হলোগ্রাফি কাকে বলে, কিভাবে কাজ করে ও এর ব্যবহার
হলোগ্রাফি কি, হলোগ্রাফি কিভাবে কাজ করে ও হলোগ্রাফির ব্যবহার
লেজারের বিস্ময়কর ও উত্তেজনাপূর্ণ প্রয়োগের মধ্যে হলোগ্রাফি অন্যতম । হলোগ্রাফি হল ফটো তোলার নতুন প্রযুক্তি । এই পদ্ধতিতে ছবি তোলাকে বলা হয় হলোগ্রাম । ইংরেজি ‘Holography’ শব্দটির অর্থ হল সম্পূর্ণ ছবি বা পূর্ণাঙ্গ ছবি । হলোগ্রাম হল ত্রিমাত্রিক ছবি । সাধারণ কামেরায় আমরা যে ছবি তুলি তা হল দ্বিমাত্রিক । সাধারণ ছবির দুটি মাত্রা থাকে । এ দুটি মাত্রা হল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ । হলোগ্রাফী টেকনিকে তোলা ছবি হলোগ্রামের বস্তুর ত্রিমাত্রিক প্রতিবিম্ব প্রদান করে এবং বস্তুর ছবিটি দেখতে অবিকল ত্রিমাত্রিক কঠিন বস্তুর মত মনে হয় ।
স্পর্শ না করে বুঝার উপায় নাই , এটি ছবি নাকি বস্তুটি নিজেই । হলগ্রামে মুলবস্তুর রং পাওয়া যায় না । যে লেজার দিয়ে হ লো গ্রাম তৈরি করা হয় তার রঙ্গের উপর হলগ্রামের রং নির্ভর করে । বিভিন্ন রঙ্গের লেজার ব্যাবহার করে বিচিত্র রঙ্গের হলোগ্রাম তৈরি করা যায় । এরকম এক ধরনের নাম রংধনু হলোগ্রাম । রংধনুর সব কয়টি রং এই হলগ্রামে থাকে ।
ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী ডেনিশ গ্যাবর প্রথম হলোগ্রাম তৈরি করেন ১৯৪৭ সালে। তবে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে পুরোপুরি ত্রিমাত্রিক রূপ দেওয়া যায়নি তাঁর বানানো হলোগ্রামে। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে আবিষ্কার করা হয় লেজার প্রযুক্তি যা হলোগ্রাফির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হলোগ্রাফির মূল তত্ত্ব আবিষ্কারের কারণে ১৯৭১ সালে গ্যাবরকে নোবেল পুরষ্কার প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীদের হাত ধরে এই প্রযুক্তি পূর্ণতা পায়।
হলোগ্রাফি কাকে বলে?
হলোগ্রাফি হচ্ছে এমন এক ধরণের ফটোগ্রাফিক প্রযুক্তি যা কোন বস্তুর ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ প্রযুক্তিতে তৈরি করা ত্রিমাত্রিক ছবি ‘হলোগ্রাম’ নামে পরিচিত। মূলত এই ধরণের ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করার জন্য লেজার, ইন্টারফারেন্স ডিফ্রাকশন, লাইট ইনটেনসিটি রেকর্ডিং এবং ইলিউমিনেশন অফ দ্য রেকর্ডিং- এই চারটি প্রযুক্তির একটি কার্যকরী সমন্বয় ঘটানো হয়।
হলোগ্রাফি এবং ফটোগ্রাফির মধ্যে মূল পার্থক্য হল ফটোগ্রাফি দ্বিমাত্রিক এবং হলোগ্রাফি ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির। দ্বিমাত্রিক ছবিতে মাত্র একটি পয়েন্ট অফ ভিউ থাকে। আমাদের চোখে কোন বস্তুর গভীরতা নির্ণয়ে দুইটি পয়েন্ট অফ ভিউ দরকার হয়, যা থাকে হলোগ্রাফি প্রযুক্তির ছবি হলোগ্রামে।
হলোগ্রাফি কিভাবে কাজ করে ?
