তথ্য প্রযুক্তি

ন্যানো টেকনোলজি কাকে বলে ও ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার

ন্যানো টেকনোলজি (Nanotechnology) কাকে বলে?

ন্যানো টেকনোলজি শব্দটি মুলত ন্যানো থেকে এসেছে। ন্যানো হল একটি পরিমাপের একক। ন্যানো বলতে আমরা বুঝি খুবই ক্ষুদ্র বস্তু। এক মিটারের ১,০০০,০০০,০০০ (১০০ কোটি) ভাগের এক ভাগ মানে ১০-৯ মিটারকে এক ন্যানো মিটার বলে। এই ন্যানোমিটার স্কেলে পরিবর্তন, ধ্বংস, সৃষ্টি সম্পর্কিত প্রযুক্তিকে বলে ন্যানোটেকনোলজি। ন্যানো শব্দটি গ্রিক nanos শব্দ হতে এসেছে।

ন্যানাে মিটার প্রযুক্তি কি?

ন্যানােমিটার হলাে পরিমাপের একক। ১ ন্যানােমিটার =১০ মিটার যা মানুষের চুলের ব্যাসের ৮০,০০০ ভাগের একভাগ। ন্যানােমিটার স্কেলে যে সমস্ত টেকনােলজিগুলাে সম্পর্কিত সেগুলাে হলাে ন্যানােপ্রযুক্তি। ন্যানােপ্রযুক্তি (ন্যানােটেকনােলজি বা সংক্ষেপে ন্যানােটেক) পদার্থকে আণবিক পর্যায়ে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করার বিদ্যা।

সুতরাং ন্যানােটেকনােলজি হলাে এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে ন্যানােমিটার স্কেলে একটি বস্তুকে নিপুণভাবে ব্যবহার করা যায় অর্থাৎ এর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, ধ্বংস বা সৃষ্টি করা যায়। সাধারণত ন্যানােপ্রযুক্তি এমন সব কাঠামাে নিয়ে কাজ করে যা অন্তত একটি মাত্রায় ১০০ ন্যানােমিটার থেকে ছােট।

ন্যানােপ্রযুক্তি বহুমাত্রিক, এর সীমানা প্রচলিত সেমিকন্ডাকটর পদার্থবিদ্যা থেকে অত্যাধুনিক আণবিক স্বয়ং-সংশ্লেষণ প্রযুক্তি পর্যন্ত; আণবিক কাঠামাের নিয়ন্ত্রণ থেকে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ন্যানােপদার্থের উদ্ভাবন পর্যন্ত বিস্তৃত।

 

রিচার্ড ফাইনম্যানকে ন্যানােপ্রযুক্তির জনক বলা হয়১৯৫৯ সালের ২৯ জানুয়ারি রিচার্ড ফাইনম্যান সর্বপ্রথম ন্যানােপ্রযুক্তির ধারণা দেয়। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের ৯ | তারিখ ন্যানােটেকনােলজির জন্য একটা অন্যতম স্মরণীয় দিন হিসেবে বিবেচিত হবে। সেদিনই প্রথম অণুকে ইচ্ছেমতাে সাজিয়ে পছন্দমতাে কিছু তৈরি করা সম্ভব হয় মানুষের পক্ষে।

See also  প্রোগ্রাম ডিজাইন মডেল সম্পর্কে বিস্তারিত

 

ন্যানােটেকনােলজি
                 চিত্র: ন্যানো টেবিল

 

ন্যানো টেকনোলজির ক্ষেত্রে দুটি প্রক্রিয়া আছে। একটি হলাে উপর থেকে নিচে (Top-down) ও অপরটি হলাে নিচ থেকে উপর (Bottom-up)। টপ-ডাউন পদ্ধতিতে কোনাে জিনিসকে কেটে ছােট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্র সাধারণত Etching প্রক্রিয়াটি সম্পর্কিত। আর বটম-আপ হলাে ক্ষুদ্র।

ক্ষুদ্র আকারের ছােট জিনিস দিয়ে বড় কোনাে জিনিস তৈরি করা। আমাদের বর্তমান ইলেকট্রনিক্স হলাে, টপ-ডাউন প্রযুক্তি। আর application ন্যানােটেকনােলজি হলাে, বটম-আপ প্রযুক্তি। ন্যানােটেকনােলজিতে ন্যানােমিটার স্কেলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তুর উপাদান দিয়ে তৈরি করা হবে বিভিন্ন প্রয়ােজনীয় বস্তু।

Nanotechnology হার্ডডিস্কের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। এই হার্ডডিস্কেও ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানােটেকনােলজি। এখন বাজারে ১ টেরাবাইটের হার্ডডিস্ক পাওয়া যাচ্ছে। অথচ এই ব্যাপারটা আজ হতে ১০ বছর আগেও ছিল কল্পনার বাইরে।

ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার

  • কম্পিউটিং-এর ক্ষেত্রে: প্রসেসর উন্নয়নে তথা এর উচ্চ গতি, দীর্ঘ স্থায়িত্ব, কম শক্তি খরচ কম্পিউটারের মেমােরি, গতি দক্ষতা ইত্যাদি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়।

