সমাস কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?
সমাস সম্পর্কে বিস্তারিত।
সমাস মানে সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।
যেমন : দেশের সেবা = দেশসেবা, বই ও পুস্তক = বইপুস্তক, নেই পরােয়া যার = বেপরােয়া।
বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে সমাসের সৃষ্টি। সমাস দ্বারা দুই বা ততােধিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন অর্থবােধক পদ সৃষ্টি হয়। এটি শব্দ তৈরি ও প্রয়ােগের একটি বিশেষ রীতি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। তবে খাঁটি বাংলা সমাসের দৃষ্টান্তও প্রচুর পাওয়া যায়। সেগুলােতে সংস্কৃতের নিয়ম খাটে না।
সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাসনিম্পন্ন পদটির নাম সমস্ত পদ।। সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদটির অন্তর্গত পদগুলােকে সমস্যমান পদ বলে। সমাসযুক্ত পদের প্রথম অংশ (শব্দ)-কে বলা হয় পূর্বপদ এবং পরবর্তী অংশ (শব্দ)-কে বলা হয় উত্তরপদ বা সমস্ত পদকে ভেঙে যে বাক্যাংশ করা হয়, তার নাম সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য।
উদাহরণ:
- বিলাতফেরত রাজকুমার সিংহাসনে বসলেন।
এখানে বিলাতফেরত, রাজকুমার ও সিংহাসন – এ তিনটিই সমাসবদ্ধ পদ। এগুলাের গঠন প্রক্রিয়া ও রকম – বিলাত হতে ফেরত, রাজার কুমার,সিংহ চিহ্নিত আসন – এগুলাে হচ্ছে ব্যাসবাক্য। এসব ব্যাসবাক্যে ‘বিলাত’, ফেরত’, ‘রাজা, ‘কুমার,’ ‘সিংহ’, ‘আসন’ হচ্ছে এক একটি সমস্যমান পদ। আর বিলাতফেরত, রাজকুমার এবং সিংহাসন সমস্ত পদ। বিলাত, রাজা ও সিংহ হচ্ছে পূর্বপদ এবং ফেরত, কুমার ও আসন হচ্ছে পরপদ।।
সমাস কত প্রকার?
সমাস প্রধানত ছয় প্রকার :
-
- দ্বন্দ্ব
- কর্মধারয়
- তৎপুরুষ
- বহুব্রীহি
- বিগু ও
- অব্যয়ীভাব সমাস।
দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কেও তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেছেন।
এদিক থেকে সমাস মূলত চারটি : দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, অব্যয়ীভাব। কিন্তু সাধারণভাবে ছয়টি সমাসেরই আলােচনা করা গেল। এছাড়া, প্রাদি, নিত্য, অলুক ইত্যাদি কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। সংক্ষেপে সেগুলােরও আলােচনা করা হয়েছে। ব্যকরন
দন্দ্ব সমাস কাকে বলে?
দন্দ্ব সমাস: যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে, তাকে দন্দ্ব সমাস বলে।
যেমন:
- তাল ও তমাল = তাল-তমাল,
- দোয়াত ও কলম = দোয়াত-কলম।
এখানে তাল ও তমাল এবং দোয়াত ও কলম। প্রতিটি পদেরই অর্থের প্রাধান্য সমস্ত পদে রক্ষিত হয়েছে।
দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বােঝানাের জন্য ব্যাসবাক্যে এবং , ও, আর – এ তিনটি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়।
যেমন : মাতা ও পিতা = মাতাপিতা।
দ্বন্দ্ব সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়।
১. মিলনার্থক শব্দযােগে : মা-বাপ, মাসি-পিসি, জ্বিন-পরি, চা-বিস্কুট ইত্যাদি।
২. বিরােধার্থক শব্দযােগে : দা-কুমড়া, অহি-নকুল, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি।
৩. বিপরীতার্থক শব্দযােগে : আয়-ব্যয়, জমা-খরচ, ছােট-বড়, ছেলে-বুড়াে, লাভ-লােকসান ইত্যাদি।
৪. অঙ্গবাচক শব্দযােগে : হাত-পা, নাক-কান, বুক-পিঠ, মাথা-মুণ্ডু, নাক-মুখ ইত্যাদি।
৫. সংখ্যাবাচক শব্দযােগে : সাত-পাঁচ, নয়-ছয়, সাত-সতের, উনিশ-বিশ ইত্যাদি।
৬. সমার্থক শব্দযােগে : হাট-বাজার, ঘর-দুয়ার, কল-কারখানা, মােল্লা-মৌলভি, খাতা পত্র ইত্যাদি।
৭. প্রায় সমার্থক ও সহচর : কাপড়-চোপড়, পােকা-মাকড়, দয়া-মায়া, ধূতি-চাদর ইত্যাদি।
৮. দুটি সর্বনামযােগে : যা-তা, যে-সে, যথা-তথা, তুমি-আমি, এখানে-সেখানে ইত্যাদি।
৯. দুটি ক্রিয়াযােগে: দেখা-শােনা, যাওয়া-আসা, চলা-ফেরা, দেওয়া-থােওয়া ইত্যাদি।
১০. দুটি ক্রিয়া বিশেষণযােগে : ধীরে-সুস্থে, আগে-পাছে, আকারে-ইঙ্গিতে ইত্যাদি।
১১. দুটি বিশেষণযােগে: ভালাে-মন্দ, কম-বেশি, আসল-নকল, বাকি-বকেয়া ইত্যাদি।
অলুক দ্বন্দ্ব সমাস কি?
