই ঘূর্ণায়মান।
আমাদের চারপাশে কিন্তু এমন অনেক অনেক উদাহরণ রয়েছে।চিন্তা করবেন,খেয়াল করবেন খুব ভালো লাগবে।
কোনো একটি অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণনরত একটি বস্তুর ঘূর্ণন গতির পরিবর্তনকে বাধা দেওয়ার প্রয়াস হচ্ছে জড়তার ভ্রামক ।
আর, কোনো অক্ষরের সাপেক্ষে ঘূর্ণনরত বস্তুর উপর যে বিন্দুতে বল ক্রিয়াশীল ঐ বিন্দুর অবস্থান ভেক্টর ও প্রযুক্ত বলের গুণফলকে ঘূর্ণন বল বা টর্ক বলে।