 

  • খাদ্য শিল্প: খাদ্যজাত দ্রব্যের প্যাকেজিং তৈরিতে, খাদ্যে ভিন্নধর্মী স্বাদ তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ন্যানােম্যাটেরিয়াল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
See also  প্রোগ্রাম ডিজাইন মডেল সম্পর্কে বিস্তারিত

 

  • চিকিৎসা: বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট ড্রাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে যা সেবনে রােগীরা দ্রুত আরােগ্য লাভ করবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংশ করা যাবে। এই প্রযুক্তির ফলে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষে আরাে সুক্ষভাবে ওষুধ পৌঁছে যাবে। এইজন্য ব্যবহৃত হবে কার্বন ন্যানােটিউব দ্বারা তৈরি ন্যানাে সুঁচ। এই সুচের একপাশে থাকবে বিশেষ ধরণের প্রতিপ্রভ পদার্থ যার আলােক এর সাহায্যে নির্দিষ্ট রােগাক্রান্ত কোষ নিশ্চিত করা যাবে। ফলে নির্দিষ্ট কোষে ওষুধ দেয়া হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা যাবে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরি করার গবেষণা চলছে।

 

  • যােগাযােগের ক্ষেত্রে: হালকা ওজনের ও জ্বালানি সাশ্রয়ী বাহন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

 

  • জ্বালানি ক্ষেত্রে: সস্তা ও উন্নত মানের সােলার এনার্জি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

 

  • রাসায়নিক শিল্পে: ইস্পাতের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী মেটাল তৈরি, টিটানিয়াম ডাই অক্সাইড তৈরির কাজে, বিভিন্ন বস্তুর ওপর প্রলেপ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।

 

  • ইলেকট্রনিক্স শিল্পে: নূন্যতম বিদ্যুৎ খরচ, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির ওজন ও আকৃতি কমিয়ে এবং কার্যক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। ন্যানাে প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি ব্যাটারি, ফুয়েল সেল, সােলার সেল ইত্যাদির মাধ্যমে সৌরশক্তিকে অধিকতর কাজে লাগানাে যাবে। তাছাড়া ন্যানাে ট্রানজিস্টর, ন্যানাে ডায়ােড, প্লাজমা ডিসপ্লে ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক্স জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছে এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিকশিত হচ্ছে।
See also  প্রোগ্রাম ডিজাইন মডেল সম্পর্কে বিস্তারিত

 

  • খেলাধুলা ও ক্রিয়া সরঞ্জাম তৈরিতে: ক্রিকেট ও টেনিস বলের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধির জন্য, বাতাসে গলফ বলের পজিশন ঠিক রাখার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

 

ন্যানােটেকনােলজি

 

ন্যানো টেকনোলজি এর সুবিধা

  • ন্যানােটেকনােলজির ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্য মজবুত, বেশি টেকসই, আকারে ছােট ও হালকা হয়।

 

ন্যানো টেকনোলজি এর অসুবিধা

  • ন্যানােটেকনােলজির গবেষণা ও প্রয়ােগ অনেক ব্যয়বহুল। ফলে এই প্রযুক্তির প্রয়ােগে উৎপাদিত পণ্য এখনও অধিক দামী।

 

  • ন্যানােটেকনােলজি পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হলে আনবিক শক্তি সহজলভ্য হয়ে যেতে পারে যা মানবজাতির জন্য বিপদজনক। ন্যানােপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মারাত্মক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা সম্ভব বিধায় যুদ্ধক্ষেত্রে ভয়াবহতার আশংকা রয়েছে।

 

  • ন্যানােপার্টিক্যাল অর্থাৎ ন্যানােপ্রডাক্ট মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পানি ও বায়ু দূষণ হতে পারে যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

 

  • এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অদক্ষরা কর্মহীন হয়ে যাবে।

 

বিভিন্ন ধরনের ন্যানোবস্তু

  • কার্বন ন্যানোটিউব।
  • ফুলেরেন্সেস এবং ব্যাকিবল
  • সিল্ভার ন্যানোপারটিকেলস
  • সিল্ভার ন্যানোওয়্যার
  • কোয়ান্টাম ডটস এবং ন্যানোক্রিস্টাল
  • টাইটানিয়াম ডাইওক্সাইড ন্যানোপারটিকেলস

 

তবে ন্যানোটেকনোলজির অতিরিক্ত ব্যবহারে শারীরিক ক্ষতির আশংকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারন অতি ক্ষুদ্র বস্তু নিয়ে কাজ করার ফলে সেগুলো শরীরের ভিতরে সহজেই ঢুকে যেতে পারে এবং অনেক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তবে সতর্কতার মাধ্যমে কাজ করলে এসব এড়ানো সম্ভব। ন্যানোটেকনোলজি ভবিষ্যতে অনেক ব্যাপকভাবে ব্যবহার হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কারন এতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে মানবজাতির উন্নয়নের।

Back to top button