অলুক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাসে কোনাে সমস্যমান পদের বিভক্তি লােপ হয় না, তাকে অলুক দ্বন্দ বলে।
যেমন :
- দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, দেশে-বিদেশে, হাতে-কলমে।।
✍️তিন বা বহু পদে দ্বন্দ্ব সমাস হলে তাকে বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
যেমন :
- সাহেব-বিবি-গােলাম, হাত পা-নাক-মুখ-চোখ ইত্যাদি।
কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?
কর্মধারয় সমাস: যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।
যেমন:
- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম।
- শান্ত অথচ শিষ্ট = শান্তশিষ্ট।
- কঁচা অথচ মিঠা = কাচামিঠা।
কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়।
১. দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে বােঝালে।
যেমন:
- যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর।
২. দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বােঝালে।
যেমন:
- যিনি জজ তিনিই সাহেব = জজ সাহেব।
৩. কার্যে পরম্পরা বােঝাতে দুটি কৃতন্ত বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়।
যেমন:
- আগে ধােয়া পরে মােছা= ধােয়ামােছা।
৪. পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষ বাচক হয়।
যেমন:
- সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা,
- মহতী যে কীর্তি = মহাকীর্তি।
৫. বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে, ‘মহৎ’ ও ‘মহান স্থানে ‘মহা’ হয়।
যেমন:
- মহৎ যে জ্ঞান= মহাজ্ঞান,
- মহান যে নবি = মহানবি।
৬. পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’ স্থানে ‘কৎ’হয়।
যেমন:
- কু যে অর্থ = কদৰ্থ,
- কু যে আচার = কদাচার।
৭. পরপদে ‘রাজা’ শব্দ থাকলে কর্মধারয় সমাসে ‘রাজ’ হয়।
যেমন:
- মহান যে রাজা = মহারাজ।
৮. বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনাে কখনাে বিশেষণ পরে আসে, বিশেষ্য আগে যায়।
যেমন:
- সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ,
- অধম যে নর = নরাধম।
কর্মধারয় সমাসের প্রকারভেদ
কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকার:
- মধ্যপদলােপী,
- উপমান,
- উপমিত ও
- রূপক কর্মধারয় সমাস।
মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস কাকে বলে
মধ্যপদলােপী কর্মধারয়: যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লােপ হয়, তাকে মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস বলে।
যথা-
- সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন,
- সাহিত্য বিষয়ক সভা=সাহিত্যসভা,
- স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ= স্মৃতিসৌধ।
উপমান কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?
উপমান কর্মধারয় : উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু। প্রত্যক্ষ কোনাে বস্তুর সাথে পরােক্ষ কোনাে বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় উপমান। উপমান ও উপমেয়ের একটি সাধারণ ধর্ম থাকবে।
যেমন:
- ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ = ভ্রমরকৃষ্ণকেশ।
এখানে ভ্রমর উপমান এবং কেশ উপমেয়।
কৃষ্ণত্ব হলাে সাধারণ ধর্ম। সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।
যথা:
- তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র,
- অরুণের ন্যায় রাঙা = অরুণরাঙা।
উপমিত কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?