হলোগ্রাম তৈরির জন্য প্রথমেই দরকার হবে একটি বস্তু যার হলোগ্রাম বানানো হবে। এরপর একটি লেজার বীমের মাধ্যমে বস্তুটি এবং এর মাধ্যমের উপর লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করা হয়। আর সবকিছু ঠিকঠাকমতো ধারন করতে দরকার হয় একটি রেকর্ডিং মিডিয়ার। রেকর্ডিং মিডিয়া একই সাথে ছবিটি আরও স্পষ্ট করে তোলে। প্রথমেই লেজার একটি লেজার বীমকে দুইটি লেজার বীমে রূপান্তর করা হয় এবং একটি আয়নার মাধ্যমে চালিত করা হয়। এর মধ্যে একটি বীম লক্ষ্যবস্তুর গায়ে নিক্ষেপ করা হয়।
আর দ্বিতীয় বীমটি নিক্ষেপ করা হয় রেকর্ডিং মিডিয়ামের উপর। এর মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর একটি ক্লিয়ার ছবি ধারন করা হয়। দুইটি লেজার বীম পরবর্তীতে পুনরায় একে অপরের সাথে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। এর এমনভাবে তারা বাঁধাপ্রাপ্ত হয় যেন সেটি আমাদের সামনে লক্ষ্যবস্তুর একটি ত্রিমাত্রিক ছবি তুলে ধরে। এভাবেই একটি ৩ ডি / ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাম তৈরি করা হয়।
বর্তমানে মুভি এবং গেইমে ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাফির ব্যবহার দেখা যায়।
হলোগ্রাফির ব্যবহার
১। কল -কারখানায় কোনো যন্ত্রপাতির কতটুকু টান পরেছে বা কতটুকু পীড়ন হচ্ছে তা সনাক্ত করা এবং কোন বস্তুর কম্পন পরিমাপে হলোগ্রাফী ব্যাবহার করা হয় ।
২। কোনো যন্ত্র সঠিক ভাবে কাজ করেছে কিনা বা কাজের সময় কোনো যন্ত্রাংশের কোনো ত্রুটি – বিচ্যুতি ঘটছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্যও হলোগ্রাফী ব্যাবহার করা হয় ।
৩। কোনো জটিল জিনিষের গঠন যেমন কোন সেতু বা উড়োজাহাজের পাখায় অত ধিক টান চাপ বা পীড়নের কি ধরনের প্রভাব পড়ছে তা জানার জন্যও হলোগ্রাফি ব্যাবহার করা হচ্ছে ।
৪। ব্যক্তিগত তথ্য , মেডিকেল রেকর্ড বা অর্থ বিষয়ক তথ্য যে কোন গোপন তথ্যই হোক না কেন হলোগ্রামের সাহায্যে তাকে নিরাপদে সঞ্চয় করে রাখা যেতে পারে ।
৫। কিছু কিছু বস্তুর আকৃতির বা অবস্থানের অতিক্ষুদ্র বা সামান্য পরিবর্তন পরিমাপের কাজেও হলোগ্রাম ব্যাবহার করা হয় । প্রথমে অতি সঠিকতার সাথে হলোগ্রামে বস্তুর সকল বিন্দুর অবস্থান রেকর্ড করা হয় ।কিছুদিন পর বা কোন কাজের পর বস্তুটির সকল বিন্দুর অবস্থান পুনরায় হলোগ্রামে রেকর্ড করা হয় । দুটি হলোগ্রামের ব্যতিচার প্যাটাণকে উপরিপাতিত করে বস্তুর আকৃতির বা অবস্থানের ক্ষুদ্র পরিবর্তন সনাক্ত করা হয় ।
৬। হলোগ্রাফিক প্রতিবিম্বকে এতই নিখুঁত ও যথার্থ করা যায় যে , লেজার প্রদর্শনীতে সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এদের ব্যাবহার করা হয় ।
৮। বর্তমানে মুভি এবং গেইমে ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাফির ব্যবহার দেখা যায়।
হলোগ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য গুণ হল এর যেকোনো অংশবিশেষ সম্পূর্ণ দৃশ্য ধারন করে , এতে দৃশ্যটি সমগ্র হলোগ্রাম জুড়ে সুষমভাবে বিস্তৃত থাকে । ফলে হলোগ্রামকে টুকরো টুকরো করে কেটেও যেকোনো একটি টুকরো থেকে হলোগ্রামটি পুননিরমান করা যেতে পারে ।