উপমিত কর্মধারয় : সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে (এ ক্ষেত্রে সাধারণ গুণটিকে অনুমান করে নেওয়া হয়) এ সমাসে উপমেয় পদটি পূর্বে বসে।
যেমন:
- মুখ চন্দ্রের ন্যায় = চন্দ্রমুখ।
- পুরুষ সিংহের ন্যায় = সিংহপুরুষ।
রূপক কর্মধারয় কাকে বলে?
রূপক কর্মধারয় : উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়। এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে বসে এবং উপমান পদ পরে বসে এবং সমস্যমান পদে ‘রূপ’ অথবা ‘ই’ যােগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয়।
যেমন:
- ক্রোধ রূপ অনল =ক্রোধানল,
- বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু,
- মন রূপ মাঝি= মনমাঝি।
✍️আরও কয়েক ধরনের কর্মধারয় সমাস রয়েছে। কখনাে কখনাে সর্বনাম, সংখ্যাবাচক শব্দ এবং উপসর্গ আগে বসে পরপদের সাথে কর্মধারয় সমাস গঠন করতে পারে।
যেমন:
- অব্যয় : কুকর্ম, যথাযযাগ্য।
- সর্বনাম : ও সেকাল, একাল।
- সংখ্যাবাচক শব্দ : একজন, দোতলা।
- উপসর্গ : বিকাল, সকাল, বিদেশ, বেসুর।
তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
পূর্বপদের বিভক্তির ললাপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বােঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোনাে বিভক্তি থাকতে পারে; আর পূর্বপদের বিভক্তি অনুসারে এদের নামকরণ হয়।
যেমন:
- বিপদকে আপন্ন বিপদাপন্ন।
✍️এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ লােপ পেয়েছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ।
তৎপুরুষ সমাস কত প্রবার?
তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার :
- দ্বিতীয়,
- তৃতীয়,
- চতুর্থ,
- পঞ্চমী,
- যষ্ঠী,
- সপ্তমী,
- নঞ,
- উপপদ ও
- অলুক তৎপুরুষ সমাস।
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি কে, রে ইত্যাদি লােপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।
যথা :
- দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত,
- বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন।
✍️ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়।
যেমন :
- চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী।
- এরকম : গা-ঢাকা, রথদেখা, বীজবােনা, ভাতরাধা, ছেলে-ভুলাননা (ছড়া), নভেল-পড়া ইত্যাদি।
তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লােপে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।
যথা :
- মন দিয়ে গড়া = মনগড়া,
- শ্রম দ্বারা লন্ধ = শ্রমলব্ধ,
- মধু দিয়ে মাখা= মধুমাখা।
✍️উন, হীন, শূন্য প্রভৃতি শব্দ উত্তরপদ হলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়।
যথা :
- এক দ্বারা উন = একোন,
- বিদ্যা দ্বারা হীন = বিদ্যাহীন,
- জ্ঞান দ্বারা শূন্য = জ্ঞানশূন্য,
- পাঁচ দ্বারা কম = পাঁচ কম।।
✍️উপকরণবাচক বিশেষ্য পদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়।
যথা :
- স্বর্ণ দ্বারা মণ্ডিত = স্বর্ণমণ্ডিত।
- এরূপ-হীরকখচিত, চন্দনচর্চিত, রত্নশােভিত ইত্যাদি।
চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে চতুর্থ বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) ললাপে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে।
যথা:
- গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি,
- আরামের জন্য কেদারা= আরামকেদারা,
- বসতের নিমিত্ত বাড়ি= বসতবাড়ি,
- বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগলা ইত্যাদি।
✍️এরূপ-ছাত্রাবাস, ডাকমাশুল, চোষকাগজ, শিশুমঙ্গল, মুসাফিরখানা, হজ্বযাত্রা, মালগুদাম, রান্নাঘর, মাপকাঠি,বালিকাবিদ্যালয়, পাগলাগারদ ইত্যাদি।
পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে ইত্যাদি) লােপে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে।
যথা :
- খাঁচা থেকে ছাড়া = খাঁচাছাড়া,
- বিলাত থেকে ফেরত = বিলাতফেরত ইত্যাদি।
✍️সাধারণত চ্যুত, আগত, ভীত, গৃহীত, বিরত, মুক্ত, উত্তীর্ণ, পালানাে, ভ্রষ্ট ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে যুক্ত হলে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়।
যেমন :
- স্কুল থেকে পালানাে = স্কুলপালানাে,
- জেল থেকে মুক্ত = জেলমুক্ত ইত্যাদি।
✍️এ রকম জেলখালাস, বোটাখসা, আগাগােড়া, শাপমুক্ত, ঋণমুক্ত ইত্যাদি। কোনাে কোনাে সময় পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্যে এর চেয়ে’ ইত্যাদি অনুসর্গের ব্যবহার হয়।
যথা:
- পরাণের চেয়ে প্রিয় = পরাণপ্রিয়।
যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে যষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লােপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে।
যথা :
- চায়ের বাগান = চাবাগান,
- রাজার পুত্র = রাজপুত্র,
- খেয়ার ঘাট = খেয়াঘাট।
✍️অনুরূপভাবে ছাত্রসমাজ, দেশসেবা, দিল্লীশ্বর, বদরনাচ, পাটক্ষেত, ছবিঘর, ঘােড়দৌড়, শ্বশুরবাড়ি, বিড়ালছানা ইত্যাদি।
✔️ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে ‘রাজা’ স্থলে ‘রাজ’, পিতা, মাতা, ভ্রাতা স্থলে যথাক্রমে ‘পিতৃ’, ‘মাতৃ’, ‘ভ্রাতৃ’ হয়।
যেমন:
- গজনীর রাজা = গজনীরাজ,
- রাজার পুত্র = রাজপুত্র,
- পিতার ধন = পিতৃধন,
- মাতার সেবা = মাতৃসেবা,
- ভ্রাতার স্নেহ = ভ্রাতৃস্নেহ,
- পুত্রের বধূ=পুত্রবধূ ইত্যাদি।
✔️পরপদে সহ, তুল্য, নিত, প্রায়, সহ, প্রতিম – এসব শব্দ থাকলেও যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়।
যেমন:
- পত্নীর সহ =পত্নীসহ,
- কন্যার সহ = কন্যাসহ,
- সহােদরের প্রতিম = সহােদরপ্রতিম ইত্যাদি।
✔️কালের কোনাে অংশবােধক শব্দ পরে থাকলে তা পূর্বে বসে।
যথা:
- অহ্নের (দিনের) পূর্বভাগ = পূর্বাহ।
✔️পরপদে রাজি, গ্রাম, কৃন্দ, গণ, যুথ প্রভৃতি সমষ্টিবাচক শব্দ থাকলে যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়।
যথা:
- ছাত্রের কৃন্দ =ছাত্রবৃন্দ,
- গুণের গ্রাম= গুণগ্রাম,
- হস্তীর যুথ = হতীযূথ ইত্যাদি।
✔️অর্ধ শব্দ পরপদ হলে সমস্তপদে তা পূর্বপদ হয়।
যেমন:
- পথের অর্ধ= অর্ধপথ,
- দিনের অর্ধ=অর্ধদিন।
✔️শিশু, দুগ্ধ ইত্যাদি শব্দ পরে থাকলে স্ত্রীবাচক পূর্বপদ পুরুষবাচক হয়।
যেমন:
- মৃগীর শিশু = মৃগশিশু,
- ছাগীর দুগ্ধ = ছাগদুগ্ধ ইত্যাদি।
✔️ব্যাসবাক্যে ‘রাজা’ শব্দ পরে থাকলে সমস্তপদে তা আগে আসে।
যেমন:
- পথের রাজা = রাজপথ,
- হাঁসের রাজা = রাজহাঁস।
অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস : ঘােড়ার ডিম, মাটির মানুষ, হাতের পাঁচ, মামার বাড়ি, সাপের পা, মনের মানুষ, কলের গান ইত্যাদি। কিন্তু, ভ্রাতার পুত্র = ভ্রাতুস্পুত্র (নিপাতনে সিদ্ধ)।
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) লােপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন :
- গাছে পাকা = গাছপাকা,
- দিবায় দ্রিা = দিবানিদ্রা।
- এরূপ – বাকপটু, গােলাভরা, তালকানা, অকালমৃত্যু, বিশ্ববিখ্যাত, ভােজনপটু, দানবীর, বাক্সবন্দি, বস্তাপচা, রাতকানা, মনমরা ইত্যাদি।
✔️সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে কোনাে কোনাে সময় ব্যাসবাক্যে পরপদ সমস্তপদের পূর্বে আসে।
যেমন:
- পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব,
- পূর্বে অশ্রুত = অশ্রুতপূর্ব
নঞ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
নঞ তৎপুরুষ সমাস : না বাচক নঞ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়) পূর্বে বসে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে ন তৎপুরুষ সমাস বলে।
যথা:
- ন আচার = অনাচার,
- ন কাতর = অকাতর। এরূপ – অনাদর, নাতিদীর্ঘ, নাতিখর্ব, অভাব, বেতাল ইত্যাদি।
✔️আঁটি বাঙ্গায় অ, আ, না কিংবা অনা হয়।
যেমন:
- ন কাল = অকাল বা আকাল।
- তদুপ- আবােয়া, নামঞ্জুর, অকেজো, অজানা, অচেনা, আলুনি, নাছােড়, অনাবাদী, নাবালক ইত্যাদি।
বাচক অর্থ ছাড়াও বিশেষ বিশেষ অর্থে নঞ তৎপুরুষ সমাস হতে পারে।
যথা:
- অভাব – ন বিশ্বাস = অবিশ্বাস (বিশ্বাসের অভাব)।
- ভিন্নতা – ন লৌকিক = অলৌকিক ।
- অল্পতা – ন কেশা = অকেশা।
- বিরােধ – ন সুর = অসুর।
- অপ্রশস্ত – ন কাল = অকাল
- মন্দ – ন ঘাট = অঘাট। এরূপ — অমানুষ, অসঙ্গত, অভদ্র, অনন্য, অগম্য ইত্যাদি।
উপপদ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
উপপদ তৎপুরুষ সমাস : যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎপ্রত্যয় যুক্ত হয় সে পদকে উপপদ বলে। কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয়, তাকে বলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস।
যেমন:
- জলে চরে যা = জলচর,
- জল দেয় যে = জলদ,
- পঙ্কে জন্মে যা = পঙ্কজ।
এরূপ —গৃহস্থ, সত্যবাদী, ইন্দ্রজিৎ, ছেলেধরা, ধামাধরা, পকেটমার, পাতাচাটা, হাড়ভাঙ্গা, মাছিমারা, ছারপােকা, ঘরপােড়া, বর্ণচোরা, গলাকাটা, পা-চাটা, পাড়াবেড়ানি, ছা-পােষা ইত্যাদি।
অলুক তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
অলুক তৎপুরুষ সমাস: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লােপ হয় না, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন :
- গায়ে পড়া = গায়েপড়া।
এরূপ-ঘিয়ে ভাজা, কলে ঘঁটা, কলের গান, গরুর গাড়ি ইত্যাদি।
✔️দ্রষ্টব্য : গায়ে-হলুদ, হাতেখড়ি প্রভৃতি সমস্তপদে পরপদের অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয় না অর্থাৎ হলুদ বা খড়ি বােঝায় না, অনুষ্ঠান বিশেষকে বােঝায়। সুতরাং এগুলাে অলুক তৎপুরুষ নয়, অলুক বহুব্রীহি সমাস।
বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
বহুব্রীহি সমাস: যে সমাসে সমস্যমান পদগুলাের কোনােটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোনাে পদকে বােঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
যথা-
- বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার = বহুব্রীহি।
✔️এখানে ‘বহু’ কিংবা ‘ব্রীহি’ কোনােটিরই অর্থের প্রাধান্য নেই, যার বহু ধান আছে এমন লােককে বােঝাচ্ছে।
✔️বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়।
যথা :
- আয়ত লােচন যার = আয়তলােচনা (সত্ৰী),
- মহান আত্মা যার = মহাত্মা,
- স্বচ্ছ সলিল যার = সচ্ছসলিলা,
- নীল বসন যার = নীলবসনা,
- স্থির প্রতিজ্ঞা যার = স্থিরপ্রতিজ্ঞ,
- ধীর বুদ্ধি যার = ধীরবুদ্ধি।
✔️‘সহ’ কিংবা ‘সহিত’ শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে ‘সহ’ ও ‘সহিত’ এর স্থলে ‘স’ হয়।
যেমন :
- বান্ধবসহ বর্তমান = সবান্ধব,
- সহ উদর যার = সহােদর » সােদর।
এরূপ – সজল, সফল, সদর্প, সলজ্জ, সকল্যাণ ইত্যাদি।
✔️বহুব্রীহি সমাসে পরপদে মাতৃ, পত্নী, পুত্র, স্ত্রী ইত্যাদি শব্দ থাকলে এ শব্দগুলাের সঙ্গে ‘ক’ যুক্ত হয়।
যেমন :
- নদী মাতা (মাতৃ) যার = নদীমাতৃক,
- বি (বিগত) হয়েছে পত্নী যার = বিপত্নীক।
এরূপ -সস্ত্রীক, অপুত্রক ইত্যাদি।
✔️বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদে ‘অক্ষি’ শব্দের স্থলে ‘অক্ষ’ এবং ‘নাভি’ শব্দ স্থলে ‘নাভ’ হয়।
যেমন :
- কমলের ন্যায় অক্ষি যার = কমলাক্ষ,
- পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ। এরূপ — ঊর্ণনাভ।
✔️বহুব্রীহি সমাসে প্রপদে ‘জায়া’ শব্দ স্থানে ‘জানি’ হয় এবং পূর্বপদের কিছু পরিবর্তন হয়।
যেমন :
- যুবতী জায়া যার = যুবজানি (যুবতী স্থলে ‘যুব’ এবং “জায়া’ স্থলে জানি হয়েছে)।
✔️বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘চূড়া’ শব্দ সমস্ত পদে ‘চূড়’ এবং “কর্ম’ শব্দ সমস্ত পদে কর্মা’ হয়।
যেমন :
- চন্দ্র চূড়া যার = চন্দ্রচূড়,
- বিচিত্র কর্ম যার = বিচিত্রকর্মা।
✔️বহুব্রীহি সমাসে ‘সমান’ শব্দের স্থানে ‘স’ এবং “সহ’ হয়।
যেমন :
- সমান কর্মী যে = সহকর্মী,
- সমান বর্ণ যার = সমবর্ণ
✔️বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘গন্ধ’ শব্দ স্থানে ‘গন্ধি’ বা ‘গন্ধা’ হয়।
যথা :
- সুগন্ধ যার = সুগন্ধি,
- পদ্মের ন্যায় গন্ধ যার = পদ্মগন্ধি,
- মৎস্যের ন্যায় গন্ধ যার = মৎস্যগন্ধা।
বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ
বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার :
- সমানাধিকরণ,
- ব্যাধিণ,
- ব্যতিহার,
- ন,
- মধ্যপদলােপী,
- প্রত্যয়ান্ত,
- অলুক ও
- সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি।
✔️সমানাধিকরণ বহুব্রীহি পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়।
যেমন :
- হত হয়েছে শ্রী যার = হতশ্রী,
- খােশ মেজাজ যার = খােশমেজাজ।
এরকম : হৃতসর্বব, উচ্চশির, পীতাম্বর, নীলকণ্ঠ, জবরদস্তি, সুশীল, সুশ্রী, বদবত, কমবখত ইত্যাদি।
✔️ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনােটিই যদি বিশেষণ না হয়, তবে তাকে বলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি।
যথা :
- আশীতে (দাঁতে) বিষ যার = আশীবিষ,
- কথা সর্ব যার = কথাসর্বস্ব। প
✔️রপদ কৃদন্ত বিশেষণ হলেও ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়।
যেমন :
- দুই কান কাটা যার = দু কানকাটা,
- বোটা খসেছে যার = বোঁটাখসা।
অনুরূপভাবে – ছাপােষা, পা-চাটা, পাতা-চাটা, পাতাহেঁড়া, ধামাধরা ইত্যাদি।
ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। এ সমাসে পূর্বপদে ‘আ’ এবং উত্তরপদে ‘ই’ যুক্ত হয়।
যথা :
- হাতে হাতে যে যুদ্ধ = হাতাহাতি,
- কানে কানে যে কথা = কানাকানি।
এমনি ভাবে -চুলাচুলি, কাড়াকাড়ি, গালাগালি, দেখাদেখি, কোলাকুলি, লাঠালাঠি, হাসাহাসি, গুঁতাগুঁতি, ঘুষাঘুষি ইত্যাদি।
ন বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে
বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ (না অর্থবােধক) অব্যয় যােগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ বহুব্রীহি বলে। নঞ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয়।
যেমন :
- ন (নাই) জ্ঞান যার = অজ্ঞান,
- বে (নাই) হেড যার = বেহেড,
- না (নাই) চারা (উপায়) যার = নাচার।
- নি (নাই) ভুল যার = নির্ভুল,
- না (নয়) জানা যা = নাজানা, অজানা ইত্যাদি। এরকম-নাহক, নিরুপায়, নিঝঞাট, অবুঝ, অকেজো, বে পরােয়া, বেহুঁশ, অনন্ত, বেতার ইত্যাদি।
মধ্যপদলােপী বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনাে অংশ যদি সমস্তপদে লােপ পায়, তবে তাকে মধ্যপদলােপী বহুব্রীহি বলে।
যেমন :
- বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর = বিড়ালচোখী,
- হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি।
এমনি ভাবে – গায়ে হলুদ, মেনিমুখাে ইত্যদি।
✔️প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি ।
যথা-
- এক দিকে চোখ (দৃষ্টি) যার = একচোখা (চোখ+আ),
- ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখাে (মুখ+ও),
- নিঃ (নেই) খরচ যার = নি-খরচে (খরচ+এ)।
এরকম -দোটানা, দোমনা, একগুঁয়ে, অকেজো, একঘরে, দোনলা, দোতলা, ঊনপাঁজুরে ইত্যাদি।
অলুক বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনাে পরিবর্তন হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে। অলুক বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষণ হয়।
যথা :
- মাথায় পাগড়ি যার = মাথায়পাগড়ি,
- গলায় গামছা যার= গলায়গামছা (লােকটি)।
এরূপ – হাতে-ছড়ি, কানে-কলম, গায়ে-পড়া, হাতে-বেড়ি, মাথায়-ছাতা, মুখে-ভাত, কানে-খাটো ইত্যাদি।
সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বােঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়। এ সমাসে সমস্তপদে ‘আ’, ‘ই’ বা ‘ঈ’ যুক্ত হয়।
যথা:
- দশ গজ পরিমাণ যার = দশগজি,
- চৌ (চার) চাল যে ঘরের = চৌচালা ।
এরূপ —চারহাতি, তেপায়া ইত্যাদি। কিন্তু, সে (তিন) তার (যে যন্ত্রের) = সেতার (বিশেষ্য)।
নিপাতনে সিদ্ধ (কোনাে নিয়মের অধীনে নয়) বহুব্রীহি
- দু দিকে অপ যার = দ্বীপ,
- অন্তর্গত অপ যার = অন্তরীপ,
- নরাকারের পশু যে = নরপশু,
- জীবিত থেকেও যে মৃত = জীবন্ত,
- পণ্ডিত হয়েও যে মূর্থ = পণ্ডিতমূৰ্থ ইত্যাদি।
দ্বিগু সমাস কাকে বলে?
দ্বিগু সমাস: সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। দ্বিগু সমাসে সমাসনিম্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয়।
যেমন :
- তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল,
- চৌরাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা,
- তিন মাথার সমাহার = তেমাথা,
- শত অব্দের সমাহার-শতাব্দী,
- পঞ্চবটের সমাহার। পঞ্চবটী,
- ত্রি (তিন) পদের সমাহার-ত্রিপদী ইত্যাদি।
এরূপ-অষ্টধাতু, চতুর্ভুজ, চতুরঙ্গ, ত্রিমােহিনী, তেরনদী, পঞ্চভূত, সাতসমুদ্র ইত্যাদি।
অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে?
অব্যয়ীভাব সমাস: পূর্বপদে অব্যয়যােগে নিম্পন্ন সমাসে যদি অব্যয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তবে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। অব্যয়ীভাব সমাসে কেবল অব্যয়ের অর্থযােগে ব্যাসবাক্যটি রচিত হয়।
যেমন :
- জানু পর্যন্ত লম্বিত (পর্যন্ত শব্দের অব্যয় ‘আ’) = আজানুলম্বিত (বায়ু),
- মরণ পর্যন্ত = আমরণ।।
- সামীপ্য (নৈকট্য),
- বিপাসা (পৌনঃপুনিকতা), পর্যন্ত, অভাব, অনতিক্রম্যতা, সাদৃশ্য, যােগ্যতা প্রভৃতি নানা অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়।
নিচের উদাহরণগুলােতে অব্যয়ীভাব সমাসের অব্যয় পদটি বন্ধনীর মধ্যে দেখানাে হলাে।
- সামীপ্য (উপ) : কণ্ঠের সমীপে = উপকণ্ঠ, কূলের সমীপে = উপকূল।
- বিপসা (অনু, প্রতি): দিন দিন = প্রতি দিন, ক্ষণে ক্ষণে = প্রতিক্ষণে, ক্ষণ ক্ষণ = অনুক্ষণ।
- অভাব (নিঃ = নির) : আমিষের অভাব = নিরামিষ, ভাবনার অভাব = নির্ভাবনা, জলের অভাব=নির্জল, উৎসাহের অভাব = নিরুৎসাহ।
- পর্যন্ত (আ)। : সমুদ্র থেকে হিমাচল পর্যন্ত = আসমুদ্রহিমাচল, পা থেকে মাথা পর্যন্ত = আপাদমস্তক।
- সাদৃশ্য (উপ) : শহরের সদৃশ = উপশহর, গ্রহের তুল্য = উপগ্রহ, বনের সদৃশ = উপবন।
- অনতিক্রম্যতা (যথা) : রীতিকে অতিক্রম না করে = যথারীতি, সাধ্যকে অতিক্রম না করে = যথাসাধ্য। এরূপ-যথাবিধি, যথাযােগ্য ইত্যাদি।
- অতিক্রান্ত (উৎ) : বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল, শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত = উচ্ছল
- বিরােধ (প্রতি) : বিরুদ্ধ বাদ = প্রতিবাদ, বিরুদ্ধ কূল = প্রতিকূল।
- পশ্চাৎ (অনু): পশ্চাৎ গমন = অনুগমন, পশ্চাৎ ধাবন = অনুধাবন।
- ঈষৎ (আ) : ঈষৎ নত = আনত, ঈষৎ রক্তিম = আরক্তিম।
- ক্ষুদ্র অর্থে (উপ) : উপগ্রহ, উপনদী।
- পূর্ণ বা সমগ্র অর্থে : পরিপূর্ণ, সম্পূর্ণ।
- দূরবর্তী অর্থে (প্র, পর) : অক্ষির অগােচরে = পরােক্ষ। এরূপ —প্রপিতামহ।
- প্রতিনিধি অর্থে (প্রতি) : প্রতিচ্ছায়া, প্রতিচ্ছবি, প্রতিবিম্ব।
- প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থে (প্রতি) : প্রতিপক্ষ, প্রত্যুত্তর।
উল্লিখিত প্রধান ছয়টি সমাস ছাড়াও কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। প্রাদি, নিত্য, উপপদ ও অলুক সমাস সম্বন্ধে নিচে সংক্ষেপে আলােচনা করা হলাে। এসব সমাসের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায় না।
এজন্য এগুলােকে অপ্রধান মনে করা হয়।
প্রাদি সমাস ককে বলে?
প্রাদি সমাস : প্র, প্রতি, অনু প্রভৃতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয়, তবে তাকে বলে প্রাদি সমাস।
যথা :
- প্র (প্রকৃষ্ট ) যে বচন = প্রবচন।
- এরূপ পরি (চতুর্দিকে) যে ভ্রমণ = পরিভ্রমণ,
- অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ =অনুতাপ,
- প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) ভাত (আলােকিত) = প্রভাত,
- প্র (প্রকৃষ্টরূপে) গতি = প্রগতি ইত্যাদি।
নিত্যসমাস কাকে বলে?
নিত্যসমাস : যে সমাসে সমস্যমান পদগুলাে নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে, ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্যসমাস বলে। তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যােগে এগুলাের অর্থ বিশদ করতে হয়।
যেমন :
- অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর,
- কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র,
- অন্য গৃহ = গৃহান্তর,
- (বিষাক্ত) কাল (যম) তুল্য (কাল বর্ণের নয়) সাপ = কালসাপ,
- তুমি আমি ও সে = আমরা,
- দুই এবং নব্বই = বিরানব্